কাজী কামাল হোসেন (নওগাঁ): নওগাঁ জেলায় ক্রমেই আউশ ধানের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ছে। সরকারীভাবে আউশ চাষ করতে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ প্রনোদনা দেয়ার কারণেই আউশ ধানের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েন স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
এক সময় অতিরিক্ত ধান উৎপাদনের এই নওগাঁ জেলায় আউশ ধানের আবাদ ছিল খুবই জনপ্রিয়। সকালের খাবার তালিকায় বাড়িতে বাড়িতে আউশ চালের পান্থাভাত ছিল খুবই লোভনীয়। বলা যায় তা ছিলো আমাদের সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু মাঝখানে এই আউশ ধানের চাষ প্রায় বন্ধ হয়েই পড়েছিলো। বেশ কয়েক বছর ধরে প্রনোদনা দেয়ার ফলে আউশের আবাদ করতে কৃষকদের উৎসাহ বেড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ’র উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার কৃষকদের আউশ চাষে উৎসাহিত করতে প্রান্তি চাষীদের বিনামূল্যে সার হিসেবে ইউরিয়া, পটাশ, টিএসপি ও এমওপি, বীজ এবং জমির পরিচর্যা বাবদ নগদ অর্থ প্রনোদনা প্রদান করছে। এই কারণে জেলায় আউশ চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ২০১৫-১৬ বছরে জেলায় আউশের আবাদ হয়েছিলো ৫৭ হাজার ২শ ৮০ হেক্টর জমিতে। এ বছর চালের আকারে আউশের উৎপাদন হয়েছিলো ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯২ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ বছরে জেলায় আউশের আবাদ হয়েছিলো ৫৮ হাজার ২শ ৪৩ হেক্টর জমিতে। এ বছর আউশের চাল উৎপাদিত হয়েছিলো ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩শ ৮৮ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ বছরে জেলায় আউশের আবাদ হয়েছিলো ৬১ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে। এ বছর চাল আকারে উৎপাদিত হয়েছিলো ১ লাখ ৭৬ হাজার ১শ ৩০ মেট্রিক টন। চলতি ২০১৮-১৯ বছরে জেলায় আউশের আবাদ হয়েছে ৬৩ হাজার ৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে। যেখান থেকে চালের আকারে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫শ ৪৮ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, চলতি বছর জেলায় মোট ৬৩ হাজার ৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে আউশ হয়েছে। এর মধ্যে উন্নত ফলনশীল উফশী জাতের ৬২ হাজার ৯শ ৫১ হেক্টর জমিতে এবং হাইব্রীড জাতের আউশ চাষ হয়েছে ৮শ ১৯ হেক্টর জমিতে।
উপজেলা ভিত্তিক আউশ চাষের পরিমাণ হচ্ছে, নওগাঁ সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৫শ ৫৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের ৫ হাজার ২শ ৬০ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ২৯৪ হেক্টর। রানীনগর উপজেলায় মোট ৩ হাজার ৩শ ১০ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উফশী জাতের ৩ হাজার ২শ ৯০ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ২০ হেক্টর জমিতে। আত্রাই উপজেলায় মোট ২ হাজার ৪শ ৫ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩শ ৯০ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ১৫ হেক্টর জমিতে। বদলগাছি উপজেলায় মোট আউশ চাষ হয়েছে ৯শ ৪৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের ৯শ ৩৫ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ১০ হেক্টর। মহাদেবপুর উপজেলায় মোট আউশ চাষের জমির পরিমাণ ১০ হাজার ৪শ ৫৭ হেক্টর। এর মধ্যে উফশী জাতের ১০ হাজার ৪শ ৩২ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ২৫ হেক্টর জমিতে। পতœীতলা উপজেলায় মোট আউশ চাষ হয়েছে ৬ হাজার ৯শ ৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের ৬হাজার ৯শ ১৫ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ৩৫ হেক্টর। ধামইরহাট উপজেলায় মোট আউশ চাষের পরিমাণ ২ হাজার ৯শ ৮০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশী জাতের ২ হাজার ৮শ ২০ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ১৬০ হেক্টর। সাপাহার উপজেলায় মোট আউশ চাষের পরিমাণ ৩ হাজার ৫শ ৪০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের ৩ হাজার ৫শ ৩০ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ১০ হেক্টর। পোরশা উপজেলায় মোট আউশের আবাদের পরিমাণ ১ হাজার ১শ ৯০ হেক্টর। পুরোটাই উফশী জাতের। মান্দা উপজেলায় মোট আউশ চাষ হয়েছে ১৭ হাজার ২শ ৭৯ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের ১৭ হাজার ৪৯ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ২৩০ হেক্টর। নিয়ামতপুর উপজেলায় মোট আউশের আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ১শ ৬০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের ৯ হাজার ১শ ৪০ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ২০ হেক্টর।
কৃষকরা এ বছর তাঁদের জমিতে সবচেয়ে বেশী আবাদ করেছেন, ব্রিধান-৪৮, ব্রিধান-২৮, ব্রিধান-৫৫, পারিজা, জিরাশাইল এবং নেরিকা জাতের। এ বছর চালের আকারে সম্ভাব্য উৎপাদনের পরিমাণ আশা করা হচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫শ ৪৮ মেট্রিক টন।