দিনাজপুর প্রতিনিধি: শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িত রেজিষ্ট্রার, প্রক্টর ও এডভাইজারের পদত্যাগ ও বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) মানববন্ধন করেছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)-এর বিজনেস স্টাডিস পরিবার। একই দাবিতে ১৫ নভেম্বর থেকে মাথায় কাফনের কাপড় বেধে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রেখেছে লাঞ্ছিত শিক্ষকরা। এমন ঘটনায় ছাত্রলীগ দু:খ প্রকাশ করে লাঞ্ছিত শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করেছে। লাঞ্ছিত শিক্ষকদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সোমবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রেখেছে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম। একই সাথে ফোরামের শিক্ষকবৃন্দ যৌন নির্যাতনকারী শিক্ষক ড. রমজানের শাস্তির দাবিতে ১৮-তম দিনেও প্রতিদিন ঘন্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচী পালন করে আসছে। শিক্ষক লাঞ্ছনা ও মহিলা শিক্ষকদের শ্লীলতাহানির অভিযোগে ৬ জনকে আসামী করে কোতয়ালী থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। এদিকে অচলবস্থার কারণে আগামী ২৪ নভেম্বর কর্মকর্তা ও ১ ডিসেম্বর প্রভাষক পদের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, সকাল ১১ টার শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন করে বিজনেজ স্টাডিস পরিবার। এ সময় শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানায়। এদিকে বেলা ১২টার দিকে ছাত্রলীগ একটি বিক্ষোভ মিছিল করে লাঞ্ছিত শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে। এ ঘটনায় নেতাকর্মীরা শিক্ষকদের সাথে দু:খপ্রকাশ করে বলেন, অবিলম্বে ক্যাম্পাসের পরিবেশ স্বাভাাবিক করা দরকার। প্রশাসন দিনের পর দিন কালক্ষেপণ করেই চলেছে। নির্বাচনের আগে এহেন পরিবেশ ছাত্রলীগ কোনোভাবেই মেনে নেবে না। এদিকে চলমান কর্মসূচীতে মুখ থুবড়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। ৬১ জন লাঞ্ছিত ও প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের শতাধিক শিক্ষক ক্লাস-পরীক্ষা থেকে বিরত থাকায় বিজ্ঞান, মাৎস্যবিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজনেস স্টাডিস অনুষদের মোট ১৫ টি বিভাগে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এছাড়াও ৪টি অনুষদের প্রায় ৭০ শতাংশ ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এছাড়াও প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম যৌন নির্যাতনের বিচার সহ ৬ দফা দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে ১৮-তম দিনের মত অবস্থান কর্মসূচী পালন করে আসছে। অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তারা বলেন, এখন পর্যন্ত প্রশাসন আন্দোলনরত শিক্ষকদের সাথে কথা বলেনি। যদি আলোচনায় না আসে তবে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে শিক্ষকরা।
রেজিষ্ট্রার স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে জানানো হয়, আগামী ২৪ নভেম্বর কর্মকর্তা ও ১ ডিসেম্বর প্রভাষক পদের লিখিত নিয়োগ পরীক্ষা অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী পরীক্ষার তারিখ জানানো হবে।
কোতয়ালী থানা সুত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাঞ্ছিত ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় একটি মামলা (নং ৯৩) দায়ের করা হয়েছে। মামলায় বাদী হাসান জামিল ৬ জনকে আসামী করেন। মামলায় প্রধান আসামী প্রক্টর অধ্যাপক খালেদ হোসেন এবং অন্যান্যের মধ্যে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম রবি, মোর্শেদুল আলম রনি, মুহিউদ্দিন নূর ও স্বপন কুমার বর্মণসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৪ নভেম্বর বিকেল ৪ টার দিকে সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত ৬১ জন সহকারী অধ্যাপক পূর্বসুচী অনুযায়ী কোষাধক্ষ্য অধ্যাপক বিধান চন্দ্র হালদারের সাথে আলোচনায় বসেন। আলোচনা সভায় শিক্ষকরা নিয়ম অনুযায়ী প্রদেয় বর্ধিত বেতন কেনো বন্ধ করা হচ্ছে তা কোষাধক্ষ্যের কাছে জানতে চান। কোষাধক্ষ্য এক পর্যায়ে বলে বর্ধিত বেতন প্রদান করা সম্ভব নয়। আর প্রশাসন সেটিও আপনাদের দিতে রাজি নয়। আপনাদের যা করার আছে করেন। এমতাবস্থায় কোষাধক্ষ্য উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং কয়েকজন শিক্ষককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে থাকেন। ঠিক ওই সময় প্রক্টর অধ্যাপক খালেদ হোসেন, ডিন অধ্যাপক ফাহিমা খানম, রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক শফিউল আলম, এডভাইজার অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম উপস্থিত হন। তারা সঙ্গে করে একদল উৎশৃংখল ছাত্র সশন্ত্র অবস্থায় নিয়ে আসেন। কোষাধক্ষ্য ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে প্রক্টর ও এডভাইজারের প্রত্যক্ষ মদদে উৎশৃংখল শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের উপর হামলা চালায় ও কয়েকজন মহিলা শিক্ষকের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। উল্লেখ্য, শান্তিপূর্ণভাবে এ বিষয়ে ইতোপূর্বে শিক্ষকরা কোষাধক্ষ্যের সাথে কয়েকটি আলোচনা সভাও করেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় লাঞ্ছিত শিক্ষক হাফিজ আল হোসেন ও ফাতিহা ফারহানা লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে ঘটনাটি অবহিত করেন এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্রক্টর, এডভাইজার ও রেজিষ্ট্রারের পদত্যাগ দাবি করেন।
এ ঘটনায় রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক শফিউল আলম বলেন, ইউজিসি থেকে চিঠি পেয়েছি। বর্ধিত বেতন দেয়া সম্ভব নয়। আর হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কেউ আহত হয়নি। তাই পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। শিক্ষার্থীদের আমরা নিয়ে আসিনি। তারা কিভাবে এসেছে আমি জানি না।
এ ব্যাপারে লাঞ্ছিত শিক্ষক কৃষ্ণ চন্দ্র রায় বলেন, বর্ধিত বেতন শুধুমাত্র আমরা পাবো না তা হয় না। যারা এ সুবিধা পাচ্ছে তাদেরও বেতন কর্তন করতে হবে। নতুবা বৈষম্য দূর হবে না।