ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): খুলনা-মংলা রেল প্রকল্পের অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের রেলপথ নির্মাণে ১৩ কিলোমিটার মাটির বাঁধ ছাড়াও ছোট ছোট চারটি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। এদিকে রূপসা রেলসেতুর জন্য বসানো হয়েছে চারটি স্প্যান। রবিবার (৭ এপ্রিল) পঞ্চম স্প্যান বসানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া চলতি মাসে আরো দু’টি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুর রহিম জানান, প্রকল্পের ৫০ দশমিক ৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ব্রীজ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। তার দেয়া তথ্যমতে, খুলনার রূপসা অংশে সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলাকায় ৮৫৫টি পাইল শেষ হয়েছে। আর নদীর অভ্যন্তরে ৭২টি পাইলের মধ্যে ১৫টি পাইল করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের ১৩ কিলোমিটার এলাকায় মাটির বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা অংশের ২৪ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ হয়েছে। আর মংলা এলাকায় ৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হয়েছে।
তিনি আরো জানান, রূপসা রেলসেতুর খুলনা অংশে চারটি স্প্যান বসানো হয়েছে। গত বছরের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে রেলসেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। স্প্যানটি মাটি থেকে ১৬ মিটার উঁচুতে ৬৬ ও ৬৭ নম্বর পিয়ারে বসানো হয়। পর্যায়ক্রমে ৬২, ৬৩ ও ৬৪ নম্বর পিয়ারে ২টি এবং ৬৭ ও ৬৮ নম্বর পিয়ারে আরো একটি স্প্যান বসানো হয়। রবিবার (৭ এপ্রিল) ৬১ ও ৬২ নম্বর পিয়ারে পঞ্চম স্প্যান বসানো হবে। একই সাথে চলতি মাসে আরো দু’টি (ষষ্ঠ ও সপ্তম) স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ১৩৬টি স্প্যানের মধ্যে ভারতে ৭৫টি স্প্যান তৈরি হয়েছে। যার মধ্যে প্রকল্প এলাকায় ৫৫টি স্প্যান আনা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় ৩১টি ছোট-বড় ব্রীজ নির্মাণ করতে হবে। যার মধ্যে ২৫টির পাইল সম্পন্ন হয়েছে। আর মশিয়ালি থেকে আড়ংঘাটা পর্যন্ত চারটি স্প্যান বসানো হয়েছে। এতে ৫৩টি গার্ডার প্রয়োজন। যার ২৭টি ভারতে প্রস্তুত আছে। ১৯টি খুলনায় রয়েছে। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের জন্য ৮শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রয়োজনে আরো বেশি ব্যবহার করা যাবে। এদিকে বাগেরহাট অংশ তিনটি স্থানে ১৫০ মিটার জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কাজ করতে পারছে না বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ ৩টি অংশে বিভক্ত। যার একটি রেল সেতু, অপরটি রেল লাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। প্রকল্পের অধীনে লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ হবে। আর রূপসা নদীর উপরে হযরত খানজাহান আলী সেতুর দেড় কিলোমিটার দূরে যুক্ত হবে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেল সেতু। এছাড়া ৩১টি ছোটখাট ব্রীজ ও ১১০টি কালভার্ট নির্মিত হবে। ফুলতলা থেকে মংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন হবে। স্টেশনগুলোর মধ্যে ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদ নগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মংলা। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেললাইনের জন্য ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ এবং ব্রীজের জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বাকী টাকা জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই রেলপথটি নির্মাণ হচ্ছে। এ প্রকল্পের রেললাইন তৈরির জন্য ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর ভারতের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভারতের ইরকন সাথে চুক্তি হয়। আর ব্রীজ তৈরির জন্য ওই বছরের ২৪ আগস্ট ভারতের লারসেন এন্ড টাব্র নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয়। এর আগে ২০১২ সালের নভেম্বর প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়ি জেভি প্রতিষ্ঠান।