নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের মৎস্যখাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মোট ১ কোটি ৯০ লক্ষ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বিগত ১০ বছরে গড়বার্ষিক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৬ লক্ষ জনের। জিডিপিতে মৎস্যখাতের অবদান ৩.৫৭ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপিতে এ খাতের অবদান ২৫.৩০ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মৎস্য-উৎপাদন হয়েছে ৪২ লাখ ৭৭ হাজার মে.টন, ইলিশ উৎপাদন ৫ লাখ ১৭ হাজার মে.টন। বিগত ১০ বছরে মৎস্যখাতে গড়প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.৫ শতাংশ। একক প্রজাতি হিসেবে মাছের অবদান সর্বোচ্চ, যা মোট উৎপাদনের প্রায় ১২%। জাতীয় জিডিপিতে এর অবদান ১% এর বেশি।
রবিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মৎস্য ও পাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু প্রথমবার মৎস্য অধিদফতরের বিভিন্ন কার্যক্রমের পরিদর্শনে গেলে অধিদফতরের তাঁকে এসব তথ্য জানানো হয়। মৎস্য অধিদফতরের ডিজি আবু সাইদ মো. রাশেদুল হকের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছউল আলম মণ্ডল, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) সুবোল দাস মনি, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সালেহ আহমেদ প্রমুখ। এর আগে প্রতিমন্ত্রী মৎস্য অধিদফতরের প্রধানফটকে বঙ্গবন্ধুর একটি ‘মুরাল’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মৎস্য চাষযোগ্য অভ্যন্তরীণ মুক্তজলাশয় যেমন নদী-নালা, সুন্দরবন, বিল, কাপ্তাইলেকসহ প্লাবনভূমি ৩৯ লক্ষ ৮ হাজার হেক্টর এবং অভ্যন্তরীণ বদ্ধজলাশয় যেমন পুকুর, বাঁওড়, মৌসুমি চাষাধীন জলাশয় ও চিংড়িখামার ৭ লাখ ৯২ হাজার হেক্টর মিলে দেশে সর্বমোট জলাশয় রয়েছে ৪৭ লাখ হেক্টর। আমাদের দেশে ১২টি বিদেশি মাছসহ প্রায় ৩৫টি মৎস্য প্রজাতির মাছের চাষ হয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ বদ্ধজলাশয়ে মৎস্যচাষের সম্প্রসারণের জন্য ৪৩২টি মৎস্য অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিগত নয়বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৩,০৯২ হেক্টর জলাশয় পুনঃখনন করে সংস্কার ও উন্নয়নের পাশাপাশি ২০১৭-১৮ সালে ৩০৯ হেক্টর জলাশয় সংস্কার ও উন্নয়ন করার ফলে বার্ষিক গড়ে প্রায় ৩০০০ মে.টন অতিরিক্ত মাছের উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ২০০৯-১০ থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত বিগত ৯ বছরে নির্দিষ্ট সময়ে মাছধরা থেকে বিরত ২ লক্ষ ৪৮ হাজার জেলে পরিবারের ভিজিএফ সহায়তা দেয়া হয়েছে ২,৬৮,৮১৪.৭২ মে. টন। মাসে ৪০ কেজি হারে এ খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়।
‘বাংলাদেশ ইলিশ’ শীর্ষক ভৌগলিক সনদ (জিআই সনদ) প্রাপ্তিতে নিজস্ব পরিচয়ে বিশ্ববাজারে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশের ইলিশ। ৭০০০ বর্গকিলোমিটার প্রধান প্রজননএলাকায় ৬টি ইলিশ অভয়াশ্রম ইয়প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ২ লক্ষ ৭ হাজার চিংড়িঘেরও রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গোপসাগরে ১,১৮,৮১৩ বর্গকিমি এলাকায় মৎস্য আহরণে আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৬ সালে আরভি মীন সন্ধানী নামে একটি গবেষণা জরিপ জাহাজ কাজ শুরু করে এ পর্যন্ত ২১টি সার্ভে ক্রুজ-পরিচালনার মাধ্যমে মাছের ৪৩০টি প্রজাতি চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০ মে-২৩ জুলাই পর্যন্ত সমুদ্রে ৬৫ দিন মৎস্য-আহরণ নিষিদ্ধ করায় মাছের উৎপাদনবৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০০ সালে একটি মেরিন রিজার্ভ ঘোষণা করা হয়েছে এবং হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ এলাকায় এমপিএ ঘোষণার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই জরিপ সম্পন্ন হয়েছে।
দেশে ১০৪টি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা বিদ্যমান। মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামে তিনটি বিশ্বমানের এ্যাক্রিডিটেড ল্যাবরেটরি পরিচালনা করা হচ্ছে। ২০১৭-১৮ সালে ৬৮,৯৩৫ মেট্রিক টন রপ্তানির মাধ্যমে আয় হয়েছে ৪,৩১০ কোটি টাকা। দেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য হচ্ছে চিংড়ি (হিমায়িত, কুকড ও বরফায়িত), মাছ (হিমায়িত ও বরফায়িত), কুচিয়া/ইল (জীবিত),কাঁকড়া (জীবিত ও হিমায়িত), শুটকী ও লবণাক্ত শুটকী,হাঙ্গরের পাখনা ও মাছের আঁইশ। মাছ বিশ্বের ৫৬টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। সর্বাধিক রপ্তানিকৃত ১০টি দেশ হলো নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, জার্মানি, ইউকে, চীন, ভারত, ফ্রান্স, আমেরিকা, জাপান ও রাশিয়া। মাছ ও চিংড়ির পণ্যে রেসিডিউ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে ইইউ মিশন-এর সুপারিশে ইইউভুক্ত দেশে বাংলাদেশের মৎস্যপণ্য রপ্তানিতে টেস্ট সার্টিফিকেট জমাদানের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করা হয়েছে, এদেশের জন্য গর্বের।