দিনাজপুর প্রতিনিধি: চলমান অস্থিরতায় দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার রিজেন্ট বোর্ড বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় আগাম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় এবং হঠাৎ করেই বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনা।গত ১৪ নভেম্বর পদোন্নতি পাওয়া ৬১ শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪টি বিভাগের অধিকাংশের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলন করে যাচ্ছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত এবং অভিযোগ প্রমাণের আগে দুই শিক্ষককে সাময়িক বহিস্কারের প্রতিবাদে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন শিক্ষকরা।
এমন পরিস্থিতিতেএ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সফিউল আলম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকার লিয়াজোঁ কার্যালয়ে রিজেন্ট বোর্ডের এক সভায় বিশ্ববিদ্যালয় আগাম ছুটির সিদ্ধান্ত হয়। তিনি জানান, আগামী ২১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন ছুটি ছিল। এই ছুটি বাড়িয়ে ৪ ডিসেম্বর (আজ) থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ নভেম্বর বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে লাঞ্ছিত হন নতুন পদোন্নতি পাওয়া ৬১ জন সহকারী অধ্যাপক। এ সময় নারী শিক্ষকদের শ্নীলতাহানিরও অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদে গত ১৫ নভেম্বর থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে হাবিপ্রবির প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামও। আড়াইশ’ শিক্ষকের মধ্যে দেড় শতাধিক শিক্ষক ক্লাস বর্জন কর্মসূচি শু
রু করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এই আন্দোলনের মধ্যেই গত ২৯ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সফিউল আলমকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগে গত রোববার সহকারী অধ্যাপক মহসিন আলী ও আবু বক্কর সিদ্দিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আবার এ দুই শিক্ষকের বরখাস্তের প্রতিবাদে ওই দিন দুপুর ১টা থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কক্ষ অবরোধ করে।
এমন পরিস্থিতিতে উত্তপ্ত হয়ে পড়া ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। পরে বিকেল সাড়ে ৪টায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরুজুল ইসলাম ফিরোজ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়ে এসে উপাচার্যকে তার কক্ষ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
এদিকে, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই দুই শিক্ষককে বহিস্কারের ঘটনায় সোমবার ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য পদোন্নতি পাওয়া শিক্ষকসহ প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের শিক্ষকরা।
এ সময় তারা নারী নির্যাতনকারী শিক্ষকদের বহিস্কার, ৬১ শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অচলাবস্থার মধ্যে আগামী ১০ থেকে ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। হাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সফিউল আলম জানান, পরবর্তী সময়ে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ জানানো হবে। দুই দফায় ১৬ জন কর্মকর্তা পদে এবং ২৮ জন প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হলেও শিক্ষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তা স্থগিত করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১৮ দিন ধরে অব্যাহত আন্দোলনে অধিকাংশ ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা দ্রুত এর সমাধানে সব পক্ষকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক মহসিন আলী ও আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ন্যায্য দাবিতে আলোচনার জন্য গেলে প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা ও কিছু ছাত্রকে দিয়ে আমাদের ৬১ জন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা হয়। নারী শিক্ষকদের শ্নীলতাহানিও করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এর বিচার করেনি প্রশাসন। উল্টো ট্রেজারার ও রেজিস্ট্রার আমাদের দেশদ্রোহী ও রাজাকার বলে আখ্যা দিচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সফিকুল আলম বলেন, শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য আন্দোলনরত শিক্ষকদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অচিরেই সংকট কেটে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।