নিজস্ব সংবাদাতা: দেশের স্বার্থে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সমন্বিত গবেষণার ওপর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এককভাবে সর্বাধিক অবদান রাখছে জাতীয় মাছ ইলিশ। একক প্রজাতি হিসাবে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ। মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২% আসে ইলিশ থেকে। ইলিশের উন্নয়নে গবেষণা ত্বরান্বিত করতে হবে। সোমবার (১৫ অক্টোবর) মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত ইলিশের জিনোম সিকোয়েন্সিং উন্মোচন সংক্রান্ত গবেষণা কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এম.পি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি ইলিশের জীবন রহস্যের উদঘাটন কাজ দ্রুততার সাথে সম্পন্নের আহবান জানান।
ইলিশের জিনোম সিকোয়েন্সিং উন্মোচন সংক্রান্ত গবেষণা কর্মশালায় গবেষক ও বিজ্ঞানীরা বলেন যে, বিশ্বে নিজস্ব মেধা ও দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা ইলিশ মাছের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচনে সক্ষম হয়েছেন। দেশীয় ইলিশের জীবন রহস্য প্রস্তুতকরণ, জিনোমিক ডাটাবেজ-স্থাপনেও তারা গবেষণায় সাফল্য পেয়েছেন বলে জানান। বছরে দুইবার ইলিশ প্রজনন হয় বলেও তারা দাবি করে বলেন, জিনোম সিকোয়েন্সিং এর মাধ্যমে এই দুই সময়ের ইলিশ জীনগতভাবে পৃথক কিনা এবং কোনো নির্দিষ্টি নদীতে জন্ম নেয়া পোনা সাগরে যাওয়ার পর বড় হয়ে প্রজননের জন্য আবার একই নদীতেই ফিরে আসে কিনা সেসব তথ্যও জানা যাবে জিনোম সিকোয়েন্সিং এর মাধ্যমে।
মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত ইলিশের জিনোম সিকোয়েন্সিং উন্মোচন সংক্রান্ত গবেষণা কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিসারিজ বায়োলজি এন্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-রসায়ন ও অনুপ্রাণ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসিনা খান পৃথক পৃথক প্রবন্ধে এসব তথ্য প্রকাশ করেন। মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রী ইলিশের জীবন রহস্য সংক্রান্ত গবেষণার অগ্রগতি ও ফলাফল সম্পর্কে অবহিত হতে আগ্রহ প্রকাশ করায় এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞানীরা জানান, জিনোম হচ্ছে কোনো জীবের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। জীবের জন্ম, বৃদ্ধি, প্রজনন এবং পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াসহ সকল জৈবিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় জিনোম দ্বারা। ইলিশের জিনোমে ৭৬ কোটি ৮০ লাখ নিউক্লিওটাইড রয়েছে যা মানুষের জিনোমের প্রায় এক চতুর্থাংশ। ইলিশের পূণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স জানার মাধ্যমে অসংখ্য অজানা প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে খুব সহজেই। বাংলাদেশের জলসীমায় ইলিশের স্টকের সংখ্যা (একটি এলাকায় মাছের বিস্তৃতির পরিসীমা) কতটি এবং দেশের পদ্মা, মেঘনা নদীর মোহনায় প্রজননকারী ইলিশগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্টক কিনা তা জানা যাবে এই জিনোম সিকোয়েন্সিং এর মাধ্যমে।
বক্তারা, জাতীয় মাছ ইলিশ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও টেকসই আহরণ নিশ্চিতকরণের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ইলিশ এখন বিশ্বে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃত। তাই দেশীয় ইলিশের জীবনরহস্য প্রস্তুতকরণ, জিনোমিক ডাটাবেজ স্থাপনে গবেষণায় সাফল্য পাওয়ায় ইলিশের ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। গবেষকরা জানান, তারা ইলিশের পূর্ণাঙ্গ ডিনোভো জিনোম অ্যাসেম্বলী প্রস্তুত করে ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট ইলিশের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স আন্তর্জাতিক ডেটাবেজে ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনে (NCBI) জমা দেন। ইলিশের জিনোম সংক্রান্ত গবেষণালব্ধ ফলাফল একাধিক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সেও উপস্থাপন করেন।
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ সচিব রইছ উল আলম মণ্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন, মৎস্য অধিদপ্তরের ডিজি আবু সাঈদ মো. রাশেদুল হক, মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউটের ডিজি ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, পাট গবেষণা ইনিস্টিটিউটের ডিজি ড. মঞ্জুরুল আলম, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ বায়োলজি এন্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম কাদের খান, পোল্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. বজলুর রহমান, ন্যাশনাল ইনিস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।