বিজ্ঞানী ড. কে.এম. খালেকুজ্জামান
পাউডারি মিলডিও (Powdery mildew) রোগ
রোগের কারণ : এরাইসিপি স্পেসিস (Erysiphe polygoni) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার : শীতের সময় হঠাৎ মেঘ করে ঠান্ডা কমে গেলে এবং শুস্ক আবহাওয়া বা ৫০-৬০% বাতাসের আর্দ্রতায় এ রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। গাছ বেশি ঘন হলে এবং খরা অবস্থায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।
রোগের লক্ষণ
˙পাউডারি মিলডিও পুদিনার একটি মারাত্মক রোগ।
˙পাতার উপর ধূসর বা সাদা পাউডারের মত দাগ পড়ে।
˙আক্রান্ত পাতার সবুজ রং নষ্ট হয়ে যায় এবং শুকিয়ে যায়।
˙পাতার উপর পাউডার দ্বার আবৃত থাকায় সালোকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে গাছ ছোট আকারের হয়।
˙রোগ মারাত্মক আকারে হলে পাতা ঝরে পড়ে।
˙রোগের প্রকোপ বেশি হলে সমস্ত গাছ (শাখা ও কাণ্ড) আক্রান্ত হয় এবং মারা যায়।
রোগের প্রতিকার
˙ফসল সংগ্রহের পর অবশিষ্টাংশ এবং আবর্জনা পুড়ে ফেলতে হবে।
˙রোগাক্রান্ত গাছ সমূহ তুলে ধ্বংস করতে হবে।
˙দ্রুত বেগে পানি স্প্রে করলে রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যায়।
˙রোগ দেখা মাত্রই সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন-থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউ বা কুমুলাস ডিএফ) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে অথবা ট্রাই ব্যাসিক কপার সালফেট গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-কুপ্রোক্স্যাট ৩৪৫ এসসি) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
পাতা পোড়া/ঝলসানো (Leaf blight) রোগ
রোগের কারণ: সেফালোস্পোরিয়াম স্পেসিস ((Cephalosporium spp.)) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার: জীবাণু গাছের পরিত্যাক্ত অংশে বেঁচে থাকে।
রোগের লক্ষণ:
˙বছরের যে কোন সময় এ রোগ দেখা দিতে পারে।
˙রোগ দেখা দিলে সমস্ত পাতা গাঢ় খয়েরী বা কালো হয়ে ঝরে পড়ে।
রোগের প্রতিকার
˙রোগাক্রান্ত পাতা পুড়ে ফেলতে হবে।
˙পাতা পোড়া/ঝলসানো রোগ দেখা দিলে ডাইফেনোকোনাজল+ এ্যাজোক্সিস্ট্রবিন গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-এমিস্টার টপ ৩২৫ এসসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে অথবা মেটিরাম ৫৫% + পাইরাক্লস্ট্রবিন ৫% গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-ক্যাবরিওটপ ৬০ ডব্লিউপি) ৩ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।
মরিচা রোগ (Rust) রোগ
রোগের কারণ: পাকসিনিয়া মেনথি (Puccinia menthae) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার: ফসলের পরিত্যক্ত অংশে ছত্রাক বেঁচে থাকতে পারে। বিকল্প পোষক হতে বায়ূর মাধ্যমে এ রোগ সুস্থ গাছে ছড়ায় এবং আর্দ্র্র্র আবহাওয়ায় বিস্তার লাভ করে। বয়স্ক গাছে রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।
রোগের লক্ষণ:
˙পাতার নীচে ছোট, ময়লাযুক্ত, উজ্জ¦ল কমলা বা হলুদ বা বাদামী ফোস্কার মত দাগ দেখা যায়।
˙ নতুন ডগা ও কান্ডেও দাগ পড়ে এবং ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে।
˙পাতার অনেক বড় অংশের টিস্যু মরে যায়
˙পাতা ঝরে পরতে পারে।
রোগের প্রতিকার
˙ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, আগাছা এবং আবর্জনা পুড়ে ফেলতে হবে।
˙জমিতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক ও বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
˙জমিতে শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।
˙কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন + থিরাম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি ) প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে তাতে পুদিনা গাছের কাটিং শোধন করে জমিতে লাগাতে হবে।
˙হেক্সাকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-কনটাফ ৫ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি অথবা প্রোপিকোনাজোল গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-টিল্ট ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।
লেখক: উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব), মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া।