শম্পা কে নাহার (চট্টগ্রাম): সমাজকে পরিশুব্ধ করতে হলে ব্যবসায়ী, ভোক্তা, প্রশাসন, সাংবাদিক, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ সকলকে একসাথে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ও প্রতিবাদী হতে হবে। কারণ প্রতিনিয়তই পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয় দিন-দুপরে খুন, কিন্তু ঐ এলাকার কোনো লোকজন আক্রান্ত ব্যক্তিতে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি ঝামেলার ভয়ে। যদি লোকজন এগিয়ে আসতো তাহলে হয়তো হত্যাকান্ডটি ঘটতো না। কিন্তু যারা ঝটকি ঝামেলার ভয়ে এগিয়ে আসলো না, তারা বুঝতে পারছে না এই ঘটনার পরবর্তী টার্গেট তারা হতে পারে। নিরাপদ খাদ্যের বেলায়ও একই ঘটনা, যিনি ফল ব্যবসায়ী তিনি মনে করছেন তার বাড়ীতে ফরমালিন বা ক্যামিকেল মুক্ত ফল খাওয়বেন, সে কারণে ক্যামিকেল দেয়া ফলগুলি নেন নি, কিন্তু তিনি যাবার সময় মাংস, তরকারীসহ অন্যান্য খাবার যা নিয়ে যাচ্ছেন, তা কিন্তু ক্যামিকেল মুক্ত নয়। একই ভাবে সকলেই বৃত্ত আকারে নকল-খাদ্যে ভেজালের গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ। যার কারণে পুরো দেশ নকল-ভেজালে ভরে গেছে। ইউকেএইড, বৃটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় প্রকাশ প্রকল্পের কারিগরী সহযোগিতায় পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্প, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম আয়োজনে বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) নগরীর ৭ নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কার্যালয়ে নিরাপদ খাদ্য আইন, ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ও মাছ ও প্রাণী খাদ্য আইন নিয়ে মাল্টি-স্টেকহোল্ডারস কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ভোক্তা হিসাবে আমরা সব সময় অন্যের উপর দোষ চাপাই আর অসহায়ত্বের কথা বলি। নিজেরা কোনো ধরনের উদ্যোগ না নিয়ে খাবারের সব দায়িত্ব হোটেল-রেস্তোরার উপর ছেড়ে দিয়েছি। তাই এখন এই বৃত্ত ভাঙ্গতে হবে, খাদ্য ভেজাল, নকল রোধে সকলকে যার যার অবস্থান থেকে সোচ্চার হতে হবে। ভোক্তাদের সচেতনতা না বাড়ালে ভেজাল খাবারের লাগাম টেনে ধরা যাবে না। হোটেল-রেস্তোরা, প্যাকেট জাতীয় যে কোনো খাবার হোক না কেন, কেনার আগেই খোঁজ নিয়ে কিনতে হবে এবং এ ধরনের কোনো ভেজালের খবর পেলেই প্রশাসনকে অবহিত করার জন্য সক্রিয় হতে হবে। একাজে ক্যাব ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জনগনকে আরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নিতে পারেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোবারক আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাসানুজ্জমান ও পাঁচলাইশ থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিয়া খাতুন। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের ৭নং ওয়ার্ডের মেডিকেল অফিসার ডা. শবনম মুশতারী, শ্যামলী আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস, বার্মা কলোনীর সভাপতি আবদুল আলিম, মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী কান্তা ইসলাম মিনু, যুব মহিলালীগ নেত্রী শামসুন্নাহার, মুহাম্মদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নাহিদা ইসলাম সোনিয়া, ক্যাব চাঁন্দগাও -এর সহ-সভাপতি সেলিম সাজ্জাদ, ক্যাব মাঠ সমন্বয়কারী জগদিশ চন্দ্র রয় প্রমুখ আলোচনায় অংশ দেন।
ক্যাব ডিপিও জহুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মশালায় মৎস্য ও প্রাণি খাদ্য আইন নিয়ে মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনা করেন পাঁচলাইশ থানা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিয়া খাতুন ও ভোক্তা অধিকার আইন নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাসানুজ্জমান।
কর্মশালায় মৎস্য ও প্রাণী খাদ্য আইন ও ভোক্তা সংরক্ষণ আইন নিয়ে উপস্থাপনায় বলা হয় ভোক্তা পর্যায়ে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অনিরাপদ খাদ্যের যোগান সরবরাহে লাগান টেনে ধরা সম্ভব না হলে খাদ্যে ভেজালের দৌরাত্ত্য বন্ধ করা যাবে না। আইন ও সরকারী বিধি বিধানগুলি সম্পর্কে জনগণের সুস্পষ্ট ধারনা না থাকায় সরকারি কাঠামোগত সুবিধা থাকা সত্তে¡ও জনগণ কাংখিত সুবিধা পাচ্ছে না। খাদ্যে ভেজাল, নকল ও মজুতদারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। একই সাথে পুষ্টিকর খাবার বিষয়ে পরিস্কার ধারনা থাকতে হবে। শুধু মাংস খেলে পুষ্টির চাহিদা মিটবে না। একজন শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির সকল উপাদানের নিয়মিত যোগান নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে শিশুর শারিরীক ও মানসিক পরিপুর্ণ বৃদ্ধি নিশ্চিত হবে না। কর্মশালায় বলা হয় কৃষকের মাঠ উৎপাদন থেকে পরিবহন, সংরক্ষণ, বিক্রি ও খাবার টেবিলে পরিবেশন পর্যন্ত নিরাপদ খাবার নিশ্চিতে বিধিবিধানগুলি পুরোপুরি অনুসরণ করা না হলে নিরাপদ খাবারও অনিরাপদ হয়ে যেতে পারে। তাই এ বিষয়ে সকল পর্যায়ে সচেতনতা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার আহবান জানানো হয়। একই সাথে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ভোক্তাদের সংগঠন শক্তিশালী করার উপর জোর দেয়া হয়।
কর্মশালায় সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, আবাসিক এলাকা সমিতি, ক্ষুদ্র খামারী, নারী নেত্রী, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ, পোল্ট্রি ফিড মিল, বিক্রেতা, লাইভ বার্ড বিক্রেতা, সাংবাদিক, যুব সংগঠনের ও ক্যাব প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।