ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): রবিবার (২৯ জুলাই) বিশ্ব বাঘ দিবস। বিশ্বব্যাপী রয়েল বেঙ্গল টাইগার খ্যাত বাংলাদেশের সুন্দরবনের বাঘ। আর এই বাঘের অস্তিত্ব রক্ষায় সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ফলে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এমনটি জানালেন বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে খুলনায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঘ দিবসের আলোচনায় বক্তারা। দিবসটি উপলক্ষে রবিবার (২৯ জুলাই) সকালে খুলনা বন অধিদপ্তর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বাঘের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেষ্টুন নিয়ে র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সকাল ১০টায় শহীদ হাদিস পার্ক হতে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালি শেষে খুলনা অফিসার্স ক্লাবে বিশ্ব বাঘ দিবসের মূল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব বাঘ দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘‘বাঘ বাচাই, বাচাই বন রক্ষা করি সুন্দরবন’’। এ সময় অতিথিরা টাইগার এ্যাকশন প্লান্ট এর শুভ উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। গেস্ট অব অনার ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী। এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন, খুলনার জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. সরদার রকিবুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. এম এ আজিজ, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ফারুখ আহম্মেদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ সফিউল আলম চৌধুরী, বাংলাদেশের একমাত্র সুন্দরবন বাঘের আবাসস্থল হওয়ায় বাঘ সংরক্ষণ, বাঘ শিকার ও পাচার বন্ধ, বাঘের খাদ্য সুন্দরবনের হরিণ রক্ষাসহ সন্নিহিত লোকালয়ের অধিবাসীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে এ দিবস পালনের গুরুত্ব অপরিসীম বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ সমৃদ্ধ ১৩টি দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের সম্মেলনে বাঘ সংরক্ষণকে বেগবান করার জন্য এক ঘোষণা পত্র তৈরি হয়। সেই ঘোষনা পত্রের আলোকে প্রতিবছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হচ্ছে। বাঘ রয়েছে বিশ্বের এমন ১৩টি দেশ হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম ও রাশিয়া।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. এম এ আজিজ এক প্রতিবেদনে জানান, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করায় সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করেছে বনবিভাগ। সচেতনতা সৃষ্টির কারণে গত দুই বছরে লোকালয় ঢুকলেও জনতা বাঘ হত্যা করেনি। তবে ‘‘বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের ঘনত্ব’’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা এখন মাত্র ১০৬টি। এর আগে ২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির সহায়তায় বনবিভাগ বাঘের পায়ের ছাপ গুণে জরিপ করে বলেছিলো, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৪৪০টি। ২০১৩ সালে ‘ক্যামেরা ট্যাপিং’ পদ্ধতিতে সুন্দরবনে বাঘ গণনা শুরুর পর ওই জরিপ কিছুটা ত্রুটিপূর্ণ ছিল বলে প্রশ্ন ওঠে। বাঘ শুমারির চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ মিলে ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের সুন্দরবনে মোট বাঘের সংখ্যা ১৭০টি।
সুন্দরবন সুরক্ষায় খুলনার জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান বলেন, বাঘ সুন্দরবনের প্রাকৃতিক রক্ষক। বাঘ কমলে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্যের উপর হুমকি বাড়বে। তাই শুধু বাঘ নয়, বিশ্ব ঐতিহ্য ও সুন্দরবনকে এবং বনের সকল জৈববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। পাশাপাশি সুন্দরবন সংলগ্ন জনপদের মানুষকে বন সুরক্ষায় আরো বেশি সচেতন এবং উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
সুন্দরবনের বন সংরক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সর্বশেষ গত ২০১৪ সালের পরিসংখ্যানে বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি। তাছাড়া বনবিভাগসহ প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে গত দুই বছরে কোন বাঘ হত্যা বা শিকারের অঘটন ঘটেনি। সুন্দরবনে টহলকালে বাঘ ও বাঘের বাচ্চা ঘোরা ফেরা করতে দেখা যায়। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, বাঘের সংখ্যা বাড়ছে।