রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

ধেয়ে আসছে ফণী

ফকির শহিদুল ইসলাম(খুলনা): বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ফণী ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় প্রস্তুতি হিসেবে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১টি ও জেলার ৯টি উপজেলায় ৯টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ফণী’র প্রভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রার আশপাশের নদীর পানির উচ্চতা বাড়ছে। নদীর আতঙ্ক বাড়ছে উপকূলবাসীর মনে। এভাবেই বলছিলেন খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য বেলাল হোসেন।

বৃহস্পতিবার (২ মে) তিনি অপর এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ১৪/১ ফোল্ডারে গোলখালী গ্রামে কপোতাক্ষ নদের মোহনায় ওয়াপদা বেড়িবাঁধ খুবই নড়বড়ে। ইতোমধ্যে অনেক জায়গায় নদীভাঙ্গন শুরু হয়েছে। তার ওপর আসছে ঘূর্ণিঝড়। বাড়ছে কপোতাক্ষ নদের জোয়ারের পানির চাপ। কয়রা সদর ইউনিয়নের গোবরা, হরিণখোলা ও গোবরা পূর্বচক গ্রামের বাসিন্দারা রয়েছেন আতঙ্কে। অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন ওই এলাকার মানুষ।

ইউপি সদস্য বেলাল জানান, উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে মাইকিং করা হচ্ছে। তবে কোনো মানুষ নিরাপদে আশ্রয়ে এখনও যাননি। ফণী’র আঘাত প্রথমে খুলনা উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদেরা। তাই মোংলা ও পায়রা বন্দরকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত থেকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানোর কথা বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এমন আশঙ্কায়, আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সিডর-আইলা কবলিত খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর,আশাশুনি, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা উপজেলার লাখো মানুষ। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ছোবলে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদ হানিরও আশঙ্কা করছেন এসব মানুষ। উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে আসতে মাইকিং করছেন রেড ক্রিসেন্ট এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (সিপিসি) কর্মীরা।

এছাড়া এ নিয়ে বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুক্রবার (০৩ মে) সকালে খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শুরু হতে পারে। আর শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে ‘ফণী’। ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর সমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট,  খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার দুরুল হুদা দুপুরে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বন্দরে অবস্থানরত বিদেশি জাহাজসহ নৌযানগুলোকে সতর্কতাবস্থায় থাকার নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে বন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন। ফণী’র মোকাবিলায় খুলনার ২৪২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

খুলনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানান, খুলনার তিন উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় ১২৫০, দাকোপে ১১৩৫ ও পাইকগাছায় ১ হাজার স্বেচ্ছাসেবকসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জেলার সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরীফুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি হিসেবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে খুলনা জোনের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের ফোন নান্বার ০৪১৭৬০৪৬১-০১৯৫৫৫২২৪৫৯ ।

এছাড়া ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকুলীয় সকল জেলায় ফণী মোকাবিলায় প্রস্তুতি হিসেবে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদ পারভেজ জানান, উপকূলে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ফণী’ মোকাবেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সকল ইউনিটকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেয়া আছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ভাবে আমাদের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে । খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি এবং ৯টি উপজেলায় নয়টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনকে সতর্ক করতে উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে মাইকিং করা হচ্ছে। স্বার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১১৪ টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলার জন্য জেলা প্রশাসন, খুলনা ও উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

কন্ট্রোল রুমের নম্বরগুলো হচ্ছে কন্ট্রোল রুম জেলা প্রশাসন, খুলনা: ০৪১২৮৩০০৫১, উপজেলা প্রশাসন: বটিয়াঘাটা: ০৪০২২-৫৬০৪৯, ফুলতলা: ০১৭১৬৭৭১২৮১, দাকোপ: ০৪০২৩-৫৬০৬২, ০১৯১৭১৭৩০৬৯, কয়রা: ০৪০২৬৫৬০৪৭, ০১৭০০৭১৭০০৮, ডুমুরিয়া: ০১৭৩০৯৯৬২৬৯, ০১৭১১৪৪৮৯৬১, ০৪০২৫৫৬১১, দিঘলিয়া: ০৪১-৮৯০১৭৮, ০১৭১২২৫০৪৮৭, পাইকগাছা: ০৪০২৭৫৬০০১, রূপসা: ০১৭১৯৪৫৭৮০৫, ০১৭৪৭৬০৬০৬০, তেরখাদা: ০১৭৯৪৪৯২১৫৭ ও ০১৭১৭৯১৬৭৯৮

This post has already been read 3330 times!

Check Also

পরিবেশ সুরক্ষা ও পানি সাশ্রয়ে এডব্লিউডি সেচ পদ্ধতি

ড. এম আব্দুল মোমিন: ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। আউশ, আমন  বোরো মৌসুমে আমাদের দেশে ধান …