মাহফুজুর রহমান (চাঁদপুর): চাঁদপুর জেলার অদূরে লক্ষীপুর জেলা শহর। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকার কারণে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পশ্চিমাংশ এবং রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ এলাকা জুড়ে নারিকেল, সুপারি’র বাগান বিস্তৃত। চাঁদপুর শহর থেকে এ জেলা সড়কপথে মাত্র দেড় ঘণ্টার পথ।
আঁচলে মেঘনার মায়া ডাকতিয়ার বুকে, রহমতখালি বয়ে চলে মৃদু একে বেঁকে নারিকেল সুপারি আর ধানে ভরপুর লক্ষীপুর। নারিকেল, সুপারি, সয়াবিন, বাদাম, শাখ-সবজি ইত্যাদি। লক্ষীপুর জেলা ঘিরে আছে মেঘনা, ডাকাতিয়া, কাটাখালী ও রহমতখালি নদী।
লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর ও রামগঞ্জ এলাকা নারিকেল ও সুপারি চাষের জন্য বিখ্যাত। জেলার আনাচে-কানাচে, যে যেখানেই পারছে একরকম যেন পান-সুপারির পসরা সাজিয়ে বাসে আছে। বিশেষত দালাল বাজারের পশ্চিমে চর মন্ডল, রাখালিয়া মহাদেবপুর, হায়দরগঞ্জের বিস্তীর্ণ নারিকেল ও সুপারি বাগানের ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ পর্যটকদের মন জয় করে নিয়েছে। নারিকেল গাছের চিরল পাতার ফাকে বাতাসের ঝাপটা, সুউচ্চসুপারি গাছের সারি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই।
ব্যবসায়ীগণ এ এলাকার নারিকেল, সুপারি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায় উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। এমনকি নারিকেল, সুপারি দেশের বাহিরেও রপ্তানি করা হয়ে থাকে। নারিকেল, সুপারি বিদেশে রপ্তানি করার ফলে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়। এছাড়াও নারিকেল, সুপারি বিভিন্ন শিল্প কারখানার কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এ জেলার সুপারি আকারে বড় এবং খেতে সুস্বাদু।
লাহার কান্দি, মান্দারী, দত্তপাড়া, দালাল বাজার, রসুলগঞ্জ, চরশাহী, ১নং হামছাদী, ২নং হামছাদী, শাকচর, বশিকপুর, ভাঙ্গাখাঁ, উত্তর জয়পুর, ভবানীগঞ্জ, কুষাখালী, চন্দ্রগঞ্জ, দীঘুলী প্রত্যেক ইউনিয়ন কে ধরা যায় নারিকেল, সুপারির জন্য বিখ্যাত। রায়পুর, হয়দারগঞ্জ, রামগঞ্জ, মজিব নগর, কমলনগর, হাজির হাট, রামগতি আজাদনগর পুরো লক্ষীপুর জেলাটাকে নরিকেল, সুপারির জন্য বিখ্যাত জেলা বলা হয়।
লক্ষীপুর পৌর এলাকায় বহু নারিকেল সুপারি বাগান রয়েছে। বৃক্ষ যেমন সারি সারি ভাবে দাঁড়িয়ে থেকে প্রকৃতিকে এক সুন্দর মনোরম পরিবেশ করেছে। ঠিক তেমনিভাবে নারিকেল, সুপারি গাছ পৌর এলাটাকে সাজিয়ে রেখেছে। এ জেলায় মানুষ বেশির ভাগ কৃষি ও নদীতে মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল। নারিকেল আর সুপারি বিক্রি করে অনেকে সাবলম্বি হয়েছে। এ জেলা থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় নারিকেল, সুপারি রপ্তানি করা হয়।
এখানকার প্রায় দেড় হাজার একর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। এসব বাগান থেকে উৎপাদিত সুপারি থেকে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরও এখানে ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৯৩ টন সুপারি উৎপাদন হয়। অন্যদিকে এ সময় সারা দেশে উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৬৬৩ টন সুপারি। অর্থাৎ দেশে উৎপাদিত সুপারির প্রায় ৪৮ শতাংশই উৎপাদন হয় লক্ষ্মীপুরে।
তবে এখানে সুপারি উৎপাদন হয় সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে। বসতভিটা বা ফসলি জমির পাশে, বাড়ির আঙিনায়, পুকুরপাড়, রাস্তার দুই পাশ ও পরিত্যক্ত জমিতে সুপারি চাষ করা হয়।
মৌসুমের শুরুতেই সুপারি বিক্রির বড় হাট বসে লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনী, সদর উপজেলার দালাল বাজারে। এছাড়া চরুহিতা, ভবানীগঞ্জ, মান্দারী, জকসিন, রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ বাজার, খাসের হাট, মোল্লারহাটসহ জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে সুপারি ঘিরে চলে জমজমাট ব্যবসা। সপ্তাহের দুদিন বেচাকেনা হয় এখানে। জানা গেছে, এখানে প্রতি হাটবারে ১০-৫০ লাখ টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়।লক্ষীপুর জেলা যেনো সুপারী-নারিকেলের চিরায়ত এক ঐতিহ্য নিয়ে যুগ-যুগ টিকে আছে।