ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): সুন্দরবন সংলগ্ন পশুর চ্যানেল ও সুন্দরবন সংলগ্ন শাখা নদ-নদীতে একের পর এক নৌযান ডুবির ঘটনায় ফলে উপকুলীয় অঞ্চলে পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ডুবেছে কয়লা, ক্লিংকার, সার, জ্বালানী তেলসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী কোর্গো, কোস্টার ও ট্যাংকার জাহাজ। এতে নদীর নাব্যতা সংকটসহ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র ও প্রাণিকুলের দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষয়ক্ষতির আশংকা ব্যক্ত করেছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
মূলত ফিটনেসবিহীন নৌযান ব্যবহার ও অতিরিক্ত বোঝাইসহ নৌযান মাস্টার এবং ড্রাইভারদের অদক্ষতার কারণে দুর্ঘটনার মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মংলা বন্দরের সুদীর্ঘ পশুর চ্যানেলের দুই পাশে রয়েছে বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। আর এই চ্যানেলের হাড়বাড়িয়া এলাকায় গভীরতা বেশি থাকায় বন্দরে আগত বেশির ভাগ বিদেশি জাহাজ অবস্থান নিয়ে পণ্য বোঝাই-খালাস কাজ করে থাকে। আর নৌযান ডুবির মতো দুর্ঘটনাও সবচেয়ে বেশি ঘটে হাড়বাড়িয়াসহ সংলগ্ন চ্যানেলে। সর্বশেষ গভীর রাতে বন্দর চ্যানেলের ডুবো জাহাজ সংলগ্ন বানীশান্তা এলাকায় ক্লিংকারবাহী এমভি জুবায়ের নামক নৌযান ডুবির ঘটনা ঘটছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিলে বন্দর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়া এলাকায় কয়লা ভর্তি জাহাজ এমভি বিলাস, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি মাসে ক্লিংকার নিয়ে এমভি শোভা, ১২ জানুয়ারি কয়লা নিয়ে এমভি আইচগাতী, ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর কয়লা নিয়ে এমভি জিয়া-রাজ, ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ফার্নেস অয়েল নিয়ে ওটি সাউদার্ন স্টার-০৭, ১২ সেপ্টেম্বর ক্লিংকার নিয়ে এমভি হাজেরা-০২ ও ৩০ সেপ্টেম্বর ক্লিংকার নিয়ে এমভি নয়ন শ্রী-০৩ পশুর নদীর সুন্দরবন এলাকায় এসব নৌযান ডুবির ঘটনা ঘটে।একের পর এক নৌযান ডুবির বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, এ সকল নৌযান দুর্ঘটনায় সাময়িকভাবে দৃশ্যমান কোনো ক্ষয়ক্ষতি চোখে না পড়লেও এর রয়েছে দীর্ঘ মেয়াদে পরিবেশগত বিপর্যয়। এর ক্ষতিকারক প্রভাব তিল তিল করে বুঝতে পারবে উপকূলীর অঞ্চলের বাসিন্দারা। এর ক্ষতি ইতোমধ্যে বনে জলজ, প্রাণীজ ও সুন্দরবনে জীববৈচিত্রে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
এদিকে পশুর চ্যানেল ও সুন্দরবনের অভ্যন্তরে নৌযান ডুবির ঘটনার সাথে কতিপয় অসাধু নৌযান মালিকদের ইন্স্যুরেন্সের সুযোগ-সুবিধা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বন্দর ব্যবহারকারী এইচএম দুলাল ও আহসান হাবিব হাসান। তারা বলছেন, ফিটনেসবিহীন নৌযান ব্যবহার ও অতিরিক্ত বোঝাই ও নৌ-দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তবে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মো. বাহারুল ইসলাম বাহারের দাবি চ্যানেলে নাব্যতা কম থাকা ও পর্যাপ্ত মার্কিং বয়া না থাকায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।
নৌপথের নাব্যতা বৃদ্ধি ও বয়া-বাতি স্থাপনের দাবি জানায় নৌযান মালকি-শ্রমিকরা।বিগত সময়ে সুন্দরবনে নৌযান ডুবির ঘটনায় গঠিত বনবিভাগের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উঠে আসে ফিটনেসবিহীন নৌযান ব্যবহার ও নৌযানগুলোর মাস্টার-ড্রাইভারের অদক্ষতার বিষয়টি। পূর্ব সুন্দরবনের চাদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. শাহিন কবির বলেন, ‘২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল বন্দর চ্যানেলের সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়ায় কয়লা নিয়ে এম,ভি বিলাস জাহাজ ডুবির ঘটনার তদন্তে বেরিয়ে আসে ওই নৌযানটির ফিটনেস সার্টিফিকেট না থাকা এবং চালকদের অদক্ষতাই দুর্ঘটনার মূল কারণ।