প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ সাধারণ শিক্ষার্থীদের, পুলিশে উদ্ধার উপাচার্য, ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত
দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) -এর রেজিষ্ট্রার লাঞ্ছনার অভিযোগে তদন্ত কমিটি ছাড়াই দুইজন শিক্ষককে বরখাস্তের প্রতিবাদে রোববার (২ ডিসেম্বর) প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পাল্টা-পাল্টি মানববন্ধন। পুলিশি সহযোগিতায় উপাচার্য উদ্ধার। ক্যাম্পাস থমথমে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন। ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে প্রচলিত ইনক্রিমেন্ট বহালের দাবিতে ট্রেজারার অধ্যাপক বিধান চন্দ্র হালদারের কক্ষে যায় ৬১ জন শিক্ষক। ট্রেজারার ইনক্রিমেন্টের আলোচনায় ওই ৬১ জনকে দেশদ্রোহী বলে আখ্যা দেন। তখন শিক্ষকরা ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন। অন্যদিকে ৬১ জনের নামে এজাহারকৃত মামলা নিয়েও ট্রেজারারের সাথে বাক-বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে ট্রেজারার মামলা করেননি বলে রেজিষ্ট্রারের উপর দোষারোপ করেন। পরে ট্রেজারার সকল শিক্ষকদের নিয়ে রেজিষ্ট্রার শফিউল আলমের কক্ষে যান। রেজিষ্ট্রারের সাথে মামলা নিয়ে কথা চলাকালে দু-পক্ষের মধ্যেই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। শিক্ষকরা রেজিষ্ট্রারকে মিথ্যা এজাহার তুলে নিতে বলেন। রেজিষ্ট্রার এজাহার তুলবে না বলে চেয়ার থেকে উঠে যায়। যেতে যেতে সকল শিক্ষককে রাজাকার বলে গালি গালাজ করতে থাকে। এতে শিক্ষকরা উত্তেজিত হয়ে রেজিষ্ট্রারকে অফিস থেকে বের হয়ে যেতে বলে।
উল্লেখ্য, ওই ৬১ জন শিক্ষক গত ১৪ নভেম্বর ট্রেজারার, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা ও ছাত্র কর্তৃক লাঞ্ছিত হয়। মহিলা শিক্ষকদের শ্লীলতাহানীও করার অভিযোগ রয়েছে। যেটির কোনো বিচার অদ্যাবধি হয়নি বলে জানান ওই ৬১ জন শিক্ষক।
রেজিষ্ট্রারকে লাঞ্ছনার ঘটনা ও শিক্ষকদের বরখাস্তের দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি করে ছাত্রলীগের একাংশ। এতে ছাত্রলীগের তারেক ও পলাশ নেতৃত্ব দেন। এ কর্মসূচীতে একাত্মতা ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক সংগঠনের ৩০ জন শিক্ষক। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চালু করার দাবিতে প্রায় সহস্রাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
শিক্ষার্থীরা বক্তব্যে বলেন, ১৪ নভেম্বর থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। আমরা সেশন জটে পড়ছি। ৬১ জন শিক্ষকের লাঞ্ছনার বিচার ও ইনক্রিমেন্ট বহাল করে শীঘ্রই ক্লাস-পরীক্ষা চালু করতে হবে। অন্যথায় সাধারণ শির্ক্ষাথীরা কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হবে। এদিকে যৌন নির্যাতনসহ ৬ দফা দাবিতে প্রতিদিন ঘন্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচী পালন করে আসছে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম। একই সাথে ৬১ জন লাঞ্ছিত শিক্ষকদের লাঞ্ছনার বিচারের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচীও অব্যাহত রেখেছে ফোরামের শতাধিক শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, রেজিষ্ট্রারকে লাঞ্ছিতের অভিযোগে সহকারী অধ্যাপক মহসিন আলী ও আবু বক্কর সিদ্দিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ও শৃংখলার পরিপন্থী নিয়ম-২০০৪ (৩সি) এ চাকুরী থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আরোও বলা হয়, শিক্ষকদ্বয় রেজিষ্ট্রারকে অপহরণের নিমিত্তে টেনে হিচড়ে সিড়ির দিকে নিয়ে যায়। এ সময় আপনারা রেজিষ্ট্রারকে কিল ঘুষি মারেন।
জানা যায়, শিক্ষকদের বরখাস্তের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে। এতে উপাচার্য, রেজিষ্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টাসহ দেড় শতাধিক শিক্ষক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
অবরোধকারী শিক্ষার্থী শফিক, সেলিম, মনি জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় এক বছর আগেই যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে। এখনও বিচার হয়নি। এছাড়াও ৬১ জন শিক্ষক লাঞ্ছনা ও মহিলা শিক্ষক শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। সেটিরও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলশ্রুতিতে ক্যাম্পাসে সকল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় ২ দিন আগে ঘটে যাওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি ছাড়াই দুইজন শিক্ষককে বরখাস্ত করেছে। প্রশাসনের এমন হটকারী সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় চরম সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে দুপুর থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত উপাচার্য কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।
বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক মহসিন আলী ও আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ন্যায দাবিতে আলোচনায় ১৪ নভেম্বর প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা ও ছাত্র দিয়ে আমাদের ৬১ জনকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। মহিলা শিক্ষকদের শ্লীলতাহানিও করেছে। কিন্তু অদ্যবধি কোনো বিচার করেনি প্রশাসন। উল্টো ট্রেজারার ও রেজিষ্ট্রার আমাদেরকে দেশদ্রোহী ও রাজাকার বলে আখ্যা দিচ্ছেন। দেশদ্রোহী ও রাজাকার বলার প্রতিবাদে আমরা রেজিষ্ট্রারকে অফিস থেকে বের হয়ে যেতে বলি এবং সে বেরও হয়ে যায়। রেজিষ্ট্রারের সাথে একসঙ্গে বের হওয়ায় তদন্ত কমিটি ছাড়াই আমাদের দোষী সাব্যস্ত করে বরখাস্ত করেছে।
রেজিষ্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, আসন্ন (১০-১৩ ডিসেম্বর) ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের সাম্প্রতিক সময়ের আইন শৃংখলার চরম অবনতি হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানা যায়।
কোতয়ালী থানা সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে রেজিষ্ট্রার শফিউল আলমকে তদন্ত কমিঠি ছাড়াই বরখাস্তের প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উপাচার্য অধ্যাপক মু. আবুল কাসেমের ক্ষমতাবলে তা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক মু. আবুল কাসেমকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।