ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসক ও জনবল সংকটে কাংক্ষিত সেবায় দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গত তিন দশকেও পূর্ণতা পায়নি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ১৯৮৯ সালে নগরীর ছোট বয়রায় ৭৫ শয্যা বিশিষ্ট খুলনা হাসপাতাল নামে এর যাত্রা শুরু। পর্যায়ক্রমে হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। পরবর্তীতে এই হাসপাতালকে ঘিরে প্রতিষ্ঠা করা হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ। সেই থেকে ২৫০ শয্যার এই খুলনা হাসপাতালটি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বলে পরিচিতি লাভ করে। জন্ম থেকেই হাসপাতালটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালটির সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হলেও কার্যত: কোনো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হয়নি। হাসপাতালটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও অদ্যাবধি এর জন্য কোনো জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। ২৫০ শয্যার জন্য নির্ধারিত জনবল দিয়েই চলছে হাজারো রোগীর চিকিৎসা সেবা। প্রয়োজনীয় জনবল অবকাঠামোর এক চতুর্থাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়েই চলছে এ হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রম।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে আটশ/নয়শ রোগী ভর্তি থাকে। আউটডোরে আসে প্রতিদিন ৩/৪শ রোগী। এতো রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ২৫০ শয্যার অনুকূলে থাকা চিকিৎসক-সেবিকাসহ অন্যান্যরা। এখানে ৫০০ বেডের রোগীদের জন্য খাবার, বিছানাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা থাকলেও ৫০০ শয্যার অতিরিক্ত ভর্তি রোগীরা বেড পায় না। বারান্দার মেঝেতে বিছানা নিয়ে তাদের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের সমস্যা সমাধান ও প্রয়োজনীয় জনবল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার আবেদন জানালেও অদ্যাবধি এর কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে খুলনা জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে এই হাসপাতালে আসা গরীব ও সাধারণ পরিবারের শত শত রোগী কাংক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ২০১৭ সালে হাসপাতালটির পূর্ণাঙ্গ জনবল চাহিদা দেয়া হয় সবমিলিয়ে এক হাজার ৬৫০ জন। এর মধ্যে আগের রয়েছে ৬শ’র মতো। পরে এক হাজার একশ’ জনবলের বিপরীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩৫৪ জনের অনুমোদন দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। পরে মন্ত্রণালয় থেকে হাসপাতালটির সর্বশেষ অবস্থা জানতে চেয়ে এক দাপ্তরিক চিঠি দেয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই পত্রের জবাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত এর কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ৫০০ শয্যার খুমেক হাসপাতালে রোগীদের সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে এক হাজার ৬৫০ জন জনবল প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালে আছে ২৫০ শয্যার ৬১৩ জন। অথচ প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা ও চিকিৎসক প্রয়োজন ৭১২ জন। দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা প্রয়োজন ২৫৬ জন। তৃতীয় শ্রেণীর ১৫২ জন প্রয়োজন। চতুর্থ শ্রেণীর ৪২৪ জন কর্মচারী প্রয়োজন হলেও অর্ধেকও নেই। অনেক সময় দেখা যায় রোষ্টার অনুযায়ী চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের দায়িত্বরত স্থানে থাকেন না । তারা প্রাইভেট চেম্বারে রোগি দেখতে ব্যস্ত সময় কাটান এবং টেকনিয়ানরা স্থানীয় ডায়গনষ্টিক সেন্টারের সাথে যোগ সাজছে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি নষ্টের অযুহাত দেখিয়ে আগত রোগি ও তাদের স্বজনদের খুমেক হাসপাতালের সামনে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে কমিশন বানিজ্যে লিপ্ত রয়েছে। বিগত সময়ে হাসপাতালের খাবার মান খুব নিন্ম মানের ছিলো। দুদকের অব্যাহত অভিযানে লরে চরে বসেছে খাবার সরবরাহকারী ও হাসপাতালের বাবুর্চী। যেখানে দেড় কেজি ডাল, ২০ গ্রাম পিচ মাংস দিয়ে পুরো হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগিদের খাবার পরিবেশন করা হতো সেখানে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের হস্থক্ষেপে এখন সিডিউল অনুযায়ী ২৭ কেজি ডাল ৯০ গ্রাম মাংসসহ যাবতীয় খাদ্য পরিবেশন করা হয় বলে এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ টি এম মোর্শেদ ।
চিকিৎসাধীন গরীব রোগীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। অনেক রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে অপর্যাপ্ত চিকিৎসক-সেবীকাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তথাপিও বিভিন্ন সময়ে রোগীর স্বজনেরা উত্তেজিত হয়ে সেবাদানকারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন, কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও হচ্ছেন ।
খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ টি এম মোর্শেদ বলেন, হাসপাতালটি জনবল সংকটে আছে দীর্ঘদিন। স্বল্প জনবল দিয়ে অধিক মানুষকে সেবা দিতে হচ্ছে। অনেকে বারান্দায় সেবা নিচ্ছে। তারপরও আমরা শতভাগ চেষ্টা করে যাচ্ছি রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য। তিনি আরো বলেন, চিকিৎসা সেবা সঠিক ভাবে প্রদানের জন্য আরো ৪২০ মঞ্জুরী পদ বাড়ানো দরকার। প্রতিদিন ২৫০ বেডের জনবল দিয়ে একহাজার রোগীর সেবা দিয়ে যাচ্ছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। আর কোনো রোগীকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না চিকিৎসা সেবা না দিয়ে। তবে হয়তো কিছুটা বিলম্ব হয় জনবল সংকটের কারণে।