বুধবার , অক্টোবর ৩০ ২০২৪

মেথির যত উপকারিতা

বিজ্ঞানী ড. কে.এম খালেকুজ্জামান: মেথি তিতা ধরনের স্বাদযুক্ত মসলা। এতে রয়েছে রক্তের চিনির মাত্রা কমানোর বিস্ময়কর শক্তি ও তারুণ্য ধরে রাখার বিস্ময়কর এক ক্ষমতা। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে দূষিত পরিবেশ এবং ভেজাল খাবারের রাজ্যে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব, যদি প্রতিদিন মেথি খাওয়া যায়! কারণ এই প্রাকৃতিক উপাদানটির মধ্যে রয়েছে ৩৫.৫ ক্যালরি, ৬.৪ গ্রাম প্রোটিন, ০.৭ গ্রাম ফ্যাট, ২.৭ গ্রাম ফাইবার এবং ৩.৭ মিলিগ্রাম আয়রন। এছাড়াও রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ম্যাগনেসিয়্যাম, ফসফরাস এবং ভিটামিন বি৬ -এর মতো পুষ্টিকর উপাদান, যা নানা দিক দিয়ে শরীরে গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। যারা নিয়মিত মেথি খান, তাদের বুড়ো হয়ে যাওয়ার গতিটা অত্যন্ত কম। রাতে চা চামচের এক চামচ মেথি পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি এবং ঐ ভিজানো মেথি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খেলে শরীরের কৃমিসহ বিভিন্ন ধরণের রোগ-জীবাণু মরে যায়। এছাড়া রক্তের চিনির মাত্রা, ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা মারাত্মকভাবে কমে যায়। ডায়াবেটিসের রোগী থেকে শুরু করে হৃদরোগের রোগী পর্যন্ত সবাইকে তাদের খাবারে মেথি রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। গবেষণালব্ধ ফলাফল মোতাবেক প্রতিদিন নিয়মিত মেথি খাওয়ার উপকারিতা নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

  • মেথি তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। বার্ধক্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে তারুণ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করে।
  • মেথিতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি, নিয়াসিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ত্বককে রাখে সতেজ ও টানটান ভাব।
  • রূপচর্চাতেও মেথিকে শীর্ষে রাখা যায়। প্রতিদিন মেথি খেলে, মেথি চেহারায় বলিরেখা বা বয়সের ছাপ হতে দেয় না, ফলে চেহারা সুন্দর থাকে।
  • রক্তে চিনির মাত্রা কমানোর অসাধারণ এক শক্তি থাকায় ডায়াবেটিস রোগের জন্য খুব ভালো এই মেথি। ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না।
  • নিয়মিত মেথি খেলে রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে আর্টারি ব্লক হয়ে গিয়ে হার্টের কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।  সেই সাথে হার্টের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।  ফলে যে কোনো ধরনের করোনারি আর্টারি ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও একেবারে কমে যায়।
  • মেথিতে আছে প্রাকৃতিক তন্তু, যা ওজন ও স্থুলতা কমাতে বেশ কার্যকর। যাঁরা ওজন ও স্থুলতা কমাতে চান, তাঁরা নিয়মিত মেথি খাবেন।
  • মেথি বীজের পুষ্টিকর উপাদান এত মাত্রায় হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় যে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমার সুযোগই পায় না।
  • নিয়মিত মেথি খেলে সর্দিকাশি হতে পারবে না।
  • চুল পড়া ঠেকাতে মেথি খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • পেট জ্বালা, বদ হজম ও গ্যাস-অম্বলের মতো রোগও সারায়। কনস্টিপেশন এবং স্টমাক ইনফ্লেমেশনের মতো সমস্যাও কমতে শুরু করে।
  • মেথি বীজে ফাইবার, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, যা শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করে দেয়। মেথি শরীরে প্রবেশ করার পর মুখের আলসার, পেপটিক আলসার, ফোঁড়া, ব্রঙ্কাইটিস, টিউবারকুলোসিস, সর্দি-কাশি এবং ক্যান্সারের মতো রোগও হতে দেয় না এবং হয়ে থাকলে সেগুলো ভালো করে।
  • মেথি কিডনির কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি করে।
  • মেথী আমাশয়, গ্যাষ্ট্রিক ও শূল রোগে উপকারি।
  • নিয়মিত মেথি খেলে পেটে কৃমি হতে পারে না।
  • মেথি আয়রনসমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তস্বল্পতা, অর্থাৎ অ্যানিমিয়া রোগের পথ্য হিসেবে কাজ করতে পারে।
  • মাতৃদুগ্ধ বাড়াতে ওষুধের বিকল্প হলো মেথি। সদ্য মা হওয়া নারীর জন্য মেথি উপকারী।
  • ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে মেথি, বিশেষ করে স্তন ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য মেথি কার্যকর।
  • নিয়মিত মেথি খাওয়া শুরু করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে, ছোট-বড় কোনো রোগই হতে পারে না। সেই সাথে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
  • মেথী সকল বাত ব্যথায় বিশেষ কার্যকর।
  • মেথী পিত্তজনিত রোগ নিরাময় করে।
  • মেনোপজ হলে নারীর শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে। হরমোনের এই পরিবর্তনের কালে মেথি ভালো একটি পথ্য।
  • মেথির রসে ‘সাপোনিস’ বা ‘ডাইওসজেনিন’ নামে এক ধরনের যৌগ পদার্থ আছে, যা মানবদেহের হরমোন স্তর বা এর পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • মেথি পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম।
  • পুরুষদের যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে মেথি এক মহৌষধ! প্রতিদিন নিয়মিত মেথি খেলে পুরুষের যৌনক্ষমতা পর্যাপ্ত পরিমানে বেড়ে যায়।

লেখক: উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব), মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া।

This post has already been read 6753 times!

Check Also

বছরব্যাপী ফলন ও লাভ মিলবে যে জাতের লেবু চাষে!

নাজমুন নাহার: ভিটামিন-সি বা আ্যসকরবিক এসিড শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ভিটামিন-সি মানবদেহে উৎপন্ন হয়না । …