শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

কৃষি যান্ত্রিকীকরণে আধুনিক বীজ বপন যন্ত্রের ব্যবহার

কৃষিবিদ মো. আকতারুল ইসলাম ­ কৃষিবিদ মো. আব্দুর রউফ: বাংলাদেশে কৃষি কাজ অতীব প্রাচীন হলেও ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন কৃষির আধুনিকায়ন যাতে স্বল্প জমিতে কম খরচে অধিক ফসল ফলানো সম্ভব হয়। দিন দিন শ্রমিক স্বল্পতা এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষি খাত যখন অলাভজনক হয়ে যাচ্ছে সেখানে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে এনে কৃষিকে লাভজনক করতে পারে।

ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে জমি সময়মতো প্রস্তুত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং চাষাবাদের খরচের একটি বড় অংশ ব্যয় হয় জমি প্রস্তুত করার সময়। এক্ষেত্রে বীজ বপন যন্ত্র (সিডার) দ্বারা বীজ বপন করলে একই সাথে জমি প্রস্তুত ও বীজ বপন করা গেলে একদিকে খরচ কমানো সম্ভব হবে এবং অন্যদিকে দ্রুত পরবর্তী ফসল চাষে যাওয়া যায় এতে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি পায় ।

বীজ বপন যন্ত্র / সিডার ব্যবহারের সুবিধাসমূহ:

ক) একসাথে জমি চাষ ও বীজ বপন করা যায় এবং সাথে সাথে জমিতে মই দেয়া যায় ।

খ) লাইনে বীজ বপন করা যায় এতে ফসলের মধ্যবর্তী আগাছা সহজে পরিস্কার করা যায় ।

গ) সারিতে ও নির্দিষ্ট দূরত্বে বীজ বপন করায় গাছ বেশি আলো বাতাস পায় এবং সর্বোপরি উৎপাদন বাড়ে।

ঘ) সিডার ব্যবহারে প্রচলিত পদ্ধতির (বীজ ছিটানো) চেয়ে তুলনামূলক কম বীজ প্রয়োজন হয়। তাই এতে অর্থ সাশ্রয় হয় ।

ঙ) সিডার মেশিন দ্বারা জমিতে বিভিন্ন ধরনের চাষ যেমন ফুল টিলেজ, স্ট্রিপ টিলেজ/ফালি চাষ ইত্যাদি দেয়া সম্ভব ।

বীজ বপনের জন্য পাওয়ার টিলার চালিত বীজ বপন যন্ত্র এবং ট্রাক্টর চালিত বীজ বপন যন্ত্র পাওয়া যায়। তবে আমাদের দেশের চাষাবাদের জমিগুলো অনেক ছোট ও আইল বিশিষ্ট হওয়ায় পাওয়ার টিলার চালিত বীজ বপন যন্ত্র ব্যবহার করা সুবিধাজনক। এছাড়া ট্রাক্টর চালিত বীজ বপন যন্ত্রের চেয়ে পাওয়ার টিলার চালিত বীজ বপন যন্ত্র দাম অনেক কম হওয়ায় এটি কৃষকদের জন্য ক্রয় করা সহজসাধ্য ।

পাওয়ার টিলার চালিত বীজ বপন যন্ত্র দিয়ে বেলে ও বেলে দোআঁশ মাটিতে ধান, গম, ভূট্টা, ডাল ও তেল জাতীয় শস্য এবং পাট লাইন পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। সারিতে ফসল হয় বলে ফলনও প্রায় ১৫ – ২০ % পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এ পদ্ধতিতে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ০.১৮ হেক্টর (৪৫ শতাংশ) জমিতে চাষ ও মই দেয়াসহ বীজ বপন করা যায়। সিডার মেশিনের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসল বপন করতে প্রতি ৩৩ শতকে খরচ হয় ২৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত যেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে ৩ টি চাষসহ খরচ হয় ৯০০-১০০০ টাকা ।

সঠিক নির্দেশণা মেনে মেশিন চালিয়ে দেশের বেকার যুবকেরা তাদের আয়ের উৎস হিসেবে এই পেশা বেছে নিতে পারে। এজন্য উপজেলা কৃষি অফিস, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন এনজিও এবং মেশিনারী কোম্পানীগুলির তত্ত্বাবধানে মেশিন চালনা ও রক্ষনাবেক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন ধরনের সহযোগীতা প্রদান করে থাকে ।

কৃষিনির্ভর জনগোষ্ঠীর আয়বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য সময়োপযোগী আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এজন্য কৃষকদের এসব কৃষি যস্ত্রপাতি কিনতে আগ্রহী করার উদ্দেশ্যে এবং আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষে সরকার ৫০% পর্যন্ত ভুর্তকির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তাই সুপরিকল্পিতভাবে কৃষি যস্ত্রপাতির ব্যবহার করলে ফসল উৎপাদনের খরচ সাশ্রয় করার পাশাপাশি অন্যান্য কৃষকদের জমিতে মেশিনের সেবা প্রদানের মাধ্যমে অধিক আয় করতে পারবে এতে কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের কৃষিতে অভূতপূর্ব উন্নয়নের গতি আরো তরান্বিত হবে।

লেখকদ্বয় :  বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), ময়মনসিংহ।

This post has already been read 7058 times!

Check Also

আমদানি নির্ভরতা নিরসনে যুগান্তকারী উদ্যোগ: দেশেই তৈরি হবে হোল ফিড কম্বাইন হারভেস্টার

সি‌লেট সংবাদদাতা: দেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণে আমদানি নির্ভরতা নিরসনে যুগান্তকারী এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ধান …