নিজস্ব সংবাদাতা: সভ্যতা মাটির সবচেয়ে বড় শত্রু। সভ্যতার কারণে মাটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বুধবার (৫ ডিসেম্বর) বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর ফার্মগেটের আ.কা.মু গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটরিয়ামে সেমিনার ও সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. নাসিরুজ্জামান তিনি এ মন্তব্য করেন।
ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, মাটি দুষন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে ৬ কোটি লোক উদ্বাস্তু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইটভাটা, রাস্তা ও ভবন নির্মাণ এবং পুকুর খননসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজে ক্রমাগত মাটির ওপরের স্তর নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া ভূগর্ভস্থ পানি উঠানোর কারণে সমুদ্রের নোনা পানি ওপরে উঠে আসছে, বাড়ছে লবণাক্ততা। এ কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ ফসল ফলাতে পারছে না। বাড়ছে সিডর, আইলার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়। আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাসের মতো গাছের পরিবর্তে সরকারি রাস্তার পাশে পরিবেশ বান্ধব গাছ লাগাতে হবে। জুম চাষ ও মাটি কাটার কারণে পাহাড়ে ভূমি ধ্বসে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
মৃত্তিকা বিজ্ঞানীদের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, পাহাড়, উপকূল, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা নদীর তলদেশসহ দেশের কোন কোন অঞ্চলের মাটির কি কি সমস্যা রয়েছে, তা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। মাটিকে প্লাস্টিকের হাত থেকেও রক্ষা করতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে চরাঞ্চলে জেগে ওঠা নতুন জমিকে কাজে লাগাতে হবে। ইতিমধ্যে জেগে ওঠা এ জমিকে কাজে লাগিয়ে অনেক কৃষক তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে। জৈব কৃষির বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সম্ভাবনাময় ধৈঞ্চা ও মান্দার গাছ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়াও পরিবেশবান্ধব ভার্মিকম্পোষ্টের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষির উৎপাদন খরচ কমাতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন ও প্র্যাকটিক্যাল এ্যাকশন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান। আয়োজক প্রতিষ্ঠান কৃষি মন্ত্রণালয়ের মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক বিধান কুমার ভান্ডারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞান ভিত্তিক তিনটি পেপার উপস্থাপন করেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বাংলাদেশ মৃত্তিকা বিজ্ঞান সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক, এফএও এর সিনিয়র কনসালটেন্ট মো. মাহবুবুর রহমান ও আইডবিøউএম এর স্পেশালিষ্ট মো. জাহিদ হাসান সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, এ দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ড. মো. আবদুল বারী। অনুষ্ঠানে বিনার সাবেক মহাপরিচালক ড. এম ইদ্রিস আলীকে বিজ্ঞানী হিসেবে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এম জহির উদ্দীনকে শিক্ষক হিসেবে ও মর্জিনা বেগমকে কৃষক হিসেবে ২০১৮ সালের সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড তুলে দেয়া হয়। এছাড়া সয়েল অলিম্পিয়াডে বিজয়ী ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কৃত করা হয়।
মৃত্তিকা দূষণ করি অনুশাসন এ প্রতিপাদ্যে সকালে এক বর্নাঢ্য র্যালি জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা হতে শুরু হয়ে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট চত্বরে শেষ হয়।