মাহফুজুর রহমান (চাঁদপুর প্রতিনিধি): চাঁদপুরে চলতি মৌসুমে আলু উৎপাদন হয়েছে ২,০২,০২৪ মে.টন এবং চাষাবাদ হয়েছে ৮,৮৩৫ হেক্টর। চলতি মৌসুমে (২০১৮-২০১৯) আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১০,৬৯০ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২,২৪,৫০০ মে.টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে প্রাপ্ত তথ্য মতে, চাঁদপুর সদরে এবার ১,৭৩৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন হয়েছে ৩৬,৭২২ মে.টন। মতলব উত্তরে ৬৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন হয়েছে ১১,৩৮০ মে.টন।
মতলব দক্ষিণে ৩,০৬৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন হয়েছে ৭২,৩৩৫ মে.টন। হাজীগঞ্জে ৮৪০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন হয়েছে ১৮,৭৭৭ মে.টন। শাহারাস্তিতে ২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন হয়েছে ৪৯৫ মে.টন। কচুয়ায় ২,২৬০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন হয়েছে ৫৭,৬৩০ মে.টন। ফরিদগঞ্জে ৯৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন হয়েছে ১,৭৫৮ মে.টন। হাইমচরে ১৬৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন হয়েছে ২,৯৩০ মে.টন।
চাঁদপুর খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আবদুল মান্নান জানান, চাঁদপুরে আলু চাষিগণ বার বার অর্থনেতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এবারও আলু রোপণের পর পরই বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে আলু চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
চাঁদপুর খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, চলতি বছরে চাঁদপুর জেলায় ব্যাপক আলু চাষাবাদ করা হলেও ২-৩ দিন টানা বৃষ্টিপাত হওয়ায় প্রাথমিক ভাবে চাষাবাদকৃত আলু রোপণের সময় কিছুটা নষ্ট হয়েছে। আলুর আবাদি জমি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে কৃষকরা লাঙ্গলের পরিবর্তে ট্রাক্টর, হোচার পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত স্যালো সেচ ব্যবহার, পরিমিত কীটনাশকের ব্যবহার, নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ থাকলে আলুর বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো বলে জানান।
চাঁদপুর জেলা একটি নদীবিধৌত কৃষি ভিক্তিক অঞ্চল বিধায় কৃষকরা সময়মত চাষাবাদ, বীজবপন ও সঠিক পরিচর্যায় পারদর্শী। জেলার ব্যাংকগুলো যথারীতি ফসল ঋণ প্রদান করে কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যাপক সহায়তা দিচ্ছে। এ দিকে চাঁদপুরের সাথে নৌ, সড়ক ও রেলপথের উত্তম যোগাযোগ থাকায় দেশের সর্বত্র কৃষিপণ্য পরিবহন অন্যান্য জেলার চেয়ে খুবই সহজ ও নিরাপদ ইত্যাদি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও চাষিরা মার খাচ্ছে।
৮ উপজেলায় আলুর চাষাবাদ ও উৎপাদনে বিভিন্ন জাতের আলু চাষাবাদ করে থাকে চাঁদপুরের কৃষকরা। কম-বেশি সব উপজেলাই আলুর ফলন ও চাষাবাদ হয়ে থাকে। বিগত ক’বছর ধরেই চাঁদপুরে ব্যাপক আলু উৎপাদন হচ্ছে। বিশেষ করে আলু উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোর মধ্যে সফরমালী, রালদিয়া, মুন্সীরহাট, মতলব দক্ষিণ, নারায়ণপুর, কুমারডুগি, শাহাতলী, কেতুয়া এলাকায় সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয়। বর্তমানে আলুর খুচরা মূল্য ১৫ টাকা কেজি।
উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আবদুল মান্নান আরোও জানান, ‘গত দু’বছর ধরে আলু চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে মার খাচ্ছে। সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও তারা ঝুঁকির মধ্যে থাকে। চাষিদের বাঁচাতে চাঁদপুরে আরো সংরক্ষণাগার স্থাপন প্রয়োজন। তবে আসন্ন রমজানে ও ঈদুল আযহা পর্যন্ত তারা কৃত্রিমভাবে সংরক্ষণ করা আলু ভালোভাবে বাজারজাত করতে পারলে হয়তো অনেকটাই বেঁচে যাবে।’
প্রসঙ্গত, আলু বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরি সবজি। চাঁদপুর আলু উৎপাদনে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী জেলা। মুন্সীগঞ্জের পরেই চাঁদপুরের স্থান। ফলে চাঁদপুরে বেসরকারিভাবে ১২টি কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে। এগুলোর ধারণক্ষমতা মাত্র ৫৪,০০০ মে.টন। মতলবের করিম কোল্ডস্টোরেজের সংরক্ষণাগারটির ধারণ ক্ষমতা বাড়ালেও বাকি প্রায় দেড় লাখ মে.টন আলু কৃষকদের নিজ দায়িত্বে মাঁচায় বা কৃত্রিম উপায়ে সংরক্ষণ করার ফলে জেলার কৃষকগণ প্রতি বছরই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।