১৫পাটের বস্তায় পোল্ট্রি ও ফিস ফিড মোড়কীকরণে সম্প্রতি বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে সরকার। আর এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন উৎপাদনকারিদের সংগঠন ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব)। প্রস্তুতকারকরা বলছেন, পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের আইন নেই। কারণ পাটের বস্তায় ফিডের মান রক্ষা করা সম্ভব হয় না, স্বল্পতম সময়ে পঁচন ধরে, ফলে তা মাছ ও মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়ে। তাই এ সিদ্ধান্তকে বাস্তবতার নিরিখে মূল্যায়ন করে আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
ফিআব সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, এভাবে মোড়কীকরণ করলে সর্বোচ্চ ১০ দিন পর্যন্ত ফিড সংরক্ষণ করা সম্ভব। আমাদের দেশে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি, বর্ষার সময় তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। বাতাসের সংস্পর্শে এলে ফিডে ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে এবং ফিড বিষাক্ত হয়ে পড়ে। এই বিষাক্ত ফিড কোনভাবেই মাছ কিংবা মুরগিকে খাওয়ানো সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের মান উন্নয়নের মাধ্যমে বেসরকারি উদ্যোক্তারা যখন রপ্তানীর কথা ভাবছেন তখন সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত এ শিল্পের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করবে। এ সিদ্ধান্তের কারণে পোল্ট্রি সেক্টরে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে এবং ডিম ও মুরগির মাংসের যোগানে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেবে।
ফিআব সাধারন সম্পাদক আহসানুজ্জামান বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণে সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। ফিড প্রস্তুতকারকগণ অনেক আগে থেকেই সরকারের এ নীতি অনুসরণ করে আসছেন। ফিডের মোড়কে আমরা যে পিপি ওভেন ব্যাগ ব্যবহার করি তা পঁচনশীল।
তিনি বলেন, ৫০ কেজি ধারণ ক্ষমতার একটি পিপি ওভেন বস্তার দাম পড়ে মাত্র ২০ টাকা। সেখানে একটি পাটের বস্তার দাম প্রায় ৭০-৮০ টাকা। অর্থাৎ শুধুমাত্র পাটের বস্তার কারণেই প্রতি ব্যাগ ফিডের দাম ৬০ টাকা বেড়ে যাবে! অর্থাৎ প্রতি কেজি ফিডের উৎপাদন খরচ বাড়বে ১.৬০ টাকা। এতে সাধারণ তৃণমূল খামারিরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন ভোক্তা সাধারণ। কারণ পোল্ট্রি বা ফিস ফিডের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে খুব স্বাভাবিক কারণেই এর প্রভাব গিয়ে পড়বে ডিম ও মুরগির মাংসের দামের ওপর- যা সাধারণ ক্রেতাদের বিড়ম্বনায় ফেলবে।
গ্রামের সাধারণ ও স্বল্প শিক্ষিত খামারিরা পিপি ওভেন ব্যাগেই ফিড ক্রয় ও সংরক্ষণে অভ্যস্ত। পিপি ওভেন ব্যাগের মত করে চটের ব্যাগে ফিড স্তুপ করে রাখলে তা ড্যাম্প হয়ে যাবে। এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা অনেক খামারির পক্ষেই সম্ভব হবেনা।
ফিড প্রস্তুতকারকগণ বলছেন, তাঁরা এ সম্পর্কে সংবাদপত্রের রিপোর্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন চলতি মাসের ১২ তারিখে, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে ৬ আগস্ট। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৬ আগস্ট থেকেই নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। তাঁরা বলছেন, পূর্বাপর না ভেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে দেশীয় শিল্প পথে বসবে। যেখানে পাটের বস্তার ব্যবহার বাস্তবসম্মত নয় সেখানেও যদি জোর করে তা বাধ্যতামূলক করা হয় তবে তা হবে অত্যন্ত দু:খজনক।
তাঁরা আরো বলছেন, শুধুমাত্র ফিড ইন্ডাষ্ট্রিতেই মাসে অন্তত: দেড় কোটি বস্তার প্রয়োজন। নির্ধারিত সময়ে এ পরিমাণ বস্তা সরবরাহ করা একেবারেই অসম্ভব। বস্তার অভাবে যদি ফিড সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় তবে খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, প্রচুর মানুষ বেকার হয়ে যাবে, বাজারে ডিম ও মুরগির মাংসের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেবে। কাজেই শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে এবং প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করতে হলে সরকারকে সিদ্ধান্ত পুণর্বিবেচনা করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোল্ট্রি শিল্পের ওপর একের পর এক নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা ও চাপ বাড়ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে কর অব্যাহতি সুবিধা তুলে নেয়া শুরু হয়। পরের বছরগুলোতে করের পরিধি ক্রমেই বাড়ানো হয়েছে। চলতি মাসেই বিএসটিআই এর সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সে সিদ্ধান্তের জটিলতা এবং অর্থনৈতিক চাপ বিশ্লেষণ করে পরিস্থিতি বুঝে ওঠার আগেই নতুন আরেক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কোন রকম আলোচনা ছাড়াই পাটের বস্তা বাধ্যতামূলক করা হলো।
ফিআব এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা গত ১৩ আগস্ট বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, এম.পি বরাবরে একটি পত্র প্রেরণ করেছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। তাঁরা আশা করছেন সরকার এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পোল্ট্রি শিল্পের অগ্রযাত্রায় সহায়ক ভ‚মিকা পালন করবেন।