ইফরান আল রাফি: বেঁচে থাকার জন্য প্রথম মৌলিক চাহিদা হিসেবে খাদ্যকে বিবেচনা করা হয়। বাঙালি হিসেবে বড় আনন্দ বোধ হয় যখন শোনা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এক সময় ছিলো যখন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর তিন বেলা আহার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হতো কিন্তু উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সেই সময়ের অবসান ঘটেছে। কৃষি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন খাদ্যে নিরাপত্তা অর্জনে মাইলফলক ভূমিকা রেখেছে। আন্তর্জাতিক খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (১৯৯৬) মতে, খাদ্য নিরাপত্তা হচ্ছে সব মানুষের কর্মক্ষম ও সুস্থ জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রাপ্তির বাস্তব ও আর্থিক সক্ষমতা থাকা। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মঙ্গা ও দারিদ্রতা হ্রাস পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু ১৬ কোটি বাঙালির জন্য নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বা নিরাপদ খাদ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা কতোটুকু সফল?
বাংলাদেশ আজ মৎস্য উৎপাদনে চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, চাল উৎপাদনে চতুর্থ। এক সময় ছিলো যখন খাদ্যের অভাবে মানুষ মারা যেতো। এমনও সময় ছিলো কৃষি ঋণ, সার, কীটনাশক, সেচ ইত্যাদির অভাবে কৃষি জমি পতিত থাকতো এবং কৃষিজীবি মানুষেরা বহু কষ্টে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতো। সম্প্রতি কৃষি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন হওয়ায় বর্তমানে একই জমিতে বহুমুখী ফসল চাষবাদ হচ্ছে এবং কৃষকের ভাগ্যের চাকা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাড়তি জনসংখ্যার জন্য অতিরিক্ত খাদ্যে উৎপাদন করতে গিয়ে আমাদের বেঁচে থাকার সহায়ক খাদ্য অনিরাপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক বালাইনাশক ও সার ব্যবহারের ফলে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মানব স্বাস্থ্য এবং খাদ্য শৃঙ্খল। রাসায়নিক সার ও বালাইনাশকের অবশিষ্ট অংশ পতিত হচ্ছে নিকটস্থ পুকুর, ডোবা এবং খালে। ফলশ্রুতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মৎস্য সম্পদ এবং জলজ বাস্তুসংস্থান। অধিক মুনাফার লোভে ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে হরমোন, ফল পাকাতে ব্যবহৃত হচ্ছে কার্বাইড, দীর্ঘ সময় সংরক্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছে ফরমালিন। যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকারক।
ডেইরি শিল্পে অধিক দুধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য গবাদি পশুকে খাওয়ানো হচ্ছে এন্টিবায়োটিক এবং বিভিন্ন ধরনের হরমোন ট্যাবলেট। পোল্ট্রি ও ফিস ফিডে ভারী ধাতুর উপস্থিতি মানবদেহে ক্যান্সার সহ নানা ধরনের ক্ষতি সাধন করে থাকে। রাস্তার পাশে উন্মুক্ত জায়গায় খাবার বিক্রি ক্রমশ বেড়েই চলেছে যা খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে স্কুল, কলেজ ও অফিসগামী পথচারী। বিদেশী ফলের ভিড়ে পুষ্টিগুণে ভরপুর দেশীয় ফল আজ বিলুপ্তির পথে। এসকল সমস্যা থেকে পরিত্রাণ না পেলে খাদ্য নিরাপওা অর্জন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
এখনই সময় নিরাপদ খাদ্যের জন্য সচেতনতা গড়ে তোলা, খাদ্য উৎপাদন স্থানকে নিরাপদ রাখা, জৈবিক কৃষির উপর নজরদারি প্রদান এবং ভেজাল বিরোধী অভিযান জোরদার করা। তবেই নিরাপদ খাদ্যে সমৃদ্ধ হবে আগামীর বাংলাদেশ।
লেখক: শিক্ষার্থী (কৃষি অনুষদ), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।