দিনাজপুর (হাবিপ্রবি): বেতন বৈষম্য, শিক্ষক লাঞ্ছনা ও মহিলা শিক্ষক শ্লীলতাহানির জেরে অশান্ত হয়ে উঠেছিলো দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। বাধ্য হয়ে এক মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন।
রেজিষ্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, ৩ নভেম্বর জরুরী রিজেন্ট বোর্ডের সভায় ৪ নভেম্বর ২০১৮ থেকে ৩ জানুয়ারী ২০১৯ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন ছুটি পুন:বিন্যাস করা হয়। ছুটি ঘোষনায় ৪ নভেম্বর থেকে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশও দেয়া হয়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অশান্ত ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হলেও আবাসিক হলগুলো এখনও খোলা রয়েছে। প্রতক্ষ্যদর্শী সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব, শেখ রাসেল, আইভি রহমান, কবি সুফিয়া কামাল, জিয়াউর রহমান, তাজউদ্দিন আহমেদ ও আন্তর্জাতিক হল নামে ৮ টি আবাসিক হল আছে। দু-একটি ছাত্রী হল ব্যতীত প্রায় সব হলগুলো এখনও সিলগালা করা হয়নি।
এমনকি শিক্ষার্থীরা এখনও হলেই বসবাস করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলে বসবাসরত কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা হলেই আছি সত্য। কিন্তু প্রশাসন ছোট বিষয় সামাল না দিতে পেরে ক্যাম্পাস বন্ধ করবে তা তো আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা হলেই থাকব। প্রশাসনের যা করার আছে করতে পারে। এ বিষয়ে হল ছেড়ে ক্যাম্পাসের বাহিরে অবস্থান করা শিক্ষার্থী ফয়সাল, কবির, সুফিয়ান, ইমরান জানান, হলে অনেক শিক্ষার্থী অবস্থান করছে শুনে খুব খারাপ লাগলো। আমরা এক মাসের জন্য তিনগুন বেশি ভাড়া দিয়ে শহরের ছাত্রাবাসে যাযাবর জীবন যাপন করছি। আর প্রশাসন হল সিলগালাও করে নাই। নিয়ম শুধু শিক্ষার্থীদের জন্যই। প্রশাসন যে অনিয়ম করছে তা কি কেউ দেখার নেই।
উল্লেখ্য, ১৪ নভেম্বর সদ্য প্রমোশনপ্রাপ্ত ৬১ জন সহকারী অধ্যাপক বেতন বৈষম্যের আলোচনায় প্রশাসন কর্তৃক মারধরের ঘটনা ঘটে। এমনকি মহিলা শিক্ষককে শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটে। মারধরের ঘটনায় মাথায় কাফনের কাপড় বেধে টানা ক্লাশ-পরীক্ষা বজর্ন করে প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা ও রেজিষ্ট্রারের বিচারের দাবিতে আন্দোলনে ছিলো ওই ৬১ জন শিক্ষক। গত ২৯ নভেম্বর রেজিষ্ট্রারের সাথে আলোচনায় বসলে রেজিষ্ট্রার তাদেরকে রাজাকার ও দেশদ্রোহী বলায় রেজিষ্ট্রারকে অফিস থেকে বের করে দেয় আন্দোলনরত শিক্ষকরা। রেজিষ্ট্রারকে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেয়ার ঘটনাকে লাঞ্ছনার অভিযোগে তদন্ত কমিটি ছাড়াই উপাচার্যের ক্ষমতাবলে ২ জন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রশাসন।
এতে আন্দোলন আরোও জোরালো হয়। শিক্ষক বরখাস্তের প্রতিবাদে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পুলিশ প্রশাসনের হেফাজতে উপাচার্য অবমুক্ত হয়ে পরদিন জরুরী রিজেন্ট বোর্ড সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করে। চলমান আন্দোলনের কোনো সমাধান ছাড়াই আগামী ৪ জানুয়ারী চালু হবে বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সমস্যা সমাধান ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও চালু হবে কি ক্লাশ-পরীক্ষা, এ প্রশ্ন এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে ।
আবাসিক হল সিলগালা করা হয়নি বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে প্রক্টরকে কয়েকবার ফোন করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।