নিজস্ব প্রতিবেদক: আমাদের দেশে উদ্ভাবিত বিটি বেগুন কৃষক ভোক্তা সবাই গ্রহণ করেছে। বিটি বেগুনের উৎপাদন ভালো এবং বেশ লাভজনক। কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত নতুন নতুন জাত নিয়ে বিরোধীতা করছে। তারা কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই এসব কথা বলছে। এসব ফসলে কোনো ক্ষতিকর কিছু নেই। আমাদের কৃষকরা এসব উন্নত জাতের স্বত্ব হারাবে যে কথা বলা হচ্ছে তাও ঠিক নয়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মিটানো ও ভবিষৎ খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় নতুন নতুন উন্নত জাত উদ্ভাবন করতে হবে। নতুন জাত যেনো পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর না হয় সেদিকেও সবোর্চ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমরা আরও ভালো ভালো টেকনোলজি সম্পৃক্ত করবো। একটা কথা মনে রাখতে হবে, সব কাজের সমালোচনা থাকবে, এরই মধ্যে কাজ করে যেতে হবে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের পথে।
বুধবার (৬ মার্চ) কৃষিমন্ত্রী ড.মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি রাজধানীর একটি হোটেলে আন্তর্জাতিক খাদ্য নীতি গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই) আয়োজিত ‘Agricultural Transformation in Bangladesh: Evidence on Biotechnology and Nutrition-Sensitive Agriculture’ শীর্ষক Policy Workshop -এ এসব কথা বলেন।
কৃষি মন্ত্রী বলেন, কৃষি আজ শুধু কৃষকের একার চিন্তার বিষয় নয়। কৃষির প্রশ্নে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানী ও সম্প্রসারক যেমন কাজ করছেন, তেমনি সক্রিয় অবদান রাখছে বেসরকারি খাতও। বিজ্ঞান ও গবেষণা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক চিন্তা। বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমাদের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য কৃষি গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা প্রদানের প্রধানতম এবং অন্যতম উৎস হচ্ছে কৃষি। সরকার কৃষি উন্নয়নে যুগোপযোগি নীতিমালা প্রণয়ন হালনাগাত করেছে। ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের কৃষির টেকসই উন্নয়নের জন্য কৃষি রুপান্তর, কৃষি বহুমুখীকরণের, বাজারজাতকরণ এবং ভ্যালু অ্যাড ও ভ্যালু চেইন অপরিহার্য। বাংলাদেশের কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষি;খোড় পোষের কৃষি নয়। এমতবস্থায় জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বৈচিত্রপূর্ণ খাদ্যের উৎপাদন জরুরী। হালনাগাদ কৃষি নীতিতে বায়োটেকনোলজি গবেষণা ও উন্নয়নয়নকে অগ্রাধিকার দেয় হয়েছে। পাশাপাশি কৃষিতে নারীর ক্ষমতায়নেরও গুরুত্ব দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আধুনিক জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সরকার জিএমওসহ কৃষি রুপান্তর, হাইব্রিড জাত নিয়ে এসেছে। আমাদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু আমাদের কৃষকবৃন্দ উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পাচ্ছে না। এর ফলে কৃষক অর্থিত সক্ষমতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে কৃষি কাজে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে পুষ্টিকর খাদ্য বাজার থেকে ক্রয়ের সামর্থ নেই, এ জন্য কৃষিজ পণ্যের বাজারজাত অপরিহার্য। অনেক ফসল রয়েছে যেমন আমাদের চাহিদার চেয়ে ৩০ লাখ টন আলু বেশী উৎপন্ন হয় যার মাত্র ১ লাখ টন রপ্তানি করা যাচ্ছে। বাকি উদ্বৃত্তাংশ উৎপাদন খরচ উঠাতে পারছেনা কৃষক। মাথাপছিু আয় বৃদ্ধিতে কৃষির বিপ্লবের কোনো বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, খাদ্যে ভেজাল রোধে আমাদের আরও কঠোর হওয়া উচিত ছিলো। খাদ্য ভেজাল রোধে আর কোনো ছাড় দেয়া হবে না্। ভেজাল রোধে ঢাকায় কেন্দ্রীয় ভাবে একটি ল্যাব ও বিভাগীয় শহরের একটি করে ল্যাব স্থাপন করা হবে যাতে করে দ্রুততার সাথে ভেজাল সনাক্ত করা যায়।
অতিরিক্ত সচিব জনাব ড. মো. আব্দুর রৌফ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)-এর মহাপরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আযাদ। আরও উপস্থিত ছিলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিএই) মীর নুরুল ইসলাম, ইউএসএআইডি –এর ভারপ্রাপ্ত মিশন ডিরেক্টর মিসেস জিনাহ সালাহী, এবং আইএফপিআরআইয়ের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ আখতার আহমেদ।