নিজস্ব সংবাদাতা: বাংলাদেশের পোল্ট্রি খামারিদের জন্য জীব-নিরাপত্তা, খামার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ওয়েটমার্কেট উন্নয়নে কারিগরি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী দেশ দি কিংডম অব নেদারল্যান্ডস। সে দেশের সিনিয়র এক্সপার্টস প্যানেল ‘দি পাম নেদারল্যান্ডস’ এর মাধ্যমে এ সহযোগিতা প্রদান করা হবে। বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাসে অনুষ্ঠিত বিপিআইসিসি, পাম নেদারল্যান্ডস এবং দি রয়েল নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের কর্মকর্তাদের মধ্যকার এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোগ-জীবানুর প্রকোপ থেকে খামারকে রক্ষা করা, ওষুধের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো এবং স্বাস্থ্য-সম্মত ও নিরাপদ পোল্ট্রি’র মাংস ও ডিমের উৎপাদন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পাম নেদারল্যান্ডসের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে এসে প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন। শুধু ঢাকা নয় ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহর এমনকি পোল্ট্রিঘন এলাকাগুলোতেও এ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হবে। এর পাশাপাশি ওয়েটমার্কেটে স্বাস্থ্যসম্মত ও জীবানুমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সাধারণ ক্রেতাদের স্বার্থে ছোট আকারের আধুনিক জবেহ খানা (স্লটার হাউস) স্থাপনেও সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়।
নেদারল্যান্ডস কে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত মি. হেন্দ্রিকুস জি. জে (হ্যারি) ভারওয়েজ বলেন, বিশাল জনসংখ্যার এদেশের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টির যোগান নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ এবং এক্ষেত্রে পোল্ট্রি শিল্প অনবদ্য ভূমিকা রাখছে। এটি দ্রুত অগ্রসরমান একটি কৃষিভিত্তিক শিল্প এবং সঠিক পরিকল্পনায় এগুতে পারলে এখাতের উত্তোরত্তর প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন মি. ভারওয়েজ। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীন উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সম্পর্ক স্থাপনও এ শিল্পের জন্য সহায়ক হতে পারে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, রোগ-জীবানুর সংক্রমণ এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় খামারিরা লোকসানে পড়ছেন। সাধারণ খামারিদের রক্ষা করতে না পারলে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে, সাশ্রয়ী মূল্যে ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে। সে কারণেই খামারিদের দক্ষতাবৃদ্ধি, বিশেষ করে বায়োসিকিউরিটি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বিপিআইসিসি। তিনি আরো বলেন, খামারিদের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়লে সেইফ পোল্ট্রি প্রোডাকশন বাড়বে, পোল্ট্রি পণ্যের প্রতি ভোক্তাদের আস্থা বাড়বে এবং ডিম ও মুরগির মাংসের মাথাপিছু কনজাম্পশন আরও বৃদ্ধি পাবে যা পোল্ট্রি শিল্পের ধারাবাহিক অগ্রগতির পথকে আরও প্রসারিত করবে। বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে এগিয়ে আসার জন্য তিনি বাংলাদেশে অবস্থিত নেদারল্যান্ডস দূতাবাস এবং পাম নেদারল্যান্ডসকে ধন্যবাদ জানান।
পাম নেদারল্যান্ডস সিনিয়র এক্সপার্টস গ্রুপের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর উইম হিজলার জানান, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ১০০টি সফল মিশন সম্পন্ন করেছে সহযোগী এ সংগঠনটি। এস.এম.ই উন্নয়নে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছে পাম নেদারল্যান্ডস। শুধুমাত্র দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেই বিনামূল্যে সহযোগিতা প্রদান করা হয়। অর্থাৎ যে দেশগুলোতে পাম নেদারল্যান্ডস কাজ করে শুধুমাত্র সে সকল দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্যই বিনামূল্যে সেবা প্রদান করে পাম। বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ধরনের কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়না বলে জানান মি. হিজলার। দেশী-বিদেশী যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মালিকানা নূন্যতম ৫১ শতাংশ হওয়া বাধ্যতামূলক। তবে নির্ধারিত ফি প্রদান সাপেক্ষে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও পাম নেদারল্যান্ডসের সেবা নিতে পারে। তিনি আরো বলেন, নেদারল্যান্ডস হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ডিম রপ্তানীকারক একটি দেশ এবং মুরগির মাংস রপ্তানীতে দেশটির অবস্থান তৃতীয়।
এবারের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনে বাংলাদেশে আসা পাম বিশেষজ্ঞ মি. এ্যাড বাল জানান, যশোর ও সৈয়দপুরে ছোট আকারের ৫টি খামার পরিদর্শন করবেন তিনি এবং খামারগুলোর মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় পরামর্শমূলক সেবা প্রদান করবেন। এর পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিপিআইসিসি’র সদস্যভুক্ত সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথেও পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বৈঠক করবেন।
বিপিআইসিসি-পাম নেদারল্যান্ডস বৈঠকে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি মো. রকিবুর রহমান (টুটুল), এনিমেল হেলথ কোম্পানীজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আহকাব) সভাপতি এ.কে.এম আলমগীর ও মহাসচিব ডা. মো. কামরুজ্জামান, ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বিবি) সাধারণ সম্পাদক মো. মাহাবুব হাসান, বিপিআইসিসি’র সচিব জনাব দেবাশিস নাগ, উপদেষ্টা জনাব শ্যামল কান্তি ঘোষ ও মো. সাজ্জাদ হোসেন, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ইকনমিক ও কমার্শিয়াল অ্যাফেয়ার্স এন্ড প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক উপদেষ্টা মিজ মুন্নুজান খানম, কর্মকর্তা ওসমান হারুনী, এবং পাম নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ প্রতিনিধি- হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক এন্ড এনিমেল ব্রিডিং বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. এম.এ গাফ্ফার।