ফকির শহিদুল ইসলাম(খুলনা): বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ। এলাকার বাসিন্দাদের দিন কাটছে আতঙ্কে। উপজেলার আশাশুনি সদর, শ্রীউলা, খাজরা, আনুলিয়া, প্রতাপনগর ও বুধহাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রাম রক্ষা বেড়ি বাঁধের প্রায় ১৫টি এলাকা ঝুকিপূর্ণ হিসেবে দেখছে সচেতন মহল।
বর্ষা মৌসুম আসতেই উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের দয়ারঘাট, সদর ইউনিয়নের বলাবাড়িয়া, শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালী টু কোলার মধ্যবর্তী স্থান, হাজরাখালী খেয়া ঘাট থেকে পুইজেলা খেয়াঁঘাট পর্যন্ত, খাজরা ইউনিয়নের জেলেপাতুয়া, আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছুট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিছুট খেয়াঘাট পর্যন্ত, বিছৃট খেয়া ঘাট থেকে কাকবাসিয়া খেয়াঘাট, হোগলা থেকে মনিপুর, প্রতাপনগর ইউনিয়নের কোলা-ঘোলা খেয়া ঘাট টু কোলা গ্রামের মধ্য বর্তীস্থানসহ সিমান্তবর্তী চাকলার ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বিস্তর্ণ এলাকা।
প্রতি বছরই এসব এলাকার ঝুকিপূর্ণ বাঁধগুলি ভেঙে ব্যাপক খয়ক্ষতি হয়ে থাকে। বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম ডুবে যায়। হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়। শতশত ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এতোকিছু দেখার পরও রাজনৈতিক দলের নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের টনক নড়ে না। তারা শুধু পরিদর্শনে এসে কিছু আশার বাণী শুনিয়ে যায়। স্বেচ্ছাশ্রমে সাময়িক সংস্কার ছাড়া আর কোনো পদক্ষেপ চোখে না পড়ায় হতাশ হয়েছেন এলাকার মানুষ। কখনও কখনও বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার পরে সরকারি কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে আসা তো দুরের কথা মোবাইল ফোনেও তাদের পাওয়া যায় না। বিগত তিন মাস আগে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলেও সংস্কার না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার।
প্রতাপনগরের সীমান্তবতী চাকলা গ্রামটি দীর্ঘ দিন ধরে নদীর জোয়ারের পানির চাপে পাউবো’র বাঁধ ভেঙ্গে এখন জোয়ার ভাটার পানিতে টইটম্বুর। বাঁধটি স্থায়ীভাবে নির্মাণ না করা হলে আশাশুনির মানচিত্র থেকে এলাকাটি হারিয়ে যেতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন ভাঙ্গনের সাথে সাথে কিছু সহযোগিতা করলেও সেটি কপোতাক্ষের প্রবল জোয়ারে কাছে কিছুই না। নদীর ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের বর্ণনা দিয়ে আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম শাহনেওয়াজ ডালিম, আবু হেনা শাকিল, আলমগীর আলম লিটন ও শেখ জাকির হোসেন জানান, আমাদের ব্যক্তিগত তহবিল, পরিষদের সামান্য বাজেট, স্বেচ্ছাশ্রম ও কিছু কিছু সময় পানি উন্নয়নের বোর্ডের ছোট-খাট বাজেট ছাড়া কখনও কখনও সরকারি কোন কর্মকর্তাকে বাঁধ সংস্কারে এলাকায় দেখা যায় না।
পাউবো’র উদাসীনতাকে দায়ি করে কেউ কেউ বলেন, সময় থাকতে বাঁধগুলো মেরামত করা হয় না। বর্ষা মৌসুম আগত এখনই বাধ গুলো সংস্কার করা না হলে এলাকার মৎস্য ঘের ভেসে যাবে, গবাদী পশু শূণ্য হয়ে পড়বে এলাকা, সর্বপুরি ঝুকিপূর্ণ এলাকার অসহায় মানুষগুলি খুব অসহায় জীবন যাপন করবে। এদিকে ভাঙ্গন প্রতিরোধের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলেও আজ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান, কামাল হোসেন, মাহবুবর রহমান, ইসমাইল হোসেন, হাবিবুর রহমান জানান, গত তিন মাস আগে কপোতাক্ষ নদীর প্রবল জোয়ারে একশত হাত বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। প্রাথমিকভাবে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কার করলেও এক সপ্তাহের মধ্যে সেটি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সেই থেকে দিনে দুই বার জোয়ার ভাটা চলছে। বর্তমানে সেখানে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ সংক্রমিত হতে দেখা যাচ্ছে। তাদের দাবি দ্রুত বাঁধটি সংস্কার করা না হলে সামনে বর্ষা মৌসুমে চাকলা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে যে বাঁধ দেওয়া আছে সেটিও ভেঙে পুরো প্রতাপনগর ইউনিয়ন প্লাবিত হতে পারে। এসকল ঝুকিপূর্ণ এলাকার সচেতন মহলের দাবি বর্ষা মৌসুমের পূর্বে এসব ঝুকিপূর্ণ বাঁধগুলি সংস্কার করা হোউক। তা না হলে নদীতে পানির চাপ বাড়লে আর সংস্কার করা সম্ভব হবে না।