ফকির শহিদুল ইসলাম(খুলনা): দুর্ভোগ যেনো পিছু ছাড়ছেনা উপকুলীয় প্রত্যন্ত জনপথ কয়রাবাসীর। নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে কয়রার কপোতাক্ষ নদের ঘাটখালি বেঁড়িবাধে ভয়াবহ ভাঙ্গনের কারণে বেড়িবাধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা লবণাক্ত পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারন করার এ সকল এলাকার জন সাধারণ রয়েছে সব সময় আতংকে। তাছাড়া নদীতে স্রোত বাড়ায় ভাঙ্গন দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয় সে বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা অবগত। কিন্ত তাদেরকে স্থানীয় জনপ্রতিনি, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার জানানো সত্ত্বেও পাউবো কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনা। ফলে উপকূলীয় এ অঞ্চলে চলতি বোরো মৌসুমের পাকা ধান, মৎস্য ঘের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির পাশাপাশি প্লাবিত এলাকার বসত ভিটা ছেড়ে উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছেন। স্থানীয় গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন রোধে কাজ করে কোনো রকম পানি আটকানোর ব্যবস্থা করেছেন। কিন্ত নড়বরে এ মেরামতকৃত বাঁধ নিয়ে আতঙ্ক কাটছেনা এলাকাবাসীর। স্থানীয়রা জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডর উপকূলীয় অঞ্চলে দায়িত্ব প্রাপ্তরা প্রতিবছর কয়রা এলাকায় যে কয়টি পোল্ডার বা বাঁধ রয়েছে তার মেরামত ও সংস্কার দেখিয়ে শত শত কোটি টাকা লোপাট করলেও প্রকৃতপক্ষে জনগণের কোনো উপকারে আসেনা পাউবো। চলতি বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পুর্বেই যদি দূর্বল বেড়িবাঁধগুলো পাউবো দেখাশুনা করে ব্যবস্থা নিলে আজ স্বেচ্ছাশ্রমের বিনিময় বাঁধের পানি আটকানোর প্রয়োজন হতো না। তাই জরুরী ভিত্তিতে দূর্বল বেড়িবাঁধকে স্থায়ীভাবে টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। যাতে উপকূলবাসী বর্ষা মৌসুমে আতংকে না থাকে ।
শুধু ঘাটাখালী নয় অব্যাহত ভাঙ্গনে কয়রা সদর ইউনিয়নের গোবরা, হরিণখোলা ও গোবরা পূর্বচক গ্রামের বাসিন্দারা রয়েছেন আতঙ্কে। ভাঙ্গন রোধে অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেয়া হলে নদী তীরবর্তী জনপদের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়েছে ১৩-১৪/২-নং পোল্ডারের গোবরা, ঘাটাখালী ও হরিণখোলার বেড়িবাঁধ। গত রোববার রাতের জোয়ারে ঘাটাখালী মসজিদ সংলগ্ন এলাকার বেড়িবাধ ভেঙ্গে হঠাৎ লবন পানিতে পুরো ঘাটাখালি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তাৎক্ষনিক এলাকাবাসি স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ রক্ষায় কাজ করে পানি প্রবেশের হাত থেকে রেহাই পেলেও ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে এলাকবাসি। ঘাটাখালী গ্রামের হানিফ, খাদিজা বেগম, আত্তাফ শেখ, হাফিজুর রহমান, মুদি দোকানি তৈয়ব আলীসহ অনেকেই বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে বেড়িবাঁধের গোড়ার মাটিতে ধস বেড়েই চলেছে। হঠাৎ রোববার রাতে মসজিদ সংলগ্ন বেড়িবাধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়। যার ফলে চলতি বোরো মৌসুমের পাকা ধান ক্ষতির পাশপাশি মৎস্য ঘের তলিয়ে ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যে এলাকার অনেক মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রসহ গবাদি পশু অন্যত্র সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আ. গফ্ফার ঢালী বলেন, ভাঙ্গনরোধে স্থানীয় এলাকাবাসি স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করছে। তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের আমাদী সেকশন কর্মকর্তা মশিউল আলম বলেন, ঘাটাখালী এলাকার বেড়িবাঁধ ভাঙ্গার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাঁধের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে । কয়রা সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোস্তফা নাজমুছ ছাদাত বলেন, ভাঙ্গনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হলে কয়রা সদরের দরিদ্র মানুষ বসতবাড়ীসহ ফসলি জমি হারিয়ে আরো নিঃস্ব হয়ে পড়বে। ইতিপূর্বে নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, প্রতি বছর নদীভাঙ্গন শুরু হলেই ভাঙ্গন রোধের নামে সরকারি অর্থ লুটপাটের তোড়জোড় শুরু হয়। যা শুধুই অপঁচয় মাত্র। স্থানীয়দের দাবি, নদী ভাঙ্গন রোধে টেকসই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। কয়রা উপজেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহা বলেন, কয়রার প্রধান সমস্যা বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন। ভাঙ্গন রোধে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।