রাজশাহী সংবাদদাতা: এক সময় যে বাংলাদেশে পর্যাপ্ত খাদ্য ছিলনা, সময়ের প্রেক্ষাপটে সরকারের সঠিক পরিকল্পনা, কৃষি খাতে প্রণোদনা, গবেষণা খাতে পৃষ্ঠপোষকতা এবং কৃষিবিজ্ঞানী, সম্প্রসারণকর্মী ও কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে খাদ্য ঘাটতির সে দেশ আজ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় বরং খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। অধিক জনসংখ্যার বিপরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য উৎপাদনের পর আমাদের দেশে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি এখন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, ফসল উৎপাদনে আর্থিক দিক ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করলে পোকা দমনে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি হিসেবে “পার্চিং”- অতীব প্রয়োজন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনায় উপজেলা কৃষি অফিস, চারঘাট, রাজশাহী ‘নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে’ বদ্ধপরিকর। চারঘাট উপজেলায় ফলের বাগান ও অন্যান্য সবজি জাতীয় ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি খরিপ-২ মৌসুমে মোট ৪২৫০ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ করা হচ্ছে। চাষাবাদকৃত আমন ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতের মধ্যে স্বর্ণা, ব্রি ধান৫১, ব্রি ধান৫২, ব্রি ধান৫৬ ও ব্রি ধান৭১ এবং বিনা ৭ উল্লেখযোগ্য। এ মৌসুমে আমন ধানের ক্ষেতে সাধারণত মাজরা পোকা, বাদামী ঘাস ফড়িং (কারেন্ট পোকা), পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গী পোকা ইত্যাদি আক্রমণ করে থাকে। সেদিকে নজর রেখে চারঘাট উপজেলার ১৯টি ব্লকে পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে পোকা দমনের জন্য চারা রোপনের পর থেকেই আগাম সতর্কতা স্বরূপ আলোক ফাঁদ ও পার্চিং করা অব্যাহত রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) উপজেলা কৃষি অফিসার আবু জাফর মো. সাদেক-এর নির্দেশে চারঘাট পৌরসভা ব্লকে এবং ঝিকরা ব্লকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পার্চিং উৎসব করা হয়। পার্চিং উৎসবে সমাবেত কৃষকদের পার্চিংয়ের নিয়ম-কানুন ও সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেন চারঘাট উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. মতিয়র রহমান ও খন্দকার ফিরোজ মাহমুদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. বজলুর রহমান (চারঘাট ব্লক), মো. মনিরুজ্জামান (ঝিকড়া ব্লক) এবং শ্রী নিখিল চন্দ্র শীল (অনুপমপুর ব্লক)।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’ প্রণীত হয়। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে দেশের প্রায় ১৫টি মন্ত্রণালয় সংযুক্ত থাকলেও মাঠ পর্যায়ে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করা কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপরে বর্তায়। ফলে কৃষিমন্ত্রী টেকসই খাদ্য উৎপাদনে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছেন।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার না করে পোকামাকড় দমন ও বংশ বিস্তার রোধে পরিবেশের পার্চিং পদ্ধতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয় হচ্ছে। পার্চিংয়ের জন্য পাখি বসার উপযোগী বাঁশের আগা, কঞ্চি, গাছের ডাল প্রভৃতি প্রতি ৫ শতকে ১টি, বিঘা প্রতি ৭-১০টি এবং একরে ১৮-২০টি পুঁতে দিতে হবে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হলে নিশ্চিত হবে টেকসই কৃষি, পূর্ণ হবে আগামীর বাংলাদেশের লক্ষ্য।