এগ্রিনিউজ২৪.কম ডেস্ক: এইতো এক যুগ আগেও বাংলাদেশে ফল ছিল আমদানি নির্ভর। ফল বলতে এদেশের মানুষ আম, জাম, কাঠাল, পেয়ারা, লিচু ইত্যাদি মৌসুমি ফলকেই বুঝতো। মৌসুম শেষ হলেই এসব ফলের দেখা মিলতো না। তাছাড়া মৌসুমের সময়টাও ছিল খুব স্বল্প। কিন্তু এক যুগ পর বর্তমানে বাংলাদেশে আর সে অবস্থানটি নেই। আগে যেগুলো ছিল কেবল মৌসুমী ফল সেগুলোর বেশ কয়েকটি মোটামুটি এখন বারো মাসই পাওয়া যায়।
বিগত এক যুগে বাংলাদেশে ফল উৎপাদনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। আয়তনে ছোট হলেও বাংলাদেশ এখন ফল উৎপাদনের হার বিবেচনায় বিশ্বে শীর্ষস্থান দখল করেছে। অন্যদিকে মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বাংলাদশের অবস্থান দশন। দেশে প্রতি বছর ফল চাষের জমি বাড়ছে ১০ শতাংশ হারে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, দেড় যুগ ধরে বাংলাদেশে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বাড়ছে। ২০ বছর আগে আম আর কাঁঠাল ছিল এই দেশের প্রধান ফল। আগে হতো ৫৬ প্রজাতির ফল চাষ। বর্তমানে বাংলাদেশে ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে। আরো ১২ প্রজাতির ফল বাংলাদেশের চাষ উপযোগী করার জন্য গবেষণা চলছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাঠাল উৎপাদনকারী দেশ, আমে সপ্তম ও পেয়ারা উৎপাদনে দখল করেছে অষ্টম স্থান।
গত ১০ বছরে দেশে আমের উৎপাদন দ্বিগুণ, পেয়ারা দ্বিগুণের বেশি, পেঁপে আড়াই গুণ এবং লিচু উৎপাদন ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আম, কাঁঠালের বাইরে মৌসুমি ফলের মধ্যে আছে জাম, লিচু, কুল, কামরাঙা, পেঁপে, বেল, লেবু, আনারস, আতা, সফেদা, লটকন, তরমুজ, ফুটি ইত্যাদি।
শুধু উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু ফল খাওয়ার পরিমাণও গত এক যুগে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০০৬ সালে দেশের মানুষ দৈনিক যেখানে ৫৫ গ্রাম ফল খেত, চলতি বছর সেটির পরিমাণ দাড়িয়েছে ৮৫ গ্রাম। একসময় দেশে কাঁঠাল ও আম ছিল প্রধান ফল। এখন অন্তত ২২ প্রজাতির ফল বাংলাদেশের মানুষ নিয়মিত খায়।
চার-পাঁচ বছরের মধ্যে নতুন ফল ড্রাগন ও অ্যাভোকাডো এবং দেশি ফল বাতাবিলেবু, তরমুজ, খরমুজ, লটকন, আমড়া ও আমলকীর মতো পুষ্টিকর ফলের উৎপাদনও ব্যাপক হারে বাড়ছে। এসব ফলের প্রায় পুরোটাই দেশে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশে চলতি বছর ১ কোটি ২১ লাখ টন ফল উৎপাদিত হয়েছে। ১০ বছর আগের তুলনায় উৎপাদন ১৮ লাখ টন বেড়েছে। চাষের জমির দিক থেকে সবচেয়ে বেশি জমিতে চাষ হচ্ছে কলা।
নতুন করে চাষ শুরু হওয়া ফলের মধ্যে ড্রাগন ফলের ২৩টি আলাদা প্রজাতি, খেজুরের ১৬টি, নারকেলের ২টি প্রজাতি, কাঁঠালের ১টি, আমের ৩টি নতুন প্রজাতি চাষের প্রাথমিক সফলতা পাওয়া গেছে। আগামী দু–এক বছরের মধ্যে তা কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এছাড়াও বিশ্বের অন্যতম পুষ্টিকর ফল ড্রাগন, অ্যাভোকাডো, রাম্বুটান, স্ট্রবেরি, ডুমুর, মাল্টা, বেল, নারকেল, জাম্বুরা, রংগন, সূর্য ডিম ও খেজুরের বেশ কয়েকটি জাতের চাষও দেশে দ্রুত বাড়ছে।