মাহফুজুর রহমান (চাঁদপুর প্রতিনিধি): আমাদের দেশে মিষ্টি কুমড়া বারো মাসই পাওয়া যায়। মিষ্টি কুমড়া জনপ্রিয় ও সুস্বাদু একটি সবজি। মিষ্টি কুমড়ার শুধু কুমড়া নয় এর ডগাও খুবই পুষ্টিকর। কচি মিষ্টি কুমড়া সবজি হিসেবে এবং পাকা ফল দীর্ঘদিন রেখে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।
মিষ্টি কুমড়া তরকারি বা পণ্য হিসেবেও ব্যবসায়িক মূল্য রয়েছে। তাই মিষ্টি কুমড়া চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে হাজীগঞ্জের চাষীদের। চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের দুই পাশে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে মিষ্টি কুমড়ার গাছ। কৃষকের নিপুণ হাতে লাগানো কুমড়া গাছের সবুজ লতানো গাছ মাঠের মাটির উপর বিছানার মতো ছড়িয়ে আছে। কম খরচে অধিক ফলন পাওয়ায় এবং লাভজনক ফসল হিসেবে পরিগণিত হওয়ায় মিষ্টি কুমড়া চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
এ ব্যাপারে কথা হয় হাজীগঞ্জ উপজেলা এক চাষীর সাথে। তিনি জানান, প্রথমে এমনিই মিষ্টি কুমড়া চাষ করতাম। পরে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করার চিন্তা মাথায় আসায় প্রথমে অল্প করে চাষ শুরু করি। বর্তমানে নিজের ও বন্দকি জমিসহ মোট ১ একর ২০ শতাংশ জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করছি। তিনি বলেন, এ বছর মিষ্টি কুমড়া চাষে তার মোট খরচ হয়েছে প্রায় ২৫,০০০ টাকা। আর উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া প্রায় ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কি পদ্ধতিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্ষার পানি কমতে শুরু করলে আশ্বিন মাসে প্রথমে কচুরিপানা স্তূপ করে রাখি। তার উপর কিছু মাটি দিয়ে মিষ্টি কুমড়ার উন্নত জাতের বীজ রোপণ করি। তারপর নিয়মিত পরিচর্যা করি। এছাড়া তেমন কোনো খরচ নেই। তবে পোকামাকড় থেকে কচি মিষ্টি কুমড়া নিরাপদে রাখার জন্যে নিয়ম মেনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। কৃষি কর্মকর্তার সহযোগিতা পাওয়া যায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে আসেন তবে সকল কৃষক সমান সহযোগিতা পায় না।
আরেক চাষী জানান, তিনি ৩০ শতাংশ জমিতে নিয়ে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেন। তার জমির উপর কৃষি সমপ্রাসরণ অধিদপ্তরের প্রদর্শনী সাইনবোর্ড ঝুলানো রয়েছে। তিনি জানান, হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে ১৫০০ টাকা পেয়েছেন মিষ্টি কুমড়া চাষের জন।
জানা যায়, ইরি মৌসুমের আগে যে সময়টা জমি খালি পরে থাকতো সে সময় কৃষকরা অল্প বিনিয়োগ করে অধিক মুনাফা পায় বলেই মিষ্টি কুমড়া চাষে আগ্রহ বাড়ছে হাজীগঞ্জের চাষীদের। কৃষকরা আরও জানান, উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। বিশেষ করে পাইকারদের মাধ্যমেই তা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। তবে হাজীগঞ্জের মিষ্টি কুমড়া সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় লাকসামের বাজারে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে এর বাজার আরও সম্প্রসারণ হবে।
এ ব্যাপারে কথা হয় হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়নমন ‘র সাথে। তিনি বলেন, গত অর্থ বছরে হাজীগঞ্জ উপজেলায় মিষ্টি কুমড়া চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২শ’ হেক্টর। চলতি অর্থ বছরে এ লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩শ’ ২০ হেক্টর। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এখানকার চাষীরা দিন দিন মিষ্টি কুমড়া চাষে আগ্রহ বাড়াচ্ছে। ব্যাপক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ সবজিটি কৃষকদের জন্যে আরও লাভজনক করতে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে।