চট্টগ্রাম সংবাদাতা: খাদ্যে ভেজাল, নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহন ধর্মঘট বা যে কোনো সমস্যা হলেই প্রশাসন ও সরকার প্রথমেই ব্যবসায়ীদের সাথে বসে সভা করে সিদ্ধান্ত নেন। এমনকি বাজেট প্রনয়ণ, কর নির্ধারণ বিষয়েও তাদের মতামত নিয়ে থাকেন। কিন্তু এ সমস্ত সমস্যার যারা মূল ভুক্তভোগী সেই ভোক্তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা তো দূরে থাক তাদের খবর নেয়ারও প্রয়োজন বোধ করে না। ফলে ব্যবসায়ীরা ধরেই থাকে দেশে ব্যবসা বাণিজ্যসহ নীতি নির্ধারণে তারাই মূল নিয়ামক। অথচ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যবসা বাণিজ্যের মূল নিয়ামক হলো ভোক্তারা। কারণ, ভোক্তারা যে কোনো উৎপাদিত পণ্য ভোগ করলেই ঐ ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রসার ঘটবে। সে কারণে পৃথিবীর সব দেশেই ব্যবসা বাণিজ্যের মূল নিয়ামক হিসাবে ভোক্তাদেরকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। ফলে সেখানে ন্যায্য ব্যবসার পরিবেশ তৈরী হয়েছে।
আর আমাদের দেশে পাইকারী ব্যবসায়ী খুচরা ব্যবসায়ীকে কিভাবে ঠকাবে, আর খুচরা ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের পকেট কিভাবে কাটবে সে বিষয়ে সদা তৎপর। আর ভোক্তাদের কাছে যাবতীয় নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য ও খাদ্য পণ্যের বিষয়ে পরিস্কার তথ্য না থাকায় তারা পণ্য ও সেবা ক্রয়ের সময় ঠকছে, প্রতারিত হচ্ছে এবং সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। যদি ভোক্তাদেরকে সঠিক ভাবে সচেতন করা যায়, তাদেরকে সংগঠিত করা যায় এবং তাদের সক্ষমতা বাড়ানো যায় তাহলে খাদ্যে ভেজাল, নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বাজার অস্থিতিশীলসহ যে কোনো সমস্যায় ভোক্তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
ইউকেএইড, বৃটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় প্রকাশ প্রকল্পের কারিগরী সহযোগিতায় পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্প, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম আয়োজনে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) নগরীর বহদ্দারহাট প্রাইম ক্যাডেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে ক্যাব পাঁচলাইশ কমিটির সাথে ভোক্তাদের অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপরোক্ত অভিমত জানানো হয়।
ক্যাব পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মনিরুজ্জমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন। আলোচনায় অংশ নেন ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, ক্যাব চাঁন্দগাও সভাপতি জানে আলম, ক্যাব পাঁচলাইশের যুগ্ন সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব নেতা সেলিম সাজ্জাদ, আবু ইউনুস, ক্যাব মাঠ সমন্বয়কারী জগদিশ চন্দ্র রয় প্রমুখ। ক্যাব ডিপিও জহুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় প্রানীজ খাদ্য আইন ও নিরাপদ খাদ্য নিয়ে নিয়ে মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনা করেন ক্যাব মাঠ সমন্বয়কারী জগদিশ চন্দ্র রয় ও জেড এইচ শিহাব।
বক্তারা আরও বলেন, ভোক্তাদের অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে এখন জেলা প্রশাসন বা ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে যে হোটেলকে জরিমানা করা হয় পরের দিন তার বিক্রি বেড়ে যায়। অথচ ভোক্তা স্বার্থ বিরোধী কাজের প্রমাণ পাওয়ায় ঐ হোটেলকে জরিমানা করা হয়েছে। ভোক্তারা সচেতন হলে ঐ হোটেলকে বয়কট করার কথা। তাই ভোক্তা পর্যায়ে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি, ভোক্তা পর্যায়ে অনিরাপদ খাদ্যের যোগান ও সরবরাহে লাগাম টেনে ধরা সম্ভব না হলে খাদ্যে ভেজালের দৌরাত্ত্য বন্ধ করা যাবে না। আইন ও সরকারী বিধি বিধানগুলি সম্পর্কে জনগণের সুস্পষ্ঠ ধারনা না থাকায় সরকারি কাঠামোগত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও জনগণ কাংখিত সুবিধা পাচ্ছে না। খাদ্যে ভেজাল, নকল ও মজুতকারী সিন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সভায় আরও বলা হয় কৃষকের মাঠ ও উৎপাদন থেকে শুরু করে পরিবহন, সংরক্ষণ, বিক্রি ও সর্বশেষ খাবার টেবিলে পরিবেশন পর্যন্ত নিরাপদ খাবার নিশ্চিতের বিধানগুলি কঠোর ভাবে অনুসরণ করা না হলে নিরাপদ খাবারও অনিরাপদ হয়ে যেতে পারে।
অনেক সময় ভোক্তারা বরফ দেয়া মাছ বাজার থেকে এনে প্রথমে ফ্রিজে সংরক্ষণ করেন। কয়েকদিন পর আবার সেখান থেকে কিছু রান্নার জন্য নিয়ে আবার ফ্রিজারে সংরক্ষণ করেন। এতে করে মাছটি পুরোপুরি পঁচে যাবে এবং পুষ্ঠির মান বজয়া থাকবে না।