ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ব ৯টি পাটকলে কাঁচা পাট সংকটে মিলগুলোতে উৎপাদন ঘাটতি চরমে। মূলত অর্থ সংকটের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল চাহিদা অনুযায়ী কাঁচাপাট ক্রয় করতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মিলে কাঁচাপাট সরবরাহকারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া থাকায় পাট দিতে পারছেন না পাট ব্যাবসায়ীরা। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলো কাঁচাপাট সংকটে পড়ে। মিলের পাট গুদামে পর্যাপ্ত পাট না থাকায় বাজেট উৎপাদন দিতে ব্যর্থ হচ্ছে মিলগুলো। ইতিমধ্যে কাঁচা পাটের অভাবে আটরা এলাকার আলিম জুট মিলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। পাট মজুদ না থাকায় মিলগুলোতে অধিকাংশ তাঁত বন্ধ রয়েছে এবং উৎপাদন কমে গেছে। ফলে বেকার হচ্ছে বিপুল শ্রমিক ও তাদের পরিবার। এ অঞ্চলের মিলগুলোতে প্রায় ১৭ হাজার মেট্রিকটন পাটজাতপণ্য অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না হওয়ায় শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরী পরিশোধ করতে পারছে না। সপ্তাহের মজুরী সপ্তাহে না পেয়ে শ্রমিক কর্মচারীরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে পড়ছেন বিপাকে। বছরের শুরুতে শ্রমিকদের মজুরী বকেয়া থাকায় স্কুল কলেজে তাদের ছেলে মেয়েদের সময়মত ভর্তি করতে না পারায় তাদের লেখা পড়ায় বিঘ্ন ঘটছে। ইতোমধ্যে শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা স্থানীয় সংসদ ও শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানকে নিয়ে নবাগত পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এম.পি, -এর সাথে শ্রমিক কর্মচারীদের বর্তমান সমস্যা নিরসনে তার হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।
বিজেএমসির সূত্রমতে, বর্তমান বিশ্ববাজারে পাটের বাজার মন্দা হওয়ার কারণে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ ও বকেয়া মজুরীসহ ৫ দফা দাবিতে এ অঞ্চলের অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। বিজেএমসি’র নিয়ন্ত্রনাধীন খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯টি পাটকলে কাঁচা পাটের সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। বর্তমানে মিলগুলোতে ক্রিসেন্ট জুটমিলে ৩দিন, দৌলতপুরে ৭দিন, ইস্টার্ণ ১১দিন, জেজেআই ৭দিন, খালিশপুর ১০দিন, প্লাটিনামে ৫দিন, স্টারে ৮ দিন ও কার্পেটিং জুট মিলে ১৭ দিনের পাট মজুদ রয়েছে।
অপরদিকে মিলগুলোতে বাজেট তাঁত সংখ্যা থাকা সত্বেও অধিকাংশ তাঁত বন্ধ রয়েছে। এ অঞ্চলের বর্তমানে চালু থাকা ৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিলে বাজেট অনুযায়ী তাঁত চালু থাকার কথা ৩ হাজার ৮৭৫টি। কিন্তু চালু রয়েছে ২ হাজার ৩৭৩টি তাঁত। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট জুট মিলে ১০৬১ তাঁত চালু থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৫২৬টি, দৌলতপুর জুট মিলে ১৮৫ তাঁত চালু থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৬৩টি, ইস্টার্ণ জুট মিলে ২৩৩ তাঁত চালু থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ১১৮টি, জেজেআই জুট মিলে ৩৮২ তাঁত চালু থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ২৩৪টি, খালিশপুর জুট মিলে ৬২০টি তাঁত চালু থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৪১৫টি, প্লাটিনাম জুট মিলে ৭৭৯টি তাঁত চালু থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৫২৫টি, স্টার জুট মিলে ৫৫৫টি তাঁত চালু থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৪৪০টি ও কার্পেটিং জুট মিলে ৬০টি তাঁত চালু থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৫২টি। ফলে এ অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর পাটজাত পণ্য উৎপাদন কমে এসেছে। অপরদিকে বর্তমানে পাটকলগুলোতে ১৭ হাজার ৬৫১ মেট্রিকটন হেশিয়ান, স্যাকিং, সিবিসি ও ইয়ার্ণ পাটজাত পণ্য মজুদ রয়েছে। মিলগুলোর পণ্য বিক্রি না করতে পারলে এবং অর্থসংকটে পাট ক্রয় করতে না পারলে মিল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের সভাপতি ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএর সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেন জানান, আমাদের খুলনাঞ্চলের মিলগুলোতে পাটক্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্ধ না দেয়ায় কাঁচা পাট সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে মিলগুলোর অধিকাংশ তাঁত বন্ধ রয়েছে। এর ফলে মিলের কাংক্ষিত উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। মিলের সাইরেন বাজলে শ্রমিকরা মিলে গেলেও কাজ করতে পারছে না। বদলী শ্রমিকদের কাজে লাগানো হচ্ছে না। ফলে অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। পাট সংকট করে মিলগুলো ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ এবং পাটপণ্যের দেশীয় বাজার সুরক্ষা ও সম্প্রসারণ করার জন্য প্রণীত আইন ২০০২ ও ম্যান্ডেটরী প্যাকেজিং এ্যাক্ট ২০১০ বাস্তবায়ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্ববান জানান।
এ বিষয়ে বিজেমমসি’র খুলনা জোনের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী জানান, খুলনা-যশোর অঞ্চলের মিলগুলোর উৎপাদিত পাটজাতপণ্য সিরিয়া, ইরাক, ইরান, সুদান ও মিশরসহ বিশ্বের প্রায় ৮/১০টি দেশের যায়। মিলগুলোতে বর্তমানে পাটের সংকট রয়েছে।