মো. এনামুল হক: মিসেস আলেয়া বেগম একজন সফল লেয়ার পোল্ট্রি খামারী। আত্মপ্রত্যয়ী, কঠোর পরিশ্রমী এই মানুষটি ধীরে ধীরে একটি পোল্ট্রি খামার গড়ে তুলেছেন। নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানার বাহিমালী গ্রামে ৫ বিঘা জায়গার উপরে ২০১৫ সালে গড়ে উঠে ফার্মটি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লাইসেন্স প্রাপ্ত, পরিবেশ অধিদপ্তরের সার্টিফিকেট প্রাপ্ত, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের অনাপত্তি পত্রপ্রাপ্ত, গ্রাম্য ট্যাক্স প্রদানকারী এই ফার্মটি সর্বাধুনিক এবং অনেক মানুষের অনুপ্রেরণাদায়ক ফার্ম।
মূলত ব্র্যাক ব্যাংকের এসএমই এর অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এই ফার্ম। বর্তমানে ৪টি লেয়ার সেডের প্রতিটিতে ৩ হাজার করে প্রতিপালিত হচ্ছে ১২হাজার মুরগী। ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা আলেয়া বেগম এর সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের সাথে।
তিনি জানান, এই খামার সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যঝুঁকি মুক্ত। এই খামারে ক্ষতিকর কোন পণ্য ব্যবহার করা হয় না। পরিবেশবান্ধব এই খামার বিশেষজ্ঞ ডিভিএম, ফার্মাসিস্ট ও প্রশিক্ষিত কর্মীর মাধ্যমে খামারটি পরিচালনা করা হয়। তিনি বলেন,খুব ভালো লাগে যখন আমার ফার্মটি মাঝে মাঝে উপজেলা থেকে ইউএনও, পরিবেশ অধিদপ্তের ডিডি, ইউএলও, সাহেবরা সবাই পরিদর্শনে আসে। আলেয়া বেগমের লেয়ার খামার ছাড়াও আছে ৪৫০০টি বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন সোনালী পোল্ট্রি খামার। খামার থেকে প্রাপ্ত বর্জ্য দিয়ে নিজস্ব বায়োগ্যাস প্লান্টও আছে। নিজেদের ব্যবহারিক চাহিদা পূরুণের পাশাপাশি প্রতিবেশীদের মাঝে বিনামূল্যে বায়োগ্যাস বিতরণ করা হয় বলে এই প্রতিবেদককে জানান আলেয়া বেগমের ছোট ছেলে ফার্মাসিস্ট এনামুল হক। তাছাড়া নিজস্ব জেনারেটরের ব্যবস্থাও রয়েছে খামারে। খামার এবং নিজেদের বাসা বাড়ির কাজ মিটিয়ে প্রতিবেশিদেরকেও সংযোগ দেয়া হয়েছে।
শুরুর কথা মিসেস আলেয়া বেগম স্মৃতি হাতড়িয়ে বলেন, অনেক আগের কথা। এই গ্রামেই তার বাবার ও শ্বশুরবাড়ী। কিন্তু জীবনের বেশীর ভাগ সময় শহরে থেকেছেন। স্বামীর সাথে দেশ ও বিদেশ ঘুরেছেন। ১৯৯৬ সালে হজ্জ্ব সম্পন্ন করেছেন স্বামীর সাথে। স্বামী-সন্তান নিয়ে ঢাকা শহরে বসবাস করতেন তিনি। ছেলেদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে প্রতিষ্ঠিত করেছেন স্ব-স্ব ক্ষেত্রে। ঢাকায় নিজেদের বাড়ী, গাড়ী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে। যা উনার উচ্চ শিক্ষিত দুই ছেলে মিলে দেখাশোনা করেন। হঠাৎ তিনি থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হন। মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে লড়াই করার প্রস্তুতি নেন। তিনি গ্রাম ভালোবাসেন। গ্রাম থেকেই বড় হয়েছেন। গ্রামের জীবনকে উনি বেছে নিলেন। পারিবারিক ও ব্যবসায়িক আনুষ্ঠানিকতায় পরিবারের সকলে মিলে একসাথে আনন্দে মেতে উঠেন।
তিনি দেখেন, শহরে বা গ্রামে যেখানে সেখানে যত্রতত্র খামার গড়ে উঠছে। সঠিকভাবে নিয়ম মেনে কেউই পোল্ট্রি পালন করছেন না। পোল্ট্রি পালন একটি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত শিল্প। অথচ সবাই যার যার মত করে পোল্ট্রি পালন করছে। বিষয়টি তার কাছে ভাল ঠেকেনি। তিনি শহুরে জীবন থেকে বেরিয়ে এসে গ্রামীণ জীবন বেছে নিলেন। স্বামী-সন্তানের অনুপ্রেরণায় শান্ত, স্নিগ্ধ সুশীতল মনোরম পরিবেশে পোল্ট্রি পালনের সব নিয়ম মেনে গড়ে তুললেন “আলেয়া ফার্মহাউজ”। উদ্দ্যেশ্য আর কিছু নয়, নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে প্রতিবেশিসহ গ্রামীণ জনগোষ্ঠিকে মানসম্মত, ঝুঁকিমুক্ত, ক্ষতিকর নয় এমন ডিম ও মাংস খাওয়ানো। নিজে ও পরিবার স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও দেশের উন্নয়নে শরীক হওয়া। এজন্য আলেয়া বেগম গর্ব বোধ করেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গত দু’বছর ডিমের দাম খুবই হতাশাজনক ছিল।
একসময় মনে হয়েছিল স্বপ্নের খামারটি মনে হয় বন্ধই করে দিতে হবে। সরকারের কাছে আলেয়া বেগমের দাবি, প্রত্যেক পোল্ট্রি ফার্ম বীমার আওতায় আনা হোক, কৃষির মত খামারীদেরকেও স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হোক। পোল্ট্রি আজ আর ছোট কোন বিষয় নয়। সুস্থ জাতী গঠনে পোল্ট্রির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। সস্তায় মাছ মাংস ও ডিম একমাত্র পোল্ট্রি শিল্পই দিতে পারে। সরকারের এদিকে বিশেষ নজর দেওয়া আবশ্যক। আলেয়া বেগমের পরিবারটি সুশিক্ষিত পরিবার। স্বামী মো. আবুল কালাম আজাদ এক সফল ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর অনেক সহযোগিতা পেয়েছেন। এলাকায় যথেষ্ট প্রতিপত্তি রয়েছে পরিবারটির। বিপদে আপদে মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্য যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা আছে। আলেয়া বেগমের কনিষ্ঠ পুত্র ফার্মাসিস্ট মো. এনামুল হক ঢাকার একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বর্তমানে তিনি পিএইচডি অধ্যায়নরত। বড় ছেলে উচ্চ শিক্ষিত ও ব্যবসায়ী।
মিসেস আলেয়া বেগম প্রাণিসম্পদ শিল্প সংশ্লিষ্টসহ সকলের কাছে দোয়াপ্রার্থী।
এছাড়াও আলেয়া ফার্ম হাউজ এর মাধ্যমে তৈরী ও সংগৃহীত নাটোরের খেজুরের গুর প্রস্তুত করে ঢাকাসহ সারাদেশে “রুট খেজুর গুর” নামে গত ৩ বছর যাবত বাজারজাত করে আসছে।এই ফার্মটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আছে গ্রামের পন্য শহরের মানুষের খাবার টেবিলে সর্বোচ্চ মান ঠিক রেখে বেশী সংখ্যক বাড়ীতে সরবরাহ করানো।