দিনাজপুর প্রতিনিধি: শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িত রেজিষ্ট্রার, প্রক্টর ও এডভাইজারের পদত্যাগ ও বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে মাথায় কাফনের কাপড় বেধে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রেখেছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)-এর লাঞ্ছিত ৬১ জন শিক্ষক। একই দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রেখেছে প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের (আওয়ামীপন্থী) শতাধিক শিক্ষকও। লাঞ্ছিত শিক্ষকদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান পরিবারের দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। অন্যদিকে একই ঘটনায় মামলার প্রতিবাদে পাল্টা মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে ছাত্রলীগের একাংশ। লাগাতার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও মানববন্ধনে আজও ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি ৮ অনুষদের প্রায় ৩৫ টি বিভাগে।
কোতয়ালী থানা সুত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাঞ্ছিত ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় একটি মামলা (নং ৯৩) দায়ের করেছে হাসান জামিল। এতে প্রধান আসামী অধ্যাপক খালেদ হোসেন এবং অন্যান্যের মধ্যে অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম রবি, মোর্শেদুল আলম রনি, মুহিউদ্দিন নূর ও স্বপন কুমার বর্মণসহ অজ্ঞাত কয়েক জনকে আসামী করা হয়। এ মামলার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের একাংশ (তারেক ও পলাশ গ্রুপ) সকাল ১১ টার দিকে মানবন্ধন করেছে। মানববন্ধনে বক্তারা ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রনি ব্যতিত মামলার অন্যান্য আসামীরা কেউই ছাত্রলীগের কোনো পদে নেই। মামলার ঘটনায় লাঞ্ছিত শিক্ষকরা জানান, দোষীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জণ অব্যাহত থাকবে। দাবি আদায় না হলে শীঘ্রই আরোও কঠিন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বেলা ১২ টার দিকে দুই-শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন করে মাৎস্যবিজ্ঞান পরিবার। এ সময় শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানায়। এদিকে চলমান কর্মসূচীতে মুখ থুবড়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। ৬১ জন লাঞ্ছিত ও প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের শতাধিক শিক্ষক ক্লাস-পরীক্ষা থেকে বিরত থাকায় ৮ অনুষদের প্রায় ৩৫টি বিভাগে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এছাড়াও প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম যৌন নির্যাতনের বিচার সহ ৬ দফা দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে ২১-তম দিনের মত অবস্থান কর্মসূচী পালন করে আসছে। অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তারা বলেন, এখন পর্যন্ত প্রশাসন আন্দোলনরত শিক্ষকদের সাথে কথা বলেনি। দাবি আদায় না হলে বৃহত্তর আন্দোলন।
জানা যায়, গত ১৪ নভেম্বর বিকেল ৪ টার দিকে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৬১ জন সহকারী অধ্যাপক পূর্বসুচী অনুযায়ী কোষাধক্ষ্য অধ্যাপক বিধান চন্দ্র হালদারের সাথে আলোচনায় বসেন। আলোচনা সভায় শিক্ষকরা নিয়ম অনুযায়ী প্রদেয় বর্ধিত বেতন কেন বন্ধ করা হচ্ছে তা কোষাধক্ষ্যের কাছে জানতে চান। কোষাধক্ষ্য এক পর্যায়ে বলে বর্ধিত বেতন প্রদান করা সম্ভব নয়। আর প্রশাসন সেটিও আপনাদের দিতে রাজি নয়। আপনাদের যা করার আছে করেন। এমতাবস্থায় কোষাধক্ষ্য উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং কয়েকজন শিক্ষককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে থাকনে। ঠিক ওই সময় প্রক্টর অধ্যাপক খালেদ হোসেন, ডিন অধ্যাপক ফাহিমা খানম, রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক শফিউল আলম, এডভাইজার অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম উপস্থিত হন। তারা সঙ্গে করে একদল ছাত্র সশন্ত্র অবস্থায় নিয়ে আসেন। কোষাধক্ষ্য ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে প্রক্টর ও এডভাইজারের প্রত্যক্ষ মদদে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের উপর হামলা চালায় ও কয়েকজন মহিলা শিক্ষকের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে বলে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা দাবী করেছেন।
এ ঘটনায় রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক শফিউল আলম বলেন, ইউজিসি থেকে চিঠি পেয়েছি। বর্ধিত বেতন দেয়া সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে লাঞ্ছিত শিক্ষক কৃষ্ণ চন্দ্র রায় বলেন, বর্ধিত বেতন শুধুামাত্র আমরা পাবো না তা হয় না। যারা এ সুবিধা পাচ্ছে তাদেরও বেতন কর্তন করতে হবে। নতুবা বৈষম্য দূর হবে না।
উল্লেখ্য, বিষয়ে ইতোপূর্বে শিক্ষকরা কোষাধক্ষ্যের সাথে কয়েকটি আলোচনা সভাও করেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় লাঞ্ছিত শিক্ষক হাফিজ আল হোসেন ও ফাতিহা ফারহানা লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে ঘটনাটি অবহিত করেন এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্রক্টর, এডভাইজার ও রেজিষ্ট্রারের পদত্যাগ দাবি করেন।