মো. আরিফুল ইসলাম (বাকৃবি): দেশে প্রচুর পরিমাণে সিলভার কার্প মাছ চাষ হলেও এ মাছটিতে কাঁটা বেশি থাকায় অনেকেই এ মাছ খেতে চান না। বিশেষ করে শিশু, কিশোর-কিশোরী ও চাকুরিজীবী ব্যস্ত পরিবারের মানুষেরা কাঁটাযুক্ত মাছ পছন্দ করেন না। ফলে সিলভার কার্প মাছ উৎপাদনকারী চাষী প্রায়ই উৎপাদিত মাছের সঠিক দাম প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। যদি এই কাঁটাযুক্ত মাছকে কাটামুক্ত করে উন্নত দেশের মত “রেডি টু ইট’ বা “মোড়ক খুলে সরাসরি খাওয়ার উপযুক্ত” (স্বল্প আয়াশে) এমন কোন জনপ্রিয় খাবার এর সাথে ভোক্তার কাছে সহজলভ্য করা যায় তাহলে ভোক্তার যেমন প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করা যাবে একই সাথে এ মাছে মূল্যসংযোজনের ফলে মৎস্যচাষিরাও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। খামারিদের ক্ষতির হাত খেতে রক্ষা করতে ও সব বয়সি মানুষের কাছে আমিষ পৌঁছে দিতে সিলভার কার্পের নুডুলস তৈরি করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখা।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) দুপুর ১২ টার দিকে বিভাগীয় সম্মেলন কক্ষে উদ্ভাবিত নুডুলসের প্যানেল টেস্ট অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অর্থায়নে বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত দুই বছরের প্রকল্পটিতে গবেষণায় সহযোগী ছিলেন একই বিভাগের সহযোগী গবেষক অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থী লাবিবা ফারজানা পল্লবী এবং শামছুননাহার সীমা।
প্রধান গবেষক ড. ফাতেমা হক শিখা বলেন, প্রাণিজ আমিষের মধ্যে মাছের আমিষ খুবই স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো অনেকেই মাছ কাটা, ধোয়া, প্রস্তুতির ঝামেলাটুকু নিতে চান না। অন্যদিকে অনেকের পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যরা মাছ খেলেও শিশু সদস্যরা সরাসরি মাছ খেতে চায় না। এসব বিষয়গুলোকে বিবেচনায় রেখেই কাঁটাযুক্ত সিলভার কার্প মাছের কাঁটা সরিয়ে দিয়ে শুধু মাছের কিমা বিভিন্ন পরিমানে ময়দা ও অন্যান্য উপকরণের সাথে মিশিয়ে “ফিশ নুডুলস” তৈরি করার এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। মাছটিকে কাঁটামুক্ত ও স্বাদ অক্ষুন্ন রেখে বিকল্প উপায়ে ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর জন্যই নুডুলসটি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
নুডুলস উৎপাদন প্রণালী সম্পর্কে প্রধান গবেষক বলেন, সিলভার কার্পের নুডুলস তৈরির জন্য প্রথমে মাছ থেকে ফ্লেশ সংগ্রহ করে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফ্লেশ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি ও চর্বি বের করে নিয়ে কিমা তেরি করা হয়েছে। মাছের কিমা সহযোগে তৈরিকৃত ফিশ নুডুলস ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সাধারণভাবে বায়ুশূন্য মোড়কে ছয় মাসেরও অধিককাল সময় এর জন্য সংরক্ষণ করে ওই ফিশ নুডুলসের রঙ, গন্ধ, স্বাদ এর পরিবর্তন, মচমচে অবস্থার পরিবর্তনসহ অন্যান্য পরীক্ষা ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সের ভোক্তাদেরকেও সিলভার কার্প এর কিমা দিয়ে তৈরিকৃত ফিশ নুডুলস খাওয়ানো হয়েছে।
মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডীন, অনুষদের চার বিভাগীয় প্রধান, সাংবাদিকসহ অন্যান্য শ্রেণী পেশার মানুষদেরকে থেকে স্বাদ ও মান সম্পর্কে মতামত নেয়া হয়েছে। বয়স, পেশা নির্বিশেষে প্রায় সবাই ফিশ নুডুলস সাধারণ নুডুলস এর তুলনায় বেশ সুস্বাদু বলে অভিমত দিয়েছেন। নুডুলসয়ের গুণগত মান সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতি ১০০ গ্রাম নুডুলসে আমিষের পরিমাণ ২৩ দশমিক ৮০ শতাংশ, লিপিডের পরিমাণ ৮ দশমিক ৬ শতাংশ, শকর্রার পরিমাণ ৫৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, অ্যাঁশ ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং পানির পরিমাণ ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। এছাড়াও ১০০ গ্রাম নুডুলস থেকে মোট ৩৯৪ দশমিক ৭৬ ক্যালরি পরিমাণ শক্তি পাওয়া যাবে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে নুডুলসটি প্রায় এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব।
নুডুলসটিকে বাজারজাত করার বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন নুডুলস বাজারজাতকরণ কোম্পানি আমার সঙ্গে কথা বলেছে। নুডুলসটি শিগগরই বাজারে আনার জন্য চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের খাদ্য দ্রব্য কোন প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করতে চায় তবে ফিশ নুডুলসে এ রং ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোনক্রমেই খাবার রং ছাড়া অন্য কোন কেমিক্যাল রং ব্যবহার করা যাবে না।