মো. খোরশেদ আলম জুয়েল: জীবাণু যদি তাদের জীবন বাঁচাতে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে তবে মানুষ কেন পারবোনা? মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন হলে এন্টিবায়োটিক ছাড়া পোলট্রি উৎপাদন সম্ভব। শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর অভিজাত এক হোটেলে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড আয়োজিত পোলট্রি ও প্রাণিতে এন্টিবায়োটিকের বিকল্প নতুন ৫টি নতুন পণ্যের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের সাবেক ডীন অধ্যাপক ডা. প্রিয় মোহন দাস।
তিনি বলেন, এন্টিবায়োটিকের মোড়কগুলো স্বতন্ত্র একটি রঙে থাকা উচিত যাতে করে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই চিনতে পারে এটি এন্টিবায়োটিক। বিশ্বের ৬৯টি দেশ এন্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে বা বন্ধের পথে। আমাদেরকে আস্তে আস্তে সে পথে এগুতে হবে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে কখনোই আমাদের যাওয়া উচিত না। কারণ, প্রকৃতি এক সময় তার প্রতিশোধ ঠিকই নেবে।
অনুষ্ঠানে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড –এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী বলেন, দেশে ওষুধের প্রচন্ড রকমের অপব্যবহার আছে। কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়াই মানুষ দোকান কিংবা ফার্মেসি থেকে এন্টিবায়োটিক খায়, আবার কিছু অসাধু ওষুধ বিক্রয় কর্মকর্তার প্ররোচনায় পড়ে খামারিরা নিজেদের ফার্মে এন্টিবায়োটিক বায়োটিক ব্যবহার করে। কিন্তু এটি মোটেই ঠিক না। এতে করে মানুষের শরীরে এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারাচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার চেষ্টা করছে পরিস্থিতি উন্নত করতে। কিন্তু সরকারের পক্ষে কখনোই এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবেনা আমরা প্রাইভেট সেক্টরের যারা আছি তাদের আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া। আমাদের নৈতিক অবস্থান ঠিক করতে হবে। দেশের এক নাম্বার ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি হিসেবে আমরা দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে এগ্রোভেট ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রতিযোগিতামূলক দামে গুণগত মানের ওষুধ সরবরাহ করাই আমাদের উদ্যেশ্য।
অনুষ্ঠানে বিপিআইসিসি প্রেসিডেন্ট ও প্যারাগন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসিউর রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি মানুষের পাতে নিরাপদ পোলট্রি মাংস ও ডিম পৌঁছে দেয়ার। এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার থেকে আমরাও পরিত্রাণ চাই। কারণ এতে করে আমাদের উৎপাদন খরচ যেমন বেড়ে গেছে তেমনি জনসাধারণের মাঝেও পোলট্রি সম্পর্কে বিরূপ ধারনা তৈরি হয়েছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি উক্ত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের। এজন্য আমাদের ফার্মে বায়োসিকিউরিটি ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। যথাযথ স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকলে ফার্ম করা উচিত হবেনা।
তিনি বলেন, বিপিআইসিসি’র পক্ষ থেকে আগামী মাসের (অক্টোবর) শুরু থেকেই দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রান্তিক খামারিদের নিরাপদ পোলট্রি উৎপাদন বিষয়ে বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কাজের আমাদের সহায়তা করবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেড –এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান, কোয়ালিটি ফিডস লিমিটেড –এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইহতেশাম বিন শাহজাহান দেশের পোলট্রি শিল্প সম্পর্কে তাদের মূল্যবান বক্তব্য এবং আমদানিকৃত পণ্যগুলো সম্পর্কে তাদের মূল্যবান মতামত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক, কাজী ফার্মস, প্যারাগন, আফতাব, সিপি, কোয়ালিটি, নিউ হোপ চায়না, রাফিদ পোলট্রি ও হ্যাচারি ছাড়াও দেশের আরো অনেক শীর্ষস্থানীয় পোলট্রি কোম্পানির উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ, পোলট্রি বিশেষজ্ঞ, পুষ্টিবিদ এবং স্কয়ার এগ্রোভেট ডিভিশনের কর্মকর্তাবৃন্দ।
উল্লেখ্য, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড (এগ্রোভেট ডিভিশন) এন্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে নতুন ৫টি গ্রোথ প্রমোটর বাজারে নিয়ে এসেছে। জার্মানির স্বনামধন্য কোম্পানি XVET GmbH থেকে আমদানিকৃত Orego Plus™ Liquid, Yuccamax™ NH Liquid, Novovital™ Liquid, Aromax™ Liquid এবং Orego Plus™ Liquid, Yuccamax™ NH Liquid,Novovital™ Liquid, Aromax™ Liquid নামে পণ্যগুলো তারা বাজারজাত করবে। আমদানিকৃত পণ্যগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও নিরাপদ বলে দাবী করেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।