রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪

চীন থেকে আমদানিকৃত কার্প মাছের পোনা দেশের ৯টি হ্যাচারীতে হস্তান্তর

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশ স্বাধীনের পর আশির দশকে প্রাকৃতিক মাছ দিয়ে দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদাপূরণ অসম্ভব হয়ে দাঁড়ালে সরকার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশীয় কার্পজাতীয় মাছের পাশাপাশি চাইনীজ কার্পকে চাষীদের মাঝে সম্প্রসারিত ও জনপ্রিয় করে তোলে। কিন্তু সঠিক ব্রিডিং প্রটোকল অনুসরণ না করায় একসময় কার্পের আন্তঃপ্রজনন-সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং এ মাছের বৃদ্ধি ও উৎপাদন দিনদিন কমতে থাকে। ফলে গত ১৩ জুন সরকার সঠিক গুণমানসম্পন্ন এই তিন প্রজাতির সাড়ে তিন সেন্টিমিটার সাইজের ৩৮ হাজার ৪৬১টি ক্রমবর্ধনশীল কার্পমাছ আমদানি করে, যার মধ্যে সিলভারকার্প ১২ হাজার ৮২০টি, বিগহেডকার্প ১২ হাজার ৮২০টি এবং গ্রাসকার্প ১২ হাজার ৮২১টি।

বুধবার (২৬ জুন) মৎস্য প্রতিমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু, এমপি, এসব পোনা আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের ৮টি বিভাগের ৯টি খামারে প্রতিপালনের জন্য হস্তান্তর করেন। মৎস্য অধিদফতরের আওতায় ‘ব্রুডব্যাংক স্থাপন প্রকল্প (৩য়পর্যায়)’ এর উদ্যোগে মৎস্য অধিদফতরের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে তিনি খামার ওর হ্যাচারির কর্মকর্তাদের কাছে এসব পোনা হস্তান্তর করেন। আমদানিকৃত পোনাগুলো সর্বোচ্চ জেনেটিক গুণসম্পন্ন বলে দাবী করা হয়। ৩ বছরের মধ্যে পোনাগুলো ব্রুডমাছে রূপান্তরিত হলে দেশের ১৪৩টি সরকারি মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারের মাধ্যমে রেণুপোনা উৎপাদন করা হবে।

এরপর দেশের ১০১৩টি বেসরকারি হ্যাচারীতে হস্তান্তর করে তাদের ব্রুড মাছে পরিণত করার পর উৎপাদিত রেণু সারাদেশের বেসরকারি পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য ছড়িয়ে দেয়া হবে। যে ৯টি সরকারি হ্যাচারীতে পোনাগুলো হস্তান্তর করা হয়, সেগুলো হচ্ছে- ঝিনাইদহের কোর্টচাঁদপুর কেন্দ্রীয় মৎস্য-হ্যাচারি কমপ্লেক্স, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর মৎস্যপ্রজনন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র, নরসিংদীর বাগহাটা মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার, দিনাজপুরের পার্বর্তীপুর মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার, নাটোরের কারবালা মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার, বরিশালের গৌরনদী মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার, মেহেরপুর সদরের মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার, ময়মনসিংহের মাসকান্দা মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার ও গাজীপুরের টঙ্গী মৎস্যবীজ উৎপাদন খামার।

উল্লেখ্য, দেশের মৎস্যের চাহিদা পূরণের স্বার্থেই সরকার সর্বপ্রথম ২০০০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাস্তাবায়নযোগ্য ৯ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকায় ‘ব্রুডব্যাংক স্থাপন (১মপর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প চালু করে। এটি ৬ বিভাগের ১২টি জেলার ১২টি সরকারি মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারে সম্প্রাসারিত করা হয়। এরপর প্রকল্প শেষে ১৩ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার টাকায় ‘ব্রুডব্যাংক স্থাপন (২য়পর্যায়) প্রকল্প চালু করে, যা ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দেশের ৭বিভাগের ১৯টি জেলার ২০টি সরকারি মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারে সম্প্রাসারিত করা হয়। সর্বশেষে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের জন্য ‘ব্রুডব্যাংক স্থাপন প্রকল্প (৩য়পর্যায়)’ চালু করা হয়, যার বরাদ্দ হচ্ছে ৬২ কোটি ২৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের কাজ বর্তমানে ৭টি বিভাগের ২৩টি জেলার ২৭টি সরকারি মৎস্যবীজ উৎপাদন খামারে চলছে।

মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু সাইদ মো. রাশেদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছুলআলম মণ্ডল, প্রকল্পের পিডি সিরাজুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

This post has already been read 4883 times!

Check Also

হাওরে ইজারা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা মিজ্ ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘আমি মনে করি, হাওরে ইজারা …