শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

দক্ষিণবঙ্গে অপার সম্ভাবনাময় উদ্ভিদ হোগলা

নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহৃত হোগলা ও হোগলার পাউডার দিয়ে তৈরি খাবার।

ইফরান আল রাফি (পটুয়াখালী): বিস্তৃত জলরাশি আর সবুজ বৃক্ষরাজিতে ঘেরা বাংলার শস্যভান্ডারখ্যাত বরিশাল বিভাগ। অত্র অঞ্চলে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় খাল বিল, নদ-নদী আর ফসলি জমি। এসব নদ-নদী, খাল-বিল কিংবা নিচু জমিতে সবার নজর কাড়ে সবুজ চ্যাপ্টা ৫-৬ টি পাতা বিশিষ্ট মাঝারি আকারের এক ধরনের উদ্ভিদ যার নাম হোগলা। আঞ্চলিক ভাষায় তা ওগোল নামে পরিচিত। কোনো বিশেষ পরিচর্যায় জন্মে না এই হোগলা। রোগবালাইয়ের প্রকোপ নেই বললেই চলে। প্রাকৃতিকভাবে নিচু জমি বা জলাশয়ের পাড়ে জন্মে এই হোগলা।

বর্তমানে এই উদ্ভিদের পাতা থেকে বিশেষ করে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাটাই, পাটি, ঝুড়ি এবং কৃষি সম্পর্কিত নানা উপকরণ তৈরী করা হচ্ছে। কৃষক পরিবারের মহিলারা গৃহস্থালির অবসর সময়ে এসব উপকরণ তৈরী করেন। জুলাই-আগষ্ট মাসে হোগলা গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করেন কৃষকরা। কিছুদিন বাড়ির আঙ্গিনায় রোদে শুকানো হয় এরপর সুনিপুণ হস্ত শিল্পের মাধ্যমে বাড়ির মহিলারা তৈরী করেন বাহারি নকশার পাটি, ঝুড়ি চাটাই। নিজেদের পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে হোগলা পাতা থেকে তৈরী পাটিসহ অন্যন্যে উপকরণ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে ফলে গ্রামীণ মহিলারা এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছে।

হোগলা ফুল থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরী করা হয় গুঁড়া/পাউডার। সুমিষ্ট এই পাউডার ব্যবহার করা হয় দেশীয় নানা পিঠা তৈরীতে। বিশেষ করে মুখরোচক খাদ্য পায়েস, হালুয়া, পুলি পিঠা, ভাপা পিঠা ইত্যাদি তৈরীতে। আষাঢ শ্রাবণ মাসে হোগলা ফুল সংগ্রহ করা হয়। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় হোগলা গুঁড়া/পাউডারের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি হোগলা ফুলের পাউডারের দাম ৩৬০-৩৮০ টাকা। হোগলাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে দক্ষিণঅঞ্চলে অপার সম্ভাবনাময় কুটির শিল্প। হোগলা সম্পর্কে জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার বিশ্ববিদ্যায়ল পড়ুয়া শিক্ষার্থী মো. তাজওয়ারুল ইসলাম তাসনীম (বিএএম,পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) বলেন, ‘প্লাস্টিক শিল্পের প্রসারের ফলে হোগলা থেকে তৈরী দেশীয় স্বাস্থ্যসম্মত আরামদায়ক পাটি, চাটাই, ঝুড়িসহ কৃষি সম্পর্কিত উপকরণ আজ বিলুপ্তির পথে এবং হোগলা ফুল থেকে তৈরী পাউডার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার আগের মতো লক্ষ্য করা যায়না’। তিনি আরো বলেন, ‘দেশীয় এই শিল্পকে রক্ষা করতে সকলের সচেতনা এবং সরকারী সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।’

দক্ষিণবঙ্গের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, বেকার সমস্যা দূরীকরণ এবং নারীদের স্বাবলম্বী করতে হোগলা উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

This post has already been read 6131 times!

Check Also

ভেটেরিনারি ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভ্যাব) এর বিক্ষোভ সমাবেশ

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামলীগের বিদায়ের তিন মাস অতিক্রান্ত হলেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে …