মাহফুজুর রহমান (চাঁদপুর): গ্রীন হাউজ হলো কাঁচ বা ফাইবার কাঁচের তৈরি বিশেষ ঘর। যেখানে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রিত থাকে। সব ধরনের চারা উত্তোলনের জন্যে এর প্রয়োজন হয় না। কিছু প্রজাতির গাছের চারা বা কলম উৎপাদনের জন্যে এর প্রয়োজন হয়। যেমন, বাঁশের কলম (কাটিং) বা টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত যে কোনো চারাগাছ বাজারজাতকরণের পূর্বে গ্রীন হাউজে রাখতে হয়।
উল্লেখিত অংশসমূহ পরিকল্পিতভাবে সাজালে কম জায়গায় অপেক্ষাকৃত সুন্দর নার্সারী তৈরি করা যায়। নার্সারী বেডসমূহ পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি হলে ভালো হয়। এরূপ বেড সাজালে সমগ্র চারা সমান আলো-বাতাস পেতে পারে। দুটি বেডের মধ্যে ৫০-৬০ সে.মি. দূরত্ব রাখতে হবে, যেনো চারার পরিচর্যাকারী দুই বেডের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে পারে। নার্সারী বেড লম্বায় ১০ থেকে ১২ মিটার এবং প্রস্থে ১.৫০ থেকে ২.০ মিটার হতে হবে। প্রধান পরিদর্শন পথ ৩.০ মিটার এবং পার্শ্ব পরিদর্শন পথ ১.৫-২.০ মিটার প্রশস্ত হওয়া উচিত। অতি বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজন হলে যেনো নিষ্কাশন কাজ সহজে করা যায় তেমনই ব্যবস্থা রাখা।
দেশের মাটিতে বিদেশী সবজি চাষে সাফল্য দেখিয়েছেন সোহানা এগ্রো গ্রীন হাউজের স্বত্বাধিকারী অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন খান। চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের কাসিমবাজার সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে ফুরুন্দপুর খালের পাশেই এ ফার্মটি। এখানকার কিছু মানুষ প্রবাসী ও শহর-বন্দরে কাজ করেন ঠিকই, কিন্তু এখানে নগরজীবনের কোনো ছোঁয়া নেই। বিদ্যুৎ আছে, রাস্তাঘাটের দুর্দশা ও ভোগান্তি নেই। অথচ একেবারেই আধুনিক বিদেশী সবজি উৎপাদন হচ্ছে গ্রামের ছায়াঘেরা সোহানা এগ্রো গ্রীন হাউজে। সেখানে একটি কৃষি খামারের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে আস্তে আস্তে রপ্ত করেন কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের নানা কৌশল।
এছাড়া হল্যান্ডে তিনি দু দফায় ১০ বছর বিজ্ঞানসম্মত কৃষি প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন। নাড়ির টানে ফিরে আসেন দেশে এবং গড়ে তোলেন সোহানা এগ্রো ফার্ম লিমিটেড। ২০১৬ সালে এ ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। ৩ একর জমিতে গ্রীন হাউজ প্লাস্টিকের টিনের ছাউনি তৈরি করে শুরু করেন বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ। তাঁর ফার্মে উৎপাদিত সবজি শসা, চেরি টমেটো ও এগপ্লান্ট। বিদেশী এসব সবজি বছরে চারবার উৎপাদিত হয়। রৌদ্র কিরণ ও ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্যে গ্রীন হাউজের অর্ধেক অংশে প্লাস্টিকের ছাউনি দেয়া হয়েছে।
সোহানা এগ্রো ফার্মের পরিচালক নূর হোসেন নূরু জানান, পর্যায়ক্রমে পুরো জায়গায় গ্রীন হাউজের ব্যবস্থা করা হবে। উৎপাদিত সবজি কাসিমবাজার এবং স্থানীয় লোকদের মাঝে বিক্রি করা হয়। ভবিষ্যতে এ ফার্ম থেকে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকার সবজি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি আরো জানান, পরিপূর্ণভাবে চালু করা গেলে এ প্রকল্প থেকে প্রতি মাসে খরচ বাদে ৫ লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব হবে। সোহানা এগ্রো ফার্মে ২ জন শ্রমিক কাজ করেন। প্রকল্প পরিকল্পনায় রয়েছে দুগ্ধ খামার, মৎস্য খামার, হাঁস-মুরগীর খামার। এগুলো এখনো পুরোদমে চালু হয়নি। চালু হলে প্রায় শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। পুরো চাঁদপুর জেলা নয়, চট্টগ্রাম বিভাগেও এ রকম বিদেশী পুষ্টি গুণসমৃদ্ধ সবজির কোনো ফার্ম গড়ে ওঠেনি। ব্যতিক্রম এ সবজি খামারে সরকারের কোনো সহযোগিতা নেই। পুঁজির সঙ্কট হলেও তারা থেমে নেই।
তরপুরচন্ডী ইউপি চেয়ারম্যান ইমাম হাসান রাসেল গাজী জানান, গ্রামের প্রত্যেকের মনে এ ফার্ম নিয়ে অনেক স্বপ্ন আছে। ভিনদেশের সবজি এ মাটিতে উৎপন্ন হচ্ছে তা দেখতে মানুষ এখানে প্রতিনিয়ত আসেন।
তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, কম্পোস্ট সার বেশি দেয়া হলে উৎপাদন অনেক বেড়ে যাবে। ব্যতিক্রমী এ সবজিগুলো ভিনদেশ থেকে এদেশে আমদানি করা হয়, অথচ এদেশেও তা উৎপাদন করে অনেক খরচ বাঁচানো যায়। প্রচুর পরিমাণ উৎপাদন করা গেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে এবং তরপুরচন্ডীর এ গ্রীন হাউজ খুলে দিতে পারে অপার সম্ভাবনার দ্বার।