শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

একুয়া নেচার : প্রাকৃতিক খাদ্য নির্ভর মাছ চাষ পদ্ধতি

সালাহ উদ্দিন সরকার (তপন):  আমাদের দেশে বদ্ধ জলাশয়ে বা পুকুরে মাছ চাষ একটি সাধারণ বিষয়। গত তিন-চার বছরে এসব মাছের চাষ অনেক বেড়েছে, সঙ্গে বেড়েছে খাবারের দাম ও জমির ইজারা মূল্য। কিন্তু বাজারে এসব মাছের দাম বাড়েনি, বরং কমেছে। এমনকি গত বছর বর্ষা মৌসুমেও মাছের ভালো দাম ছিলনা,যদিও এ সময়টায় নদীনালায় মাছ ধরা কম হয় বলে চাষের মাছের চাহিদা বাড়ে।

গত দুই বছরে কমপক্ষে ২০% মাছচাষি ঝড়ে গেছে। মূল কারণ, মাছের বাজার মূল্য থেকে উৎপাদন খরচ কম। এমতাবস্থায় অনেক চাষি ভাইয়ের অনুরোধে নাম মাত্র খরচে মাছ চাষ নিয়ে কাজ করা শুরু করি। প্রায় দেড় বছর কাজ করে একটি ফর্মুলায় পৌঁছাই যার নাম দেওয়া হয়েছে “একুয়া নেচার”। কার্পজাতীয় মাছ চাষ করতে চাইলে শুধু মাত্র একুয়া নেচার প্রয়োগ করেই মাছ চাষ সম্ভব। ক্ষেত্র বিশেষে বাণিজ্যিক মাছ চাষেও এফসিআর উন্নত করে বা খাদ্য খরচ কমায়। একুয়া নেচার তৈরি ও প্রয়োগ পদ্ধতি নিম্নে দেওয়া হলো-

১০০ শতাংশ পুকুরের জন্য ২টি মিশ্রণ তৈরি করতে নিম্নবর্ণিত সামগ্রী প্রয়োজন:

১. চাউলের কুড়া (অটো রাইস মিলের) – ২৫ কেজি

২. চিটাগুড় – ৫ কেজি

৩. হাঁসের/মুরগীর ডিম – ৪টি

৪. ঈস্ট – ২৫০ গ্রাম

৫.  ডালের বেসন- ২ কেজি

৬. দেশি গরুর তাজা গোবর (১২-১৬ ঘণ্টার মধ্যে) –  ২০ কেজি

৭.  খালের চলমান পরিষ্কার পানি/ বড় পুকুরের পরিষ্কার পানি আনুমানিক ২০০-২৫০ লিটার (যে পুকুরের পানির পিএইচ মান ভালো থাকে, উত্তম পিএইচ মান ৭.৫ – ৮.৫ )

৮. বাঁশ ঝাড়ের গুঁড়া বা বড় কোন গাছের গাছের গুড়া থেকে ৩০০ গ্রাম ফ্রেস তাজা মাটি, যে মাটিতে কখনো বিষ বা রাসায়নিক প্রয়োগ হয়নি গত ৫ বছরে

৯.  ১ টি বালতি

১০.  ২০০- ২৫০ লিটারের পরিমান ১টি ড্রাম

১১.  ৭ – ৮ ফুট লম্বা বাঁশ

প্রথম মিশ্রন: ৩ কেজি চিটা গুড় + ৪ টি হাঁস/মুরগীর ডিম + ১৫০ গ্রাম ঈষ্ট + ২ কেজি ডালের বেসন ১০ লিটার পানির সাথে ভালোভাবে ড্রামে ঢালুন। তারপর আরো ১০০ লিটার পানি ড্রামে দিন+ এরপর ২0 কেজি দেশি গরুর তাজা গোবর পানিতে গুলে ড্রামে ঢালুন + ৩ কেজি চাউলের কুড়া + ৩০০ গ্রাম মাটি ড্রামে ঢালুন এবং ২০০ লিটারের যতটুকু পানি লাগে পানি দিয়ে ভরিয়ে দিন (ড্রামটির আধা ফিট খানিক জায়গা পানি ভরাট না করে খালি রাখুন) এবং একটি বাঁশ দিয়ে ঘড়ির কাটার দিশায় ঘুরিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে দিন। তারপর মোট সুতি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন  গ্রীশ্মকালে ৪৮ ঘণ্টা/ শীতকালে ৭২ ঘণ্টা । প্রতিদিন সকাল সন্ধা ঘড়ির কাঁটার দিশায় ১০ – ১২ বার ঘুরাই ৪৮-৭২ ঘণ্টা পর সূর্যালোকিত দিনে সকাল ১০ – ১১ টার সময় সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিন এভাবে ১০ – ১২ দিন অন্তর অথবা পুকুরের পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা পূর্বক ২ দিন আগেপরে হতে পারে

 বি: দ্র:  ১) খেয়াল রাখতে হবে একুয়া নেচার তৈরি করার সময় সূর্যের আলো বা বৃষ্টির পানি ঢুকতে পারবেনা, তাহলে নষ্ট হয়ে যাবে।

প্রথম মিশ্রণটি প্রয়োগ করার পরেরদিন দ্বিতীয় মিশ্রণটি তৈরি করা শুরু করুন

দ্বিতীয় মিশ্রন : প্রথমে ২ কেজি চিটা গুড় + ১০০ গ্রাম ঈষ্ট ৩ লিটার পানির সাথে ভাল্ভাবে মিশিয়ে ২২ কেজি চাউলের কুড়া উপর ছিটিয়ে দিন। তারপর উত্তমরুপে মিশ্রন করুন এবং ড্রামের মধ্যে ঢুকিয়ে মোট সুতি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন ৪৮ ঘণ্টা। তারপর সূর্যালোকিত দিনে সকাল ১০ – ১১ টার সময় সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিন এভাবে ১০ – ১২ দিন অন্তর অথবা পুকুরের পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা পূর্বক ২ দিন আগেপরে হতে পারে।

প্রতিদিনের খাদ্য প্রয়োগ: যারা প্রাকৃতিক খাদ্য নির্ভর শুধু মাত্র একুয়া নেচার প্রয়োগ করে মাছ চাষ করতে চান, তারা একুয়া নেচার প্রয়োগের ১৫ দিন পর হইতে বা পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা পূর্বক প্রতিদিন ৪ কেজি কুড়া+৫০০গ্রাম চিটাগুড়+৫০০এম এল পানি ২৪-৪৮ ঘন্টা ফারমেন্টশন করে + ১ কেজি সরিষার খৈল আলাদা ভাবে ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন সূর্যালোকিত দিনে সকাল ১০ – ১১ টার সময় সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিন, পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করে ডোজ কম বেশী হতে পারে, আর যারা পুকুরে রেডি ফিড বা অন্য কোন ফিড ব্যবহার করবেন, এই নিয়মটি তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়

E-mail:  akmsus@gmail.com

This post has already been read 9353 times!

Check Also

যে জেলায় ইলিশ উৎপাদন হয়, ওই জেলার মানুষ গরিব হতে পারে না -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

ভোলা সংবাদদাতা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ইলিশের সম্পদ রক্ষায় সবাইকে একসাথে কাজ …