রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

শুঁটকি মাছের বর্জ্যে ভাগ্য পরিবর্তন দুবলার চরের জেলেদের

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): দেশের প্রধান শুঁটকিপল্লী সুন্দরবনের দুবলার চরে শুঁটকির বর্জ্য থেকে প্রায় তিন কোটি টাকার উপরে আয় হয়। প্রতিবছর এই পল্লী থেকে ২০০ কোটি টাকার বেশি শুঁটকি উৎপাদন হয় প্রায়। সাগরে মাছ আহরণের পর জেলেরা সেগুলো দুবলার চরে নিয়ে আসে। তখন মাছ বাছাইয়ের সময় অনেক সামুদ্রিক প্রাণী বাদ পড়ে যা শুঁটকি হিসেবে বিক্রি করা যায় না। জেলেরা সেগুলোকে রাবিশ (বর্জ্য) বলে। যেমন- ছোট ছোট কাকড়া, কামট, অক্টোপাস, পোটকা, দোয়াত কলম, টেপা ও চিংড়ির মাথা উল্লেখযোগ্য।

তবে সেসব বর্জ্য ফেলে দেয় না জেলেরা। বরং যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করে তা ফরিয়াদের কাছে বিক্রি করেন। ফরিয়ারা এগুলো নিয়ে রাবিশ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। রাবিশ ব্যবসায়ীরা তা আবার বিভিন্ন মৎস্য খাবার উৎপাদন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। এ থেকে জেলেদের অতিরিক্ত আয় হয়। বনবিভাগও পায় রাজস্ব।

দুবলার চর ঘুরে দেখা যায়, পুরো চর জুড়ে রয়েছে জেলেদের ছোট ছোট ঘর, মাছ শুকানো মাচা, চাতাল এবং মাছ শুকানোর জন্য মাটিতে নেট বিছানো। সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ করে শুঁটকি প্রক্রিয়ার কাজে ব্যস্ত হাজার হাজার জেলে। ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের হিসাব মতে, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে দুবলার চরে শুধু ২০ হাজার ৬৩০ মণ বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে। যেখান থেকে এক লাখ ৭৯ হাজার ৫০ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ২২ হাজার ৩১২ মণ বর্জ্যে এক লাখ ৮১ হাজার ৬৮৫ টাকা এবং ১৭-১৮ অর্থ বছরে ২১ হাজার ৭৮০ মণ বর্জ্যে এক লাখ ৭৪ হাজার ২৫৬ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। চলতি মৌসুমের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ২ হাজার ৯৩০ মণ বর্জ্যে ২৩ হাজার ৭৭৫ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বন বিভাগ।

বর্জ্য ব্যবসায়ী আনছার ফকির ও মৌলভী হানিফ বলেন, দুবলার চর থেকে আমরা ১৪ থেকে ১৬শ’ টাকা দামে রাবিশ ক্রয় করি। যখন রাবিশ কম থাকে তখন দাম কমে যায়। মাছ বৃদ্ধি পেলে দাম বৃদ্ধি পায়। এগুলো খুলনার লবণ চোরা, বগুড়া, পাথরঘাটাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি।

দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপে সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, জেলেরা শুঁটকির জন্য মাছ বাছাই করেন। বাছাইয়ের সময় অব্যবহৃত বর্জ্য জেলেরা সংরক্ষণ করেন। এ বর্জ্য বিক্রি করে জেলেদের অতিরিক্ত আয় হয়।

এ নিয়ে রামপালের শেখ মোহাম্মাদ আলী, শেখ আব্দুল গনি ও মংলার মফিজুল ইসলাম, আলী আক্কাস বলেন, মাছ চরে নিয়ে এসে প্রথমে শুঁটকির জন্য ভালো মাছ বাছাই করি। বাছাইয়ের সময় কিছু প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণি ফেলে দিতে হয়। যা শুঁটকি হিসেবে বিক্রি করা যায় না। তবে এগুলোকে আমরা না ফেলে মাটিতে নেট বিছিয়ে শুকিয়ে ঘরের মধ্যে স্তুপ করে রাখি। এরপর দুই থেকে তিন মণ হলে তখন সেগুলো রাবিশ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি।

বাগেরহাট সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল প্রতিনিধিকে বলেন, শুঁটকির বর্জ্য মৎস্য খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এ বর্জ্যে খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, এর ফলে মাছ উৎপাদনও ভাল হয়। দেশে মাছ উৎপাদনে এ বর্জ্যের ভূমিকা রয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, শুঁটকির পাশাপাশি দুবলার চরে প্রতি মৌসুমে ২০ হাজার মণের অধিক বর্জ্য উৎপাদন হয়। এগুলো থেকে জেলেদের অতিরিক্ত আয় হয় এবং বনবিভাগ প্রতি কুইন্টালে ২০ টাকা করে রাজস্ব আদায় করে।

This post has already been read 3867 times!

Check Also

বৈষম্যমুক্ত অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিতে কৃষিকে গুরুত্ব দিতে হবে -কৃষি উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন,  বৈষম্যমুক্ত অর্থনৈতিক উন্নয়ন …