রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

খুলনার পাটকল শ্রমিকরা ইফতারের আশায় থালা হাতে রাজপথে

ফকির শহিদুল ইসলাম(খুলনা): মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন ও বকেয়া মজুরিসহ ৯ দফা দাবিতে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৯টি পাটকলের শ্রমিকরা মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে রাজপথে থালা হাতে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। পহেলা রমজানে শ্রমিকরা খুলনার নতুন রাস্তা মোড়ে রাজপথে ইফতার পাওয়ার জন্য এ কর্মসুচি পালন করেন। বকেয়া মজুরির দাবিতে থালা নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেছেন। মঙ্গলবার (৭ মে) বিকালে খুলনা নগরীর দৌলতপুর নতুন রাস্তা মোড়ে তিন ঘণ্টার রাজপথ ও রেলপথ কর্মসূচি অবরোধ পালন করেন শ্রমিকরা।

এ কর্মসূচিতে অংশ নেন প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিল,  ক্রিসেন্ট জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, স্টার জুট মিল,  আলিম জুট মিল, ইস্টার্ন জুট মিল, খালিশপুর রাষ্টায়ত্ত্ব পাটকলের কয়েক হাজার শ্রমিক খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিক আ. হক জানান, দুটি সন্তান এস এসসি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের এক থালা ভাত খাওয়াতে পারিনাই। অথচ আজ রমজান শুরু হয়েছে। পাটকল শ্রমিকদের বাসা বাড়িতে নেই কোনো খাবার যা দিয়ে এ রমজানে রোজা পালন করবে। সেহেরীতে অনেকে পানি খেয়েই রোজা রাখে। আমরা প্রায় ১০/১২ সপ্তাহ মজুরী পাই না। নতুন রাস্তায় এসেছি যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইফতার প্রদান করান সেই জন্য।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক আব্দুল জব্বার বলেন, রোহিঙ্গারা এদেশের মানুষ না, তারাও ভালো আছে। তাদের জন্যও খাবার, পোশাক বরাদ্দ হয়। আর আমরা এদেশের মানুষ, পাটের মিলে কাজ করে এই রোজার সময়ও অভূক্ত থাকি সেহরি আর ইফতারে। আমাদের দেখার কেউ নেই।’ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল সিবিএ, নন সিবিএ শ্রমিকলীগের খুলনা যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক মুরাদ হোসেন জানান, বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে গত ২ এপ্রিল থেকে ৭২ ঘণ্টা পাটকলে ধর্মঘট করেন শ্রমিকরা। এরপর ১৫ এপ্রিল থেকে তারা ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু করেন।

১৫ এপ্রিল রাতে ঢাকায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী ও বিজেএমসি চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠকের পর তাদের আশ্বাসে শ্রমিক নেতারা কর্মসূচি স্থগিত করেন। ঐ বৈঠকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বকেয়াসহ মজুরি পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর এক সপ্তাহের সময় নিয়েও মজুরি প্রদান করা হয়নি। ফলে বাধ্য হয়েই শ্রমিকরা মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। মঙ্গলবার আবার রোজা রেখে তারা তিন ঘণ্টা অবরোধ করেছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল সিবিএ,  নন সিবিএ পরিষদের আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন বলেন, ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়েই শ্রমিকরা রাজপথে নেমে এসেছেন। তারা তো ভিক্ষা চাইছে না, নায্য পাওনা চাইছেন। দাবি না মানলে সবাই মিলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সার্বিক অবস্থা বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও অর্থ সংস্থান হয়নি। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর এ সমস্যা সমাধান হবে। তিনি জানান, খুলনার ৯টি পাটকলের শ্রমিকদের আট থেকে ১১ সপ্তাহের মজুরি ও কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের তিন থেকে চার মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। সব মিলিয়ে এ অঞ্চলের পাটকলগুলোর শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ৬৫ থেকে ৭০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।

This post has already been read 5364 times!

Check Also

ঢাকায় পলিথিন শপিং ব্যাগের বিকল্প পণ্য সামগ্রীর মেলা উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান …