মো. খোরশেদ আলম (জুয়েল): ঢাকায় বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশনভুক্ত ১০০জন খামারি এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রিডিং বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকগণের সাথে শুক্রবার (১৮ জানুয়ারি) ডুয়েল পারপাস (দুধ ও মাংস) উৎপাদনকারী জাত (হলিস্টিন ফ্রিসিয়ান, গিরোল্যান্ডো, শাহীওয়াল, জার্সি) উদ্ভাবনের লক্ষ্যে কাজ শুরুর চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন বলেন, আজ দেশের ডেইরি শিল্পে জাত উন্নয়নের নতুন ইতিহাসের শুভ সূচনা হলো। বাংলাদেশ ডেইরি সেক্টরকে সফল করতে হলে এসোসিয়েশনকে প্রান্তি পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, বিদেশ থেকে গুড়া দুধ আমদানি বন্ধ করতে হলে আমাদের চাহিদা ও যোগানের পরিস্কার তথ্য থাকতে হবে। আমাদের খামারিদের গরুর রেকর্ডি সিস্টেম সুন্দর করে রাখতে হবে। ব্রিডিং লাইন টেকসই করতে হলে এটি তাদের করতেই হবে। এ সময় তিনি জার্মানীর উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে প্রতিটা গরুর জন্য পাসপোর্ট করা আছে। আমাদের ৩০-৪০ লিটার জাতের গাভী উন্নয়ন করা হয়েছে ঠিকই তবে সেগুলো টেকসই হয়নি। তাই জাত উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের এসব বিষয়ে সজাগ হতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) মো. মাহবুবুর রহমান খামারি ও দেশের শীর্ষস্থানীয় কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের মাঝে গবেষণামূলক প্রজেক্টকে দেশের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে চুক্তি স্বাক্ষরকারী গবেষক দলের প্রধান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল ব্রিডিং অ্যান্ড জেনেটিক বিভাগের অধ্যাপক একে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, দেশের খামারি ভাইদের জন্য উপযুক্ত ও আবহাওয়া উপযোগী মাংস ও দুধ উৎপাদনকারী গরুর জাত উদ্ভাবনের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। খামারিদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে ও সরকারি সহযোগিতা পেলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের ডেইরি সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত আমেরিকান গবেষক ও অধ্যাপক ড. আজিজ সিদ্দিকী বলেন, ডেইরি খামারি তথা দেশের প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের জন্য গরুর জাত উন্নয়নের বিকল্প নেই। খামারিদের মাঝে বর্তমান একাত্মতা চলমান থাকলে দ্রুতই দেশের প্রতিটি অঞ্চলের খামারিদে মাঝে আধুনিক ফার্মিং জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল ব্রিডিং অ্যান্ড জেনেটিক বিভাগের অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন বলেন, বর্তমানে দেশের ডেইরি শিল্পে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে। এখন আমাদের দুধের বৈচিত্র্যপূর্ণ বাজারজাতকরণ পদ্ধতিতে যেতে হবে। যারা দুধে ল্যাকটোজ পছন্দ করেননা তাদের জন্য এক রকম, আবার ডায়াবেটিস রোগীদের উপযোগি দুধ বাজারজাত করার কৌশল খুজতে হবে। শুধু বিদেশ থেকে উন্নত জাত আমদানির দিকে না ঝুঁকে আমাদের নিজেদেরই আবহাওয়া উপযোগ উন্নত জাত উদ্ভাবনের দিকে নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, আমাদের দেশে গো-খাদ্যের উচ্চমূ্ল্য, মাংস ও দুধ উৎপাদনের জন্য ভালো জাতের গরু নেই, এমতাবস্থায় আজকের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে খামারিদের ভাগ্য পরিবর্তনের এক উজ্জ্বল পদক্ষেপ।
তিনি আরো বলেন, আমাদের শুধু দুধ উৎপাদন করলেই চলবেনা, সেগুলো বিক্রিরও ব্যবস্থা করতে হবে। তাই দুধের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সবাইকে আরো বেশি সচেতন করে তুলতে হবে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. এমরান বলেন, এক সময় দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গরু পালনকে লজ্জাজনকভাবে দেখতো। কিন্তু আজকে সে অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। এক্ষেত্রে আমরা সফল।
তিনি বলেন, কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষকরা নানাভাবে পিছিয়ে পড়ছে, যে কারণে গ্রামীণ অর্থনীতি ও দেশের সামগ্রিক আর্থ সামাজিক অবস্থানে এর বিরূপ প্রভাব লক্ষণীয়। আজকের জাত উন্নয়ন গবেষণা প্রকল্প আশা করি খামারি, রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মানকে আরো সুদৃঢ় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গবেষণা প্রকল্পের আহ্ববায়ক ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি মালিক মো. ওমর বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো স্বল্প খাবার ও অল্প শ্রমিকে অধিক দুধ ও মাংস উৎপাদন করে থাকে শুধুমাত্র তাদের আবহাওয়া উপযোগি উন্নত জাতের গরু পালন করার মাধ্যমে। আজকের স্বাক্ষরিত চুক্তি আশা করি আমাদের একদিন সেদিকেই নিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মুনির হোসেন, প্রফেসর ড. শামসুল আলম ভূঁইয়া, প্রফেসর ড. আনিসুর রহমান, সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ এবং খামারিদের পক্ষে গবেষণা প্রকল্পের আহ্ববায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দ এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দ।