নিজস্ব প্রতিবেদক: অনুমান নির্ভর প্রচার-প্রচারণা এবং কিছু ভুল এ্যাকশনের কারণে মানুষের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ফরমালিন নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। যেকোন খাদ্যে ফরমালিন কাজ করে না। ফরমালিন শুধু প্রোটিনে কাজ করে। মাছ-মাংসও দীর্ঘদিন ডুবিয়ে না রাখলে কাজ হয়না। ভুল ধারণার কারণে মানুষ শাকসবজি ফলমুল খাওয়া কমিয়েছে। এতে মানুষের সঠিক শারিরিক গঠন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আতংক না ছড়িয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বৃহষ্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে “খাদ্যে ভেজাল বিরোধী অভিযান : প্রাতিষ্ঠানিক সংকট” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অতীতে ভুল মেশিন ব্যবহার করে ফরমালিন মাপা হয়েছে। কঠোর আইনের ফলে ফরমালিন এখন অনেক নিয়ন্ত্রিত। সরকার এখন স্ট্রিট ফুডকে স্বাস্থ্যসম্মত করতেও বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে বলেন জানান জনাব হক। দেশের বিভিন্ন শহরে রাস্তায় যারা খাবার বিক্রি করেন তাদের জন্য ফুড কার্ড, প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
মাহফুজুল হক বলেন, নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় জড়িত ১৮টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভাসহ আরো ৪৮৬টি প্রতিষ্ঠান এবং ২৫ লাখ খাদ্য ব্যবসায়ীর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা একটি কঠিন কাজ। তবে দেশের সব মানুষ যেহেতু ভোক্তা, তাই সচেতনতা বাড়িয়ে নিরাপদ খাদ্যের প্রতি চাহিদা সৃষ্টি করা গেলে ব্যবসায়ীরা নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে বাধ্য হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় খাদ্য মন্ত্রী এ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম, এম.পি প্রাতিষ্ঠানিক সংকট ও সীমাবদ্ধতা দূর করে সমন্বিতভাবে ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন- ২০৪১ সালের মধ্যে উৎপাদন থেকে খাবার টেবিল পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে চায় সরকার।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা যেন ভেজাল বিরোধী অভিযানে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য আমরা প্রথমেই কাউকে জেল জরিমানা করতে চাই না। একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মতিঝিলের ২০০ হোটেলে জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে। এরপর মালিক ও কর্মচারিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পরবর্তীতে হোটেলগুলোর মধ্যে যেগুলো নিরাপদ সেগুলোকে সবুজ চিহ্ন, যেগুলোর ছোট খাট সমস্যা থাকবে সেগুলোকে হলুদ এবং যেগুলোর অবস্থা খারাপ সেগুলোকে লাল চিহ্ন দেয়া হবে। পর্যায় ক্রমে লাল চিহ্নিত হোটেলগুলোকে বন্ধ করে দেয়া হবে। পাইলট ভিত্তিতে এটি করা হচ্ছে বলেও জানান খাদ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়নে ৭-৮ বছর সময় লাগলেও বাংলাদেশে তার অনেক আগেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। স্বাধীনতার ৪৮ বছরে অন্য সরকারগুলো এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়নি। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের সরকারই নিরাপদ খাদ্য আইন এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেন, দেশে নিরব গণহত্যা চলছে। বিশ্বব্যাংক বলছে বছরে ৮০ হাজার মানুষ পরিবেশ দূষণে মারা যাচ্ছে। এতে ৫৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় শিল্পজাত খাদ্য পণ্যের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শহরের চেয়ে গ্রাম-গঞ্জে অধিক হারে কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া পশুপাখিতে গ্রোথ হরমোন এবং এন্টিবায়োটিকের অবাধ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি কমর উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাঠ পর্যায়ে ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে শুধু খড়গ নামানো হয় হোটেল রেস্তোরাগুলোর উপর। ঔপনিবেশিক আমলের মতো জোর করে তাৎক্ষণিক জরিমানা আদায় করা হয়, কিংবা ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এক্ষেত্রে আইনের সঠিক প্রয়োগ জরুরী।
ভোক্তা অধিকার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নূর ইসলাম বলেন, আইন করার পাশাপাশি আইন বাস্তবায়নে সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সচেতনতা প্রয়োজন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মাসুম আরেফিন বলেন, বর্তমানে ৬৪ জেলায় অধিদপ্তরের অফিস রয়েছে এবং এখন নিয়মিত গণশুনানির আয়োজন করা হচ্ছে।
বিএসটিআই -এর সহকারি পরিচালক মো. রিয়াজুল হক বলেন, আমরা পানিসহ বিভিন্ন পণ্যের মান বিচারের জন্য প্রতিদিনই ঢাকার কোন না কোন স্থানে ভেজাল বিরোধী অভিযান চালাচ্ছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, সব খাদ্যকেই ঢালাওভাবে ভেজাল বলা ঠিক হবেনা। অনেক ভাল উদাহরনও আছে যেগুলো আমাদের সামনে আসে না। ফলমুল-শাকসবজি খাবারের আগে আধা ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
বীর প্রতীক মাহবুব আলী রঞ্জু বলেন, পৃথিবীর কোথাও খাদ্য নিয়ে এত অবহেলা করা হয় না। তাই আইনের কঠোরতা প্রয়োজন। শুধু জরিমানা করেই দায়িত্ব শেষ করা ঠিক হবে না।
উল্লেখ্য, অনলাইন নিউজ পোর্টাল দেশইনফো.কম.বিডি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওয়াচডগ বাংলাদেশ এ বৈঠকের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দেশইনফো.কম.বিডি এর সম্পাদক রাশেদ চৌধুরী।
Thanks a lot for publishing the important news. New message for the city dwellers eager to have safe food.