রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

প্রিয় গোলাপ ফুলের অসুখ-বিসুখ

গোলাপের পাউডারি মিলডিউ রোগ,
লোকেশন: গদখালী ও পানিসারা, ঝিকরগাছা, যশোর।
ছবি: আবু নোমান ফারুক

আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ:  কৃষকের কাছে গোলাপের ক্যান্সার আর ডিলারের কাছে সাদা মাকড়! প্রকৃতপক্ষে এটি গোলাপের পাউডারি মিলডিউ রোগ। আমরা যশোরের ঝিকরগাছায় ফিল্ড ইনভেস্টিগেসনে গিয়ে দেখলাম পাউডারী মিলডিউ রোগ গোলাপে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গদখালী আর পানিসারায়। ফেব্রুয়ারি মাস – এ সময় এই দুর্যোগ। পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস আর ২১শে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে এ মাসে সারা বছরের একটি উল্লেখযোগ্য ব্যবসা হয়। তার উপর এবার গোলাপের দাম চড়া। ১০ ফেব্রুয়ারি গদখালীতে গোলাপ প্রতি পিস ১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

তাই হঠাৎ নতুন এই রোগে কৃষকের মাথায় হাত। পাউডারি মিলডিউ রোগের আক্রমণ শুরু হয় গোলাপের কচি পাতার নীচে। পাতায় সাদা ছত্রাক দেখা যায়। এ পাতাগুলো কুকড়ে যায়। এরপর রোগ পত্রবৃন্ত ও পাতার উপরি ভাগেও ছড়িয়ে পড়ে। আক্রমণের তীব্রতা বেশী হলে কান্ডে ও ফুলের বোটায় রোগ ছড়িয়ে পড়ে। সাদা সাদা হয়। পরে ফুলের বোটায় পঁচন ধরে ও কালো হয়ে যায়। ফুলচাষীদের কাছে এটি একটি ভাইরাস। জানতে চাইলাম, চাচা কি স্প্রে করেছেন? উত্তরে জানালো, সব দিয়েছি কোনো কাজ হয় নাই। ৪-৫টা বিষ একসাথে মিশিয়ে স্প্রে করেছি, কিন্তু কাজ হয়না।

রোগবালাই দমনে কৃষক, ডিলারের পরামর্শের ওপর নির্ভরশীল। এটি একটি রোগ, কিন্তু অধিকাংশ কৃষক এর জন্য মাকড়নাশক ভার্টিমেকসহ ৪-৫ পদের কীটনাশক স্প্রে করেছে। আর তাতে ফল না হওয়াই স্বাভাবিক। অনেক সময় তারা এতো বেশী ঘনত্বে স্প্রে করে যে, পাতার উপর সাদা হয়ে থাকে। একজন কৃষককে পেলাম, উনি এই রোগের জন্য সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করেছেন। কিন্তু এতে তার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান। ফুলের পাপড়ি পুড়ে গিয়েছে। জানতে চাইলাম, কি মাত্রায় ও কখন স্প্রে করেছেন? উত্তরে জানালো, ১৬ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম হারে দুপুর বেলা স্প্রে করেছেন। সালফার ছত্রাকনাশক পাউডারী মিলডিউ রোগের জন্য অনুমোদিত। তবে সর্বোচ্চ মাত্রা হলো ১৬ লিটার পানিতে ৩২ গ্রাম। আর স্প্রে করতে হবে শেষ বিকেলে, যখন দিনের আলো কমে আসে। প্রখর আলোয় সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক গাছে বিষাক্ততা তৈরি করে, এতে কঁচিপাতা ও ফুল পুড়ে যেতে পারে। একদিকে প্রখর দুপুরে আবার তিন গুণের ও বেশী হারে স্প্রে করায় ফুলের পাপড়ি পুড়ে গিয়েছে।

উনাকে বিষয়টি ভালোভাবে বুঝিয়ে বললাম। এক সপ্তাহে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক এবং পরের সপ্তাহে ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক ০.২% হারে এভাবে ৩-৪ টি স্প্রে দিলে রোগ ভালো হয়। স্প্রে করতে হবে শেষ বিকেলে এবং পাতার উপরে ও নিচে, পুরো গাছে ভালোভাবে স্প্রে করে দিতে হবে। ভাগ্যভালো, গত কয়েকদিন বৃষ্টি হচ্ছে, এতে এ রোগের প্রকোপ কমে আসবে। কারণ এ রোগের জীবাণু অবলিগেট ছত্রাক, যা জীবিত গাছ ছাড়া বাঁচতে পারেনা। তাই বৃষ্টির পানিতে গাছ ধুয়ে গেলে ছত্রাকগুলো মাটিতে পড়ে মারা যায়, এবং রোগের প্রকোপ কমে আসে।

This post has already been read 4758 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …