নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পোলট্রি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে গেলে ফিডের উৎপাদন খরচ কমানোর বিকল্প নেই। তবে উৎপাদন খরচ কমাতে যেয়ে আবার ফিডের গুণগত মান খারাপ করা যাবেনা। সেজন্য নতুন টেকনোলজি ও গবেষণার বিকল্প নেই। কারণ ভোক্তারা এখন অনেক বেশি সচেতন। দেশের পোলট্রি শিল্পোদ্যোক্তা এবং বিজ্ঞানীদের গবেষণায় আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। পোলট্রি শিল্পে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
শনিবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর কেআইবি তে অনুষ্ঠিত পোলট্রি শিল্পের সাথে জড়িত অনলাইনভিত্তিক পেশাজীবী সংগঠন পোলট্রি প্রফেশনালস বাংলাদেশ (পিপিবি) -এর উদ্যোগে “Feed Cost Challenges : Application of Biotechnological can be an Approach” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারটি মূলত দুটি পর্বে ভাগ করা হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অর্থনীতি শাখার ইউএলও (লীভ/ রিজার্ভ) এবং পিপিবি কোর টিম মেম্বার ডা. নন্দ দুলাল টিকাদার এর সভাপতিত্বে সেমিনারটি শুরু হয় সকাল ১০টায়।
সেমিনারের শুরুতে সিনিয়র পোল্ট্রি প্রফেসনাল এবং এজি এ্যাগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড –এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, এ ধরনের সেমিনারে প্রত্যেকের নিজ তাগিদে নিজ খরচেই অংশগ্রহণ করা উচিত। কারণ, এটি একটি জ্ঞানভিত্তিক সেমিনার যা সকলের উপকারে আসবে। পোলট্রি শিল্পের কাঁচামাল অব্যহতভাবে বৃদ্ধির কারণে ফিডের উৎপাদন খরচ কমানো বর্তমানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে উপায় খুজতে হবে।
সেমিনারে Evonik (SEA) Pte Ltd. এর Senior Technical Service Manager, Dr. Pradeep Krishnan “THE ROAD TO HEALTH IS PAVED WITH GOOD INTESTINES” শীর্ষক প্রেজেন্টেশনে বলেন, ভোক্তারা এখন অনেক বেশি সচেতন। তারা জানতে চায়, তারা যা খাচ্ছে সেটি কতটুকু নিরাপদ। এক সময় খাদ্য নিরাপত্তা ছিল বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ কিন্তু বর্তমানে নিরাপদ খাদ্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। উৎপাদন বাড়ানোর চেয়ে গুণগত মান রক্ষা বর্তমান সময়ে একটি বাস্তবিক ভাবনার বিষয়।
সেমিনারে গেস্ট প্যানেলের প্রধান নাহার এগ্রো গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা বলেন, পোলট্রি শিল্পে মার্কেটিং পলিসিতে এখনো অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে। এ শিল্পে গবেষণার বিষয়টি অনেক বেশি উপেক্ষিত। এসব জায়গাগুলোতে উন্নতি করতে গেলে সম্মিলিত সহযোগিতায় একটি ফান্ড করা যায় কী না সেটি ভেবে দেখা যেতে পারে। ভোক্তারা কোন কিছুতে ভুল বুঝলে সেটি সঠিক গবেষণা প্রতিবেদন এবং তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে বুঝানো উচিত।
এ সময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পরও অনেক ছেলেমেয়ে ফার্মে কাজ করতে চাননা। তাদের প্রথম পছন্দ বিসিএস কিংবা ব্যাংক। এ চিন্তা ধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
সেমিনারে এসোসিয়েট ফর ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড –এর পরিচালক (এগ্রিবিজনেস) এবং বিশিষ্ট পোলট্রি কনসালট্যান্ট মো. আকতারুজ্জামান বলেন, ফিড খরচ কমানোর পাশাপাশি নিরাপদ পোলট্রি উৎপাদনের দিকে আমাদের বেশি নজর দিতে হবে। কারণ, মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন।
সেমিনারের দ্বিতীয় পর্বে “Feed Cost Challenges : Application of Biotechnological can be an Approach” শীর্ষক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট পোলট্রি কনসালট্যান্ট অঞ্জন মজুমদার। প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তিনি ফিড বেড়ে যাওয়ার কারণ, কমানোর উপায়, পোলট্রির বাজার ব্যবস্থাপনা, রোগবালাই, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি নানা খুটিনাটি বিষয় অত্যন্ত প্রাঞ্জলভাবে উপস্থাপন করেন।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. আবু সাদেক মোহাম্মদ সেলিম, ডিপার্টমেন্ট অব এ্যানিমেল সায়েন্স এন্ড নিউট্রিশিয়ান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ, ডিপার্টমেন্ট অব এ্যানিমেল সায়েন্স, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; ড. স্বপন কুমার ফৌজদার, সহযোগি অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব এ্যানিমেল সায়েন্স, পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; খন্দকার মো. মোহসিন, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ; ডা. মো. মোজাম্মল হক খান, (সিইও) এমএইচকে এগ্রো; ডা. সনজিৎ চক্রবর্তী, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইভোনিক বাংলাদেশ।
মূলত পোলট্রি পেশাজীবীদের বিভিন্ন আলাপ আলোচনা এবং নলেজ শেয়ারিং এর মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞানকে আরো শাণিত করার উদ্দেশ্যে সেমিনারটির আয়োজন করা হয় বলে আয়োজক সূত্র জানিয়েছে। এছাড়াও এমন আয়োজন আগামী দিনে সকলের পেশাগত উৎকর্ষতা সাধনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন উপস্থিত পেশাজীবীরা।