রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

ভোজ্য তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি মন্ত্রীর তাগিদ

ঢাকা সংবাদাতা:দেশে জনসংখ্যার মাথাপিছু ভোজ্য তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেশীয় ভোজ্য তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের মাটি ও আবহাওয়া উপযোগি নতুন নতুন তৈল বিজের জাত উদ্ভাবন করে ব্যাপকহারে আবাদ করে ভোজ্য তেলের আমদানি হ্রাস করতে হবে। এক সময় ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষাই প্রধান ছিলো। সরিষা শুধু তেলই নয় এ থেকে পুষ্টি সমৃদ্ধ খৈল পাওয়া যায় যা আমাদের মৎস্য ও পশু খাদ্য হিসেবে বেশ চাহিদা রয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯মার্চ) কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এম.পি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সরিষা/তেলবীজ চাষ সম্প্রসারণ ও ভোজ্য তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে সভায় এসব কথা বলেন। তৈল বিজ আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশে তৈলবিজ চাষের এলাকা বৃদ্ধি ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সব ধরনের সহায়তা করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

দেশের মানুষ গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ গ্রাম করে তেল খায়। বিগত মৌসুমে প্রায় ৭ দশমিক ২৪ লাখ হেক্টর জমিতে তৈলবিজ ফসলের চাষ করে ৯ দশমিক ৭০ লাখ মে.টন ফসল উৎপন্ন হয় যা প্রয়োজনের তুলনায় ৯-১০ শতাংশ। দেশে মোট ৪ দশমিক ৪৪ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়,যা থেকে ৬ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন সরিষা এবং সরিষা থেকে ২ দশমিক ৫০ লাখ টন তেল উৎপন্ন হয়। দেশে মোট ভোজ্য তেলের চাহিদা ৫১ দশমিক ২৭ লাখ মে.টন। আমাদের চাহিদার মধ্যে ৪৬ দশমিক ২১ লাখ মে.টন আমদানি করতে হয়, টাকায় মোট ৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। আমাদের দেশে তেল ফসলের মধ্যে সরিষা,চীনাবাদাম,তিল,তিসি,সয়াবিন ও সুর্যমূখী প্রভৃতি চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে সরিষা,তিল এবং র্সূযমুখী থেকেই সাধারণত তেল বানানো হয়। এখানে উৎপাদিত বাদাম দেশের মানুষ ভেজে খায়।

বর্তমানে দেশে আবাদী জমির মাত্র ৪ ভাগে তৈল ফসলের আবাদ হয়ে থাকে। দেশে যে সামান্য পরিমাণ সয়াবিন উৎপন্ন হয় তা দিয়ে খৈল তৈরী করে হাস মুরগী ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমদানি করা সয়াবিন থেকেও বাই প্রোডাক্ট হিসেবে তেল তৈরী হয়। যা আমরা খাই। সরিষা বীজে ৪০-৪৪ ভাগ তেল ও ৪০ ভাগ আমিষ সমৃদ্ধ খৈল পাওয়া যায়। বারি এ যাবত ৪৪টি ও বিণা২৮ উচ্চফলনশীল তেল বীজ জাত উদ্ভাবন করেছে। ধানের কুঁড়া থেকে তৈরি ভোজ্য তেলের (রাইস ব্রান অয়েল) চাহিদা দেশে ক্রমেই বাড়ছে। নতুন ৬টি প্রতিষ্ঠানও এ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে,গত বছরে তারা ১ দশমিক ১৮ লাখ মে.টন তেল উৎপাদন করে। দেশে ৫ কোটি টন ধান থেকে ৮ শতাংশ কুড়া এবং কুড়া থেকে ২০-২৫ শতাংশ তেল পাওয়া যায়। সয়াবিন তেলের পাশাপাশি মানুষ এখন এই তেলের দিকে ঝুঁকছেন।

তৈলবিজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে মাঠ পর্যায়ে সরিষার আবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করে দিতে হবে। এছাড়া কৃষকদের উন্নত বিজ সরবরাহ করা,আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা ও কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তৈল বিজ তথা সরিষা উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ্য করেন মন্ত্রী। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কমিটি আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামানসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ,সংস্থার প্রধানগণ ও কৃষি বিজ্ঞানী গবেষক ও কৃষিবিদগণ এবং বিভিন্ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকগণ উপস্থিত ছিলেন।

This post has already been read 3834 times!

Check Also

আমন ধানে ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার আক্রমণ: ফলনের ক্ষতি ও করণীয়

ড. মো. মাহফুজ আলম: বাংলাদেশে ধান প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত এবং এর উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির …