মাহফুজুর রহমান (চাঁদপুর): পবিত্র ঈদুল আজহা দ্বারপ্রান্তে। সারা দেশে জমে উঠছে কোরবানির পশুর হাট। হাটগুলোতে পশুর আমদানি বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে ক্রেতাদের উপস্থিতি ও বিক্রি। তবে কোরবানির দু’এক দিন আগে বেচাবিক্রি আরো বাড়বে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় পশুর হাটগুলো (ছেংগারচর বাজার, সটাকি বাজার, কালীবাজার, গজরা বাজার, বেলতলী বাজার, মোহনপুর বাজার সহ প্রায় সকল এলাকায় স্থানীয় পশুর হাটে কোরবানির গরু বেচাবিক্রি জমে উঠেছে)। এবারে, ভারতীয় পশুর প্রভাব তেমন একটা নেই বললেই চলে। একইরকম চিত্র দেখা গেছে উপজেলার প্রায় সকল পশুর হাটগুলোতেই।
ঐতিহ্যবাহী ছেংগারচর পশুরহাটেও জমে উঠেছে কোরবানির পশু বেচাবিক্রির আমেজ। এবার খামারির উন্নত জাতের গরুর চেয়ে দেশি জাতের গরুর কদরই বেশি বলে জানা যায় হাটসূত্রে। হাটটিতে এবারে সর্বোচ্চ পশুর দাম ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭০-৮০ হাজার টাকার মত।
হাট পরিচালনাকারীরা জানান, ভারতীয় গরুর প্রভাব না থাকায় হাটগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ পশুর দখলেই রয়েছে। তবে স্থানীয় পাইকারদের কারণে হাটে গ্রাম্য খামারে পারিবারিকভাবে পালন করা পশুর সংখ্যা বেড়েছে।
এদিকে ক্রেতাদের দাবি, হাটগুলোতে গরুর আমদানি বাড়লেও কমেনি দর। আর তারমধ্যে দেশি প্রজাতির গরুর দাম অনেকটাই বেশি। দেশি গরুর দাম ছাড়তে রাজি নন বিক্রেতারা।
আবার হাট ছাড়াও দেশি প্রজাতির গরু গ্রামের গৃহস্থের বাড়ি থেকেও সরাসরি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। এক্ষেত্রে ক্রেতারা ভালোমানের পশুর জন্য গ্রামীণ পথঘাটও চষে বেড়াচ্ছেন।
মতলব দক্ষিন থেকে ঐতিহ্যবাহী ছেংগারচর বাজারে আসা মিন্টু মিয়া নামে একজন ক্রেতা জানান, বাজেট অনুযায়ী যে চিন্তা-ভাবনা থেকে পশু কিনতে এসেছেন, তা দিয়ে আশানুরূপ পাচ্ছেন না। হয় বাজেট বাড়াতে হবে, নয়তো পশুর আকার ছোট হয়ে যাবে। কৃত্রিমভাবে মোটাতাজাকরণ ছাড়া সুস্থ গরুই কিনতে চাচ্ছি।
আফজাল হোসেন নামে অপর ক্রেতা জানান, জোড়খালির এক চাষির বাড়িতে পালিত একটি দেশি জাতের গরু কিনে রেখেছেন। যা কোরবানির আগের দিন বাড়িতে নিয়ে আসবেন। হাটে এসেছেন প্রতিবেশীর সঙ্গে তাদের গরু দেখতে। তবে মনে হচ্ছে গ্রামের বাড়ি থেকে কেনা গরুর থেকে হাটের গরুর দাম অনেকটাই বেশি। তবে হাটে ভালো গরু রয়েছে।
গরু ব্যবসায়ী ইয়াসীন খাঁন বলেন, কিছু হাটে গৃহস্থের গরু-ছাগলগুলো উঠেছে, আবার কিছু হাটে খামারির গরু। তবে চাঁদপুরের সব হাটেই গরুর আমদানি বেশ ভালো। ভারতের গরু না আসায় এখন দেশি গরুর চাহিদও যেমন বেশি, তেমন পালনকারীরা দামও ভালো পাচ্ছেন।
আব্দুর রহমান মুন্না নামের অপর ব্যবসায়ী বলেন, গতবছরের থেকে গরুর দাম কিছুটা বেশি। এবারে ১০০ ভাগের ৮০ ভাগই দেশি গরু। যা অন্যান্য বছরের তুলনামূলকভাবে বেশি। এতে করে দেশি ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখছে। এছাড়া পশুর খাবারের দাম বাড়ায় গরুর দামও বেড়েছে। পাইকারদেরও বেশি দামে গরু কিনতে হয়েছে। তাছাড়া যোগাযোগসহ সব খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পশুর দামও বেড়ে যাচ্ছে, তবে তা নিয়ন্ত্রণের বাইর নয়।
ছেংগারচর পশুর হাট ইজারাদার আহসান উল্লাহ দর্জি জানান, কোরবানির হাট জমে উঠতে শুরু করেছে। বেচা-বিক্রিও মোটামুটি হচ্ছে। কোরবানি আসতে দিন যত কমবে বেচাকেনা তত বেশি হবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, তারা পশুর হাটগুলোতে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের ব্যবস্থা রেখেছে। অসুস্থ পশুকে তাৎক্ষনিক চিকিৎসা সেবা দিতে একটি টিম সার্বিক দিক নিয়ে কাজ করে চলেছে।