মাহফুজুর রহমান: কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের পাটই প্রধান অর্থকরী আর দ্বিতীয় ফসল। তদুপরি বাংলাদেশের সর্বত্র কমবেশি পাট উৎপন্ন হয় বিধায় পাট চাষ বাংলাদেশের কৃষির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই দেশের প্রায় সবাই বৎসরে কিছু কিছু পাট ঘরে তুলে নেয়।
পাট দিয়ে তৈরি হয় আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় সর্বত্র ব্যবহারযোগ্য পাটসুতা ও রশি। এ সব পাটজাত দ্রব্য ব্যবহারের পর প্রকৃতিতে ফেলে দিলে সামান্য উষ্ণতা ও আর্দ্রতায় মাটিতে পঁচে সবুজ সার হয় ও এর উর্বরতা বাড়ায়। তবে পাট মাটিতে কোন পার্শ্বক্রিয়া বা সমস্যার সৃষ্টি করে না। অর্থাৎ পাট ও পাটজাতদ্রব্য প্রকৃতির বন্ধু।
এককালে এদেশে অর্ধেকাংশের বেশি চাষীরা পাট চাষে জড়িয়ে ছিল।কিন্তু বর্তমানে পাট নিয়ে চাষীরা অনীহা প্রকাশ করছে। তাই দিন দিন পাট আমাদের ইতিহাস আর ঐতিহ্য থেকে যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে চলেছে।
চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তরের পাট চাষী ফজলু মিয়া জানান, ফাগ্লুন-চৈত্র মাসের শুরুর দিকে তারা পাট লাগাতে শুরু করেন। তেমন কোনো ব্যয়বহুল পরিচর্যা লাগে না এ চাষে। সময়মতো একটু দেখভাল আর পরিচর্যায় অল্প সময়ের মধ্যেই বেড়ে ওঠে পাট। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসের দিকে তারা পাট তুলতে শুরু করেন।পাট তোলার পরপরই আঁশ ছাড়ানোর জন্য ভিজিয়ে রেখে দিতে হয়। পরে টানা ১ দিন রোদে চটচটে শুকানোর পর তারা পাটের বেপারীদের নিকট বিক্রি করে দেন। বর্তমানে বাজারে প্রতি মন পাট প্রায় ১৫০০-১৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
তিনি খুব হতাশ হয়ে বলেন, বর্তমানে পাট চাষে তারা লাভের মুখ একেবাড়েই দেখছে না। একটা সময় ছিলো যখন পাট চাষে ব্যাপক লাভ পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমান পাট চাষে লাভের অবস্থা খুবই মন্দা চলতেছে।
ফজলু মিয়া খুব আক্ষেপ সহকারে বলেন, আগে পাট তোলার জন্য পর্যাপ্ত বদলি পাওয়া যেতো কিন্তু বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে না আর গেলেও তাদের টাকায় পোষানো যায় না। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে বদলি জোগাড় নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, কিন্তু কাউকেই পাননি। এজন্য সবশেষে সব কষ্ঠ চাপা দিয়ে একটু লাভের আশায় নিজের সবটুকু দিয়েই একা অন্তহীন পরিশ্রমে পাট নিয়ে ব্যস্ত তিনি। তার মতো এভাবেই গ্রামের অনেক পাটচাষী দিনদিন পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এভাবেই দিন দিন হারিয়ে যেতে চলেছে কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী আর দ্বিতীয় ফসল সোনালী আঁশ পাট।