ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো আরও একটি কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়েছে। সুন্দরবনের সুতারখালী নদীতে মাছ ধরার সময় জালে এটি ধরা পড়ে। শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) এটিকে হস্তান্তর করা হয়েছে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে। দু’দিন পূর্বে আরো একটি স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো কচ্ছপটি উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, মংলার মিঠাখালীর পুটিমারী খালে বোবা এক জেলে মাছ ধরছিলো। এ সময় ওই জেলের জালে বেশ বড় আকৃতির এ কচ্ছপটি (বাটাগুর বাস্কা) ধরা পড়ে। বর্তমানে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা কচ্ছপ দু’টিকে চিকিৎসা দিচ্ছেন পূর্ব সুন্দরবনের বাটাগুর বাস্কা প্রজেক্ট’র স্টেশন ম্যানেজার আ. রব। কচ্ছপ দু’টি শারীরিক সুস্থতা ফিরে পেলে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক আবারও ছাড়া হবে সমুদ্র মোহনায়।
এর আগে বুধবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে কুলসুম নামে এক মহিলা সুন্দরবনের নলিয়ান রেঞ্জর কালাবগী স্টেশনের আওতাধীন সুতারখালী নদীতে মাছ ধরছিলো। এক পর্যায়ে তার জালে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো কচ্ছপটি ধরা পড়লে সে পার্শ্ববর্তী বন বিভাগের কালাবগী স্টেশনে সেটিকে হস্তান্তর করে। পরে পূর্ব সুন্দরবনের বাটাগুর বাস্কা প্রজেক্ট’র স্টেশন ম্যানেজার আ. রব কাছে এ খবর দেওয়া হলে তিনি শুক্রবার দুপুরে কচ্ছপটিকে উদ্ধার করে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে এনে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন। এটির বয়স আনুমানিক ৪০ বছর ও ওজন সোয়া ১০ কেজি।
এদিকে সোমবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে মংলার মিঠাখালীর পুটিমারী খালে বোবা এক জেলে মাছ ধরছিলো। এ সময় ওই জেলের জালে বেশ বড় আকৃতির এ কচ্ছপটি (বাটাগুর বাস্কা) ধরা পড়ে। পরে বিক্রির জন্য বাজারে নিলে বন বিভাগ খবর পেয়ে এটিকে উদ্ধার করে। সুন্দরবনের বাটাগুর বাস্কা প্রজেক্ট’র স্টেশন ম্যানেজার আ. রব জানান, স্যাটেলাইট জিপিএস ট্রাকিং ট্রান্সমিটার সিস্টেম সংযোজিত এ বাটাগুর বাস্কা ছাড়ার মূল উদ্দেশ ছিলো এর বিচরণক্ষেত্র, স্বভাব, পানির ওপরে রোদ পোহানো ও পানির নিচের অবস্থান নির্ণয়সহ প্রজননক্ষেত্র সম্পর্কে গবেষণার তথ্য সংগ্রহ। আর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা জু, টিএসএ আমেরিকা ও বাংলাদেশ বনবিভাগ। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে এ প্রজেক্টের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এছাড়া স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়ে থাকে দেশ-বিদেশের কন্ট্রোল রুম থেকেই।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ আ. রব আরও বলেন, গত ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো বিলুপ্তপ্রায় এ প্রজাতির ৫টি বাটাগুর কচ্ছপ সুন্দরবনের কালিরচরের সমুদ্র মোহনায় ছাড়া হয়েছিলো। এ প্রজেক্টের মূল উদ্দেশ হলো বিরল প্রজাতির বাটাগুর বাস্কা কচ্ছপের প্রজনন বৃদ্ধির মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার করা। পরে সুন্দরবনের নিলকমল ও তালতলী এলাকায় দুটি কচ্ছপ আগেই মারা গেছে। বাকি ৩টির মধ্যে সোমবার ও বুধবার উদ্ধার হওয়া কচ্ছপ দু’টির শারীরিক সুস্থতা ফিরে পেলে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক আবারও ছাড়া হবে সমুদ্র মোহনায়।