Tuesday , April 8 2025

উটপাখির পেটে দেড় কেজি লোহা ও প্লাস্টিক

পাকস্থলিতে সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে উটপাখিকে নতুন জীবন দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের চিকিৎসকগণ

মো. আরিফুল ইসলাম (বাকৃবি): কোন পাখি উড়তে পারে না? এমন প্রশ্নে আমরা সবাই উত্তর দেই উট পাখি। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও ওজন বিশিষ্ট পাখি। উটপাখি সাধারণত তৃণভোজী। তবে কোনো কোনো সময় এরা পোকামাকড় খেয়ে থাকে। তবে অপ্রাপ্তবয়স্ক উটপাখি সামনে যা পায় তাই খেয়ে থাকে। তাঁরকাটা, চা চামচ, কয়েন, টিনের চাকতি, নাট-বোল্ট, বিভিন্ন আকৃতির প্লাস্টিক ও কাঁচের টুকরো, চিপস ও চকলেটের প্যাকেট এবং পাথর ও ইটের টুকরো খাওয়ার ঘটনা অনেকটাই অস্বভাবিক। তবে প্রায় দেড় কেজি লৌহ জাতীয় পদার্থ কোনো প্রাণী খেয়ে ফেললে পাকস্থলিতে পরিপাকে বিঘ্ন ঘটে প্রাণিটির মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার কথা। আর সেটা যদি হয় অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো পাখির ক্ষেত্রে, সেক্ষেত্রে বাঁচার সম্ভাবনা হয় একেবারেই ক্ষীণ। কিন্তু পাকস্থলিতে সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে এমনই এক উটপাখিকে নতুন জীবন দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের চিকিৎসকগণ।

এমনই এক ঘটনা ঘটেছে নেত্রকোনার এক চিড়িয়াখানায় থাকা মাত্র আট মাস বয়সী দুটি উট পাখির মধ্যে। নানাবিধ লৌহ জাতীয় বস্তু খেয়ে ফেলায় পাখি দুটি সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ছিল। নেত্রকোনা থেকে বাকৃবি’র ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যায় একটি পাখি। অন্যটিকে হাসপাতালে আনা হলে পরীক্ষার মাধ্যমে পাখিটির পাকস্থলিতে অখাদ্য বস্তুর উপস্থিতি প্রমাণ পাওয়া যায়। সংকটাপন্ন পাখিটিকে বাঁচাতে ভেন্ট্রিকুলোস্টমি অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে সফলতা পেয়েছেন ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের পরিচালক এবং সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল আলম ও তার দল। বুধবার (২৬ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালে এ অস্ত্রোপাচারে সফলতা পান অস্ত্রোপাচার দল। এ দলে অন্যান্য সদস্যরা হলেন, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদুল আলম, ড. রুখসানা আমিন রুনা ও ডা. মোহাম্মদ রাগীব মুনীফ।

চিকিৎসক দল জানায়, পাখিটিকে সম্পূর্ণভাবে অজ্ঞান করে প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে ভেন্ট্রিকুলোস্টমি অপারেশনের মাধ্যমে পাকস্থলি থেকে বস্তুগুলোকে সফলভাবে অপসারণ করা হয়। অপসারিত বস্তু গুলোর মধ্যে ছিল বিভিন্ন আকারের তার কাটা (৮টি ৮ইঞ্চি কাটা ও ১ইঞ্চি কাটা ৩৩টি), ১টি চা চামচ, ১টি ১০মি.লি প্লাস্টিক সিরিঞ্জ, ১টি প্লাস্টিক পেনিয়াম, ২টাকা ও ৫টাকার কয়েন, ১২টি টিনের চাকতি, ৫টি ৪ ইঞ্চি স্ক্রু, বিভিন্ন আকৃতির প্লাস্টিক ও কাঁচের টুকরো, চিপস-চকলেটের প্যাকেটের খন্ড এবং পাথর ও ইটের ছোট ছোট টুকরো যেগুলোর সামগ্রিক ওজন প্রায় ১.৫কেজি। অস্ত্রপচার পরবর্তী পাখিটিকে ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে। পাখিটি সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে। আজ পাখিটিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল আলম বলেন, আমরা পাখিটির ব্যাপারে শঙ্কিত ছিলাম। তবে অপারেশনের পর পাখিটিকে ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে। বর্তমানে পাখিটি সুস্থ আছে। খুব শীঘ্রই তাকে রিলিজ করা হবে।

This post has already been read 4160 times!

Check Also

ক্ষমতা নিতে নয় বরং দায়িত্ব পালন করতে এসেছি- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

গাজীপুর সংবাদদাতা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, “আমরা যার উপদেষ্টা আছি তারা শুধু …