নাজমুল হাসান অন্তর: টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনায় “বায়োচার” এক সম্ভাবনার নাম। “বায়োচার” এক ধরনের চারকোল বা কয়লা যা পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে সীমিত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা সম্পূর্ন অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন জৈব পদার্থ যেমন কাঠ, লতাপাতা, কাঠের গুড়া, ময়লা-আবর্জনা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয়। পাইরোলাইসিস প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে তাপ দেয়ার সময় সরল লম্বা চেইন বিশিষ্ট জৈব পদার্থ থেকে এরোমেটিক কার্বন বিশিষ্ট জৈব পদার্থে রুপান্তরিত হয়।
বায়োচারের বহিঃপৃষ্ঠ বিভিন্ন চার্জের সমন্বয়ে গঠিত এবং অধিক পৃষ্ঠতল বিশিষ্ট। যার দরুন মাটিতে এটি বিভিন্ন ধরনের আয়নিক চার্জ বিশিষ্ট যৌগ ধরে রাখতে পারে যা আমাদের কৃষি জমিতে ফসলের বিভিন্ন খাদ্য উপাদান ধরে রাখতে সাহায্য করে। বায়োচার ব্যবহারের ফলে মাটিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার দরকার হয় না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য মাটিতে বায়োচার ব্যবহার করছে। বায়োচার মাটিতে প্রায় ১০০ বছর স্থায়ী থাকে। বায়োচার ব্যবহারের ফলে মাটির জৈব উপাদান অনেক বছর স্থায়ী থাকে যার ফলে মাটির পুষ্টি উপাদান দীর্ঘদিন সংরক্ষিত থাকবে। বায়োচার মাটির পানি ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, মাটির পুষ্টি ক্ষয় রোধে ভূমিকা রাখে। বায়োচার উৎপাদনের সময় উৎপাদিত তাপ শক্তি দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এছারাও এই তাপ দিয়ে রান্না ছাড়াও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও চলছে এর গবেষণা। ২০১৪ সনে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীম মিয়া প্রথম বায়োচার চুল্লীর উদ্ভাবন করেন।
ধারনা করা যায়, বায়োচার ব্যবহার কৃষকদের মধ্যে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকদের ফসল উৎপাদন খরচ কমবে সাথে রাসয়নিক সার মুক্ত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে যা টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনায় অনবদ্য ভূমিকা রাখবে।
লেখক: এম এস ছাত্র, কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।